মুফতি রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী।।
এইতো কয়েকদিন পরেই আসছে ১৪৪২ হিজরী দাওরা হাদীসের সমাপনী পরীক্ষা। "আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ" -এর তত্ত্বাবধানে দেশের বৃহত্তম ৬ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা হলো দরসে নেজামীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই সনদ মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি লাভ করায় এ পরীক্ষার গুরুত্ব আরো বেড়েছে। তাই এ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বর্তমানে অনেক চাপে থাকতে হয়।
যদিও তারা মেশকাত জামাত পর্যন্ত অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে, তবু দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষাটা বর্তমানে বেশি আলোচিত। সবার মধ্যেই এ পরীক্ষা নিয়ে একটা আগ্রহ জমেছে। যখন হাইযআতুল উলয়ার ফলাফল প্রকাশ হয়, সেদিন অনেক পত্রিকার শিরোনাম হয় দাওরা হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। ফেসবুকে হয় জমজমাট পর্যালোচনা। একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ থাকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত মাদ্রাসাগুলোতে।
আর মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের তো আনন্দের অন্ত নেই। এই তো আর মাত্র কয়টা দিন, সব কিছু ভুলে ভালোমত পড়ালেখা করো। এটা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। এ পরীক্ষাটা খুব ভালো করে দাও তোমরা। তোমার নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এর জন্য, মাদ্রাসার সুনাম এর জন্য এবং পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলাকে রাজি করার জন্য। আমাদের পড়ালেখা আল্লাহর জন্য, সবকিছু আল্লাহর জন্য। পরীক্ষা হল সত্যিকার পড়ালেখা প্রমাণ করার মাধ্যম। প্রতিযোগিতামূলক পড়ালেখার অন্যতম পদ্ধতি।
ভুলে যেয়ো না:- আমাদের আসল পরীক্ষা হল পরকালের পরীক্ষা। মহান প্রভু কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন,
"যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে ভাল আমল করে। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
( সুরা মূলক-২) পরকালের পরীক্ষায় যে যত ভালো ফলাফল অর্জন করবে, সে তেমন মহাপুরস্কার লাভ করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"যারা ভালো করেছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম বিনিময়। আরো অতিরিক্ত। (সূরা ইউনুস-২৬) পরকালের পরীক্ষায় যে অকৃতকার্য হবে তার হতাশা ও অশান্তির শেষ নেই। ওই পরীক্ষা দ্বিতীয়বার পুনরায় দেওয়ারও কোন সুযোগ নেই।
সাবধান! আল্লাহ তা'আলাকে তোমরা ভুলে যেওনা। ভুলে যেওনা পরকালকে। পরীক্ষার প্রস্তুতি যত কঠিন হোক না কেন, নামাজ, দু'আ ও সুন্নতী আমলে যেন কোনো অবহেলা না হয়। সময়মতো নামাজ আদায় করা চাই। ইবাদত করা চাই মনোযোগ দিয়ে, সাহায্য চাও আল্লাহ তা'আলার কাছে। তিনিই সবকিছুর মালিক।
ভয় নেই:-
সুদৃঢ় ও মনোবল নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। পরীক্ষা কক্ষেও পুরো মনোবল নিয়ে পরীক্ষা সম্পাদন করতে হবে। নিজের সাহস আর মনোবল হবে সফলতার প্রথম চাবি।
মনে রাখবে, পরীক্ষা ভয়ের কিছু নয়; পরীক্ষা জীবনের উন্নতির সোপান, যা ভালোভাবে অতিক্রম করার মাধ্যমেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই ভয় না পেয়ে জয় করব মাস্টার্স সনদটাকে। মন ভালো রেখে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে পরীক্ষা দাও। ফল ভালো হবেই ইনশাআল্লাহ!
শরীর ঠিক তো তুমি ফিট:-
সময়ের কাজ সময়ে করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। জীবনের পহেলা সবক "আজকা কাম কাল পর নাহ ঢাল"। তাই পড়াশোনার রুটিনটায় সারা বছরই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। এখন পরীক্ষার আগে খাওয়া-দাওয়া ও ইবাদত- বন্দেগী ভুলে পড়াশোনা দরকার নেই। রাত-দিন এর সময়সূচী অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। তবে বিশ্রামের জন্য সময় রাখবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। তুমি যদি এখন বেশি বেশি রাত জেগে পড়ালেখা করো, তাহলে পরীক্ষার রাতে বা আগের দিন ঠিকমতো রিভিশন দিতে পারবে তো.? অহেতুক দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে। পড়া, খাওয়া-ঘুম এবাদত-বন্দেগী সবই করতে হবে। তবে অবশ্যই নিয়মমতো, নেজাম মতো। মনে রাখবে, শরীর ঠিক থাকলেই তুমি ফিট।
পরীক্ষার আগের দিন করণীয়:-
পরীক্ষার আগের দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটা আসার আগেই তুমি পেয়ে যাবে প্রবেশপত্র ও রেজিস্টেশন কার্ড। এগুলোর কয়েকটি ফটোকপি করে রাখবে। পরীক্ষার দিন কী কী নিয়ে যেতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলো গুছিয়ে নেবে। যেমন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড এর মূলকপি, তিন-চারটি কলম, লম্বা স্কেল, ঘড়ি ইত্যাদি একটি স্বচ্ছ ফাইলে ভরে রাখবে। এমন কলম নেবে, যেগুলো দিয়ে দ্রুত লেখা যায়। তোমার জানা মতো কয়েকটি ভালো কলম আগে থেকেই কিনে নেবে। এগুলো দ্বারা কয়েক পৃষ্ঠা করে লিখে কলমগুলো তোমার সুবিধামতো চালু করে নেবে।
পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আগে থেকে কিনে রাখবে। প্রথম দিন যে বিষয়ে পরীক্ষা হবে তা আগের দিন ও রাতে যথাসাধ্য রিভিশনের চেষ্টা করবে। তবে পরীক্ষাকালীন সময় অতিমাত্রায় রাত জাগবে না। কোন কিছুই পরিমাপের বেশি খাবে না। পেটে সমস্যা হয়, এমন খাবার অবশ্যই পরিহার করবে।
ভালো নম্বর পাওয়ার সহজ অনুশীলন:-
ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য মূল কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। প্রচলিত গাইড বইয়েরও সহযোগিতা নিতে হবে। তবে এর উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। আর লেখাপড়া ও উপস্থাপনা সুন্দর হওয়া তো আকর্ষণীয় উত্তরপত্রের জন্য একান্ত জরুরী বিষয় আছেই।
এক. মূল কিতাব আগে আয়ত্ত করতে হবে:-
মূল কিতাব যথাযথভাবে আয়ত্ত করা, অনুবাদ জানা, শাব্দিক বিশ্লেষণ ও হাদীসের ব্যাখ্যা অনুশীলন করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় পাসের হার জন্য নয়, জীবনের প্রয়োজনে মূল কিতাবে বদখল থাকা আবশ্যক। মূল কিতাবে পূর্ণ জ্ঞান ছাড়া জীবনে কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারবে না। তবে মূল কিতাব সহজে আয়ত্ত জন্য কিছু কলাকৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
মূল কিতাব আয়ত্ত করাকে একটি কঠিন বা দুর্বোধ্য বিষয় মনে করা হয়। একটি অজানা আশঙ্কায় দিন -রাত অতিবাহিত করতে হয়। নিজের প্রতি আস্থার জায়গায় চিড় ধরে। কিন্তু আমি তোমাদের বলব, কোনভাবেই আশাহত হবেনা। বরং স্বীয় লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। এক মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে মনের গহীনে প্রবেশ করে নিজেকে প্রশ্ন করো: মূল কিতাব কে ভয় না পেয়ে জয় করার জন্য ভালবেসে কতটা সময় দিয়েছো?
শুধু পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কিতাব পড়ো, নাকি রাসূলের (সা.) হাদীস জানার জন্য বুঝে পড়ো? মূল কিতাব আয়ত্ত করার জন্য কী কী উপায়- উপকরণ অবলম্বন করেছো? উপরের প্রশ্নগুলোর ছাড়াও অনেক প্রশ্ন হতে পারে। কোন প্রশ্নের উত্তর- না বোধক হলে বুঝতে হবে, হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির যেমন বিকল্প নেই, তেমনি কোনো বিষয়ে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য স্থির মনোবল, বিষয়টির প্রতি ভালোবাসা- আগ্রহ ও কঠোর অনুশীলনের বিকল্প আজও সৃষ্টি হয়নি।
হাইআতুল উলয়ার বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে সব বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এত দিনে তোমরা পাঠ্যবইয়ের সব অংশ শেষ করেছো নিশ্চয়ই। কোন কিতাবের কোন বিষয় বাকী থাকলে তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করে নাও। জেনে রেখো, কোন বিষয়ে পরীক্ষা খারাপ হলে মোটের উপর ফলাফল ভালো হয় না। প্রতিটি বিষয়ে ভালো হলেই সামগ্রিক ফল ভালো হয়। তাই সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই সময় এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করো।
হাদীসের কোন একটি কিতাব শুরু-শেষ ভালোভাবে পড়ে নিলে সব বিষয়ে সম্যক ধারণা হবে। এক্ষেত্রে সুনানে তিরমিযী পরিপূর্ণ একটা রিভিশন দেওয়া দরকার। এছাড়া কিতাবুল ঈমান 'সহীহ বুখারী'ও 'সহীহ মুসলীম' থেকে, কিতাবুল ইলম, ওহী ও মাগাজী 'সহীহ বুখারী' থেকে, কিতাবুল উজহিয়্যা, জাবাইহ ও জিহাদ 'আবু দাউদ' থেকে, আল ইতেসাম বিল কিতাব ওয়াসসুন্নাহ্ 'ইবনে মাজাহ' থেকে, এবং কিতাবুল বুয়ূ ও কিসাস, হুদুদ, শাহাদত 'সহীহ মুসলিম' দ্বিতীয় খন্ড থেকে, ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
আর শামায়েলে তিরমিযী, কালা আবু দাউদ এবং মুকাদ্দামায়ে মুসলিম মূল কাতাব ও ব্যখ্যা গ্রন্থের মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝে পরিপূর্ণ অনুশীলন করতে হবে। শরহে মা'আনিল আসার, ইবনে মমাজাহ্, এবং মুয়াত্তাইনের লেখক ও কিতাব পরিচিতি আংশিকভাবে এবং প্রতিটি কিতাবের অন্তত শুরু অংশ থেকে খুব ভালোভাবে পড়া আবশ্যক।
দুই. পরীক্ষা সহায়িকা ও মূল কিতাবের সমন্বয় জরুরি:-
সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য মূল কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ত করার বিকল্প নেই। হাইআতুল উলয়ার বর্তমান প্রশ্নের ধরন অনেকটাই সৃজনশীল। প্রতিটি প্রশ্নেই হরকত লাগানো, অনুবাদ করা ও শাব্দিক বিশ্লেষণ এবং হাদীসের মর্ম বর্ণনা করার কথা থাকে। এসব বিষয়ে পাশ নাম্বার বা এর কাছাকাছি নম্বর থাকে। এছাড়া হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও যথাযথ সমাধানের জন্য মূল কিতাব এর শরণাপন্ন হতে হয়। তবে প্রশ্ন-উত্তরের ধরন বোঝার জন্য পরীক্ষা সহায়িকা গ্রন্থের সহযোগিতাও জরুরি। এছাড়া খুঁটিনাটি প্রশ্ন পরীক্ষা সহায়িকা থেকে যেভাবে সহজে অনুধাবন করা যায়, মূল কিতাব থেকে তা বাহির করা অনেক জটিল। অতএব সর্বোচ্চ নাম্বারের জন্য মূল কিতাব ও পরীক্ষা সহায়িকা পরস্পর সম্পূরক। তবে দুর্বল ছাত্ররা যদি শুধু গাইডে নির্ভর হয়, তাদের জন্য হাদীসের অনুবাদ ও হরকত লাগানোর নীতিমালা ভালোভাবে বুঝে পড়া প্রয়োজন।
তিন. লেখা ও উপস্থাপনা চমৎকার হতে হবে:- হাতের লেখা শিক্ষিত মানুষের অলংকার। উত্তরপত্র আরবী ভাষায় লেখা এবং সুন্দর লেখা ও সাবলীল উপস্থাপনার জন্য প্রতিটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য নম্বর বরাদ্দ আছে। পরীক্ষকের প্রথম দৃষ্টি লেখার প্রতি হয়। এ সুবাদে গবেষকরা অনেক কথাই বলেছেন। কেউ বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হলে পরীক্ষায় সহজেই কৃতকার্য হওয়া যায়। কেউ বা বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হলে অনেক নম্বর পাওয়া যায়। এর কোনটাই অস্বীকার করার মতো না।
পরীক্ষা এবং হাতের লেখা বিষয়ে একটা সরল হিসাব আছে। দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়। প্রতিটি বিষয়ে হাতের লেখা ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনের জন্য তিন তিনটি নম্বর। ১০টি বিষয়ে ৩০টি নাম্বার। হাতের লেখা ভালো নয় পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগেই তার ৩০টি নম্বর বিয়োগ হয়ে গেল। যেখানে তিন চার নম্বরের ব্যবধানে ক্রমিক নম্বরের অনেক ব্যবধান হয়। সেখানে ৩০ এর ব্যবধানে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। তাই পরীক্ষায় মর্যাদার আসন পেতে হলে হাতের লেখা ভালো ও সুন্দর করতেই হবে।
উত্তরপত্র সুন্দর হওয়ার জন্য করণীয়: কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করলে আশা করি সবার লেখাই সুন্দর দেখাবে। উত্তর পত্র আকর্ষণীয় হবে। স্বপ্নের ফলাফল পেয়ে জীবন আনন্দে হেসে উঠবে।
সে বিষয়গুলো হলো--
১. লেখার লাইন সোজা হতে হবে। লেখার লাইন আঁকাবাঁকা অথবা কোনো এক দিকে ঝুঁকে যাওয়া, তো হবে না।
১. লেখার লাইন বেশি ফাঁকা ফাঁকা অথবা খুব সরু হলে সুন্দর্য নষ্ট হয়। তাই স্বাভাবিক পরিমাণ ফাঁকা বুঝে লেখা সাজাতে হবে।
৩. লেখা যেন বেশি ছোট না হয়, অক্ষর যেন ছোট-বড় না হয়, অক্ষর একটি দেখতে যেন আরেকটির মত না হয়, সব অক্ষর যেন স্পষ্ট হয় এবং অক্ষর থেকে অক্ষর ও শব্দ থেকে শব্দের দূরত্ব যেন স্বাভাবিক পরিমাণ মত হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। এসব গুণ সুন্দর লেখার অন্যতম শর্ত। লেখা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি দেখতে একই রকম হয়, একই নিয়মে সাজাতে হয়, তাহলে সে লেখা সহজে নজর কাড়ে। পরীক্ষক দেখে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। আর লেখক পায় প্রাণ উৎসারিত ধন্যবাদ!
৪. আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় উত্তরপত্র লিখলে উত্তরের ধারাবাহিক নম্বরগুলো আরবী ভাষায় লেখা আমি ভালো মনে করি। যেমন-
الجواب عن السوال الأول তবে যে ভাষায়ই লেখো ডানে-বামে না লিখে মেডেলে তুলনামূলক বড় করে লিখবে। আর প্রশ্নের অংশগুলোও আরবীতে লিখেলে সহজেই চোখে পড়বে, ভালো দেখাবে। যেমন- ا-ب-ج ইত্যাদি। তবে প্রশ্নের এসব অংশ আরবী, উর্দু উত্তরপত্রের ডান পাশে এবং বাংলা উত্তরপত্রের বাঁ পাশে হলেই ভালো।
৫. প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় এবং শিরোনাম, উপশিরোনাম অবশ্যই প্যারা দিয়ে লিখতে হবে। লম্বা কোন বিষয়ে হলে এর বিভিন্ন অংশ ছোট ছোট শিরোনামে ভাগ করা যায়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আমার লেখা "আরবী কি লিখব কিভাবে লিখব" বইটি পড়তে পারো। জীবনের সাথী হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারো।
৬. উপস্থাপনা সুন্দর ও গতিশীল হওয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথবা বিগত বছরের কোন প্রশ্নত্তর মুখস্থ করে কিছুক্ষণ নীরবে চিন্তা করো কেমন আয়ত্ত হয়েছে। অতঃপর তা মুখস্ত লেখো। মনে কর তুমি পরীক্ষার হলে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। এরপর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখো কি অবস্থা? প্রয়োজনে নম্বর বরাদ্দ করো। এভাবে অনুশীলন করলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন হবেই ইনশাআল্লাহ!
৩০মিনিট আগে পরীক্ষার হলে বসতে হবে:- প্রতিদিনের মতোই পরীক্ষার দিন ঘুম থেকে উঠবে। কোনরকম চাপ বা দুশ্চিন্তা যেন তোমার কাছে ঘেঁষতে না পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। কিছু সময় কোরআনে কারীম তেলাওয়াত করার চেষ্টা করবে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেই দিন সেই বিষয়বস্তু একটু উল্টেপাল্টে দেখে নেবে। স্বাভাবিক থাকবে। খুব বেশি সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। আধাঘন্টা আগে তোমাকে পরীক্ষা কক্ষে বসা প্রয়োজন। তাই হাতে সময় নিয়ে বের হবে।
পরীক্ষার আসনে বসে:- পরীক্ষার আসনে বসেই কিছুক্ষণ দো'আ দরুদ পড়ে নেবে। খাতা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে সম্ভাব্য বিষয়গুলো মনে মনে রিভিশন দেবে। এই সময়ে রিভিশন দেয়া কোন বিষয় পরীক্ষায় আসলে দ্রুত ও নির্ভুল ভাবে লেখা সহজ হবে। উত্তরপত্র হাতে পেয়ে এতে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি যা লেখার চক থাকবে তা পূরণ করে নেবে। নির্দিষ্ট ঘরে এসব বিষয় লিখতে হবে। লেখার পর পুণরায় অবশ্যই মিলিয়ে নেবে। খেয়াল রাখবে, সব বিবরণ নির্ভুল হতে হবে।
এসব কালো কালির কলম দিয়ে লিখতে হবে। সবকটি প্রশ্ন পড়ে কোনটির উত্তর তুমি দিতে পারবে, তা পেন্সিল দিয়ে শনাক্ত করে নিতে পারো। তোমার কাছে যেটা সহজ মনে হয়, সে প্রশ্নের উত্তর আগে দেবে। প্রশ্ন ভালো করে পড়ে বুঝে নিতে হবে। ঘড়ি দেখবে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখবে। কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি সময় খুব বেশি চলে যায় তবে পরবর্তী এক বা একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এ জন্য কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে কি পরিমাণ সময় লাগবে তা ভেবে নিও। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
রিভিশন কমাবে ভুল:- সময়ের প্রতি সচেতন থেকে ১০-১৫ মিনিট আগেই উত্তর শেষ করার চেষ্টা করবে। কারণ রিভিশন দিতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমবে। জানা ছিল না এমন কিছু রিভিশনের সময় স্মরণ হতে পারে। তখন তা লিখে দিবে।
উল্লেখ্য যে সব প্রশ্নের উত্তরে যথাসাধ্য কিছু লেখার চেষ্টা করিও। এতে কিছু নাম্বার আশা করা যায়। আর কোন প্রশ্নের উত্তর যদি অসম্পূর্ণ থাকে তাহলে ভালো ফলাফলের মোটেই আশা করা যায় না। তাই সময়ের হিসাব করে যথা সময়ে সব প্রশ্নোত্তর অবশ্যই সম্পাদনা করতে হবে।
পরীক্ষা শেষ হলে:- প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে কে কয়টা সঠিক সঠিক উত্তর দিতে পেরেছো, কয়টা পারোনি এসব নিয়ে একদমই আলোচনার দরকার নেই। এসব মেলাতে গিয়ে যদি দেখো তোমার কিছু ভুল হয়েছে, তাতে তোমার মন খারাপ হবে, যা পরবর্তী পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে। হল থেকে বের হয়ে সোজা রুমে এসে হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নেবে। পরের পরীক্ষার বিষয়ে মনোযোগী হবে।
মনে রেখো:- পরীক্ষা শেষে প্রবেশপত্র এবং যেসব জিনিস পরিক্ষার হলে নিয়েছো, সব খেয়াল করে অবশ্যই নিয়ে আসবে। শুভকামনা তোমার জন্য। তোমার অনাগত ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হোক। হেসে উঠুক আনন্দের ঝলমলে প্রভাত।
লেখক: কলামিষ্ট, গবেষক, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
-এটি