মাওলানা মামুনুল হক।।
কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় যদি সন্তানদের মধ্যে তার সমুদয় কিংবা আংশিক সম্পদ বন্টন করে দিতে চায় তাহলে প্রথমে তার নিম্নোক্ত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করি-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ : تَصَدَّقَ عَلَيَّ أَبِي بِبَعْضِ مَالِهِ ، فَقَالَتْ أُمِّي عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ : لَا أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَانْطَلَقَ أَبِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُشْهِدَهُ عَلَى صَدَقَتِي ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَفَعَلْتَ هَذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ؟ قَالَ : لَا ، قَالَ : (اتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا فِي أَوْلَادِكُمْ) فَرَجَعَ أَبِي فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ .
ولمسلم (1623) : (فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَا بَشِيرُ ، أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا؟ قَالَ : نَعَمْ ، فَقَالَ : أَكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هَذَا؟ قَالَ : لَا ، قَالَ : (فَلَا تُشْهِدْنِي إِذًا ، فَإِنِّي لَا أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ) .
হযরত নুমান বিন বাশির রা. বলেন আমার পিতা আমাকে তার কিছু সম্পদ দান করলেন, তখন আমার মা বললেন আমি এতে ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমার সন্তানকে দেয়া সম্পদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী না রাখবেন৷
ফলে আমার বাবা রসূলুল্লাহর নিকট গেলেন যাতে আমাকে দেয়া দানের উপর রাসূলুল্লাহকে সাক্ষী বানাতে পারেন৷
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানের সাথে এরূপ করেছ? তিনি বললেন, না৷ তখন নবীজি বললেন তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করো ৷ তখন আমার বাবা ফিরে এলেন এবং সেই দানটি তিনি প্রত্যাহার করলেন৷ অন্য আরেক বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন তোমার কি এছাড়াও আরো সন্তান রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ৷ নবীজী বললেন তাহলে কি তাদের সবার জন্য কি অনুরূপ অনুদান দিয়েছ? তিনি বললেন, না৷ তখন আল্লাহর নবী বললেন তাহলে এ বিষয়ে তুমি আমাকে সাক্ষী বানিও না ৷ কেননা আমি কোন অন্যায়ের উপর সাক্ষ্য হতে রাজি নই৷ বুখারী, মুসলিম
উক্ত হাদীসের আলোকে জীবদ্দশায় সম্পদ বন্টন করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জেনে রাখা এবং তদনুযায়ী আমল করা সমীচীন হবে-
এক. বন্টনের উদ্দেশ্য- বন্টনের উদ্দেশ্য দু রকম হতে পারে
১. সৎ উদ্দেশ্য
২. অসৎ উদ্দেশ্য
সৎ উদ্দেশ্য হলো নিজের সম্পদ থেকে নিজের আপনজনদেরকে উপকৃত করা৷ তারা যেন সম্পদ ভোগ করে উপকৃত হতে পারে, সেই চিন্তা করা৷
অসৎ উদ্দেশ্য, যেমন পক্ষপাতিত্ব করা অথবা নিজের সম্পদ থেকে আল্লাহ প্রদত্ত মীরাসের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা৷ যেমন কোন ব্যক্তির শুধু কণ্যা সন্তান রয়েছে আর স্ত্রী রয়েছে৷ এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী এবং তার সন্তান সমুদয় সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেনা, বরং তার ভাই কিংবা ভ্রাতুস্পুত্র এই জাতীয় আত্মীয়রাও ইসলামি ফরায়েজ মোতাবেক সম্পত্তির অধিকারী হবে৷
নিজের ভাই কিংবা ভ্রাতুষ্পুত্রকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে জীবদ্দশায়ই যাবতীয় সম্পদ স্ত্রীর নামে কিংবা মেয়েদের নামে প্রদান করা কিংবা সন্তানদের মধ্যে কাউকে অকারণে অধিক সম্পদ দিয়ে অন্য কাউকে অকারণে বঞ্চিত করার ইচ্ছা পোষণ করা৷
দুই. দ্বিতীয় যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হল সম্পদ বন্টনের প্রক্রিয়া৷ বন্টনের একাধিক পদ্ধতি হতে পারে ৷ যেমন -১. সন্তানদের মধ্যে কিংবা আপনজনদের মধ্যে কিছু সম্পদ হেবা করা বা উপঢৌকন হিসেবে তাদেরকে দেয়া৷
২. নিজের মৃত্যু পরবর্তী সময়ের অনুমান করে সেই হিসেবে যাবতীয় সম্পদ তাদের মধ্যে বন্টন করা মীরাস বন্টনের হিসাবে৷
অর্থাৎ সকল সম্পদ অন্যদেরকে দিয়ে দিল মালিকানা হস্তান্তরের মাধ্যমে৷ কাগজপত্র-দলিলাদি করে দিল৷ কিন্তু সম্পদের দখল হস্তান্তর করল না ৷ তাদেরকে দখল দিল না৷ সে ক্ষেত্রে এটি মূলত সম্পদের বন্টন কিংবা হস্তান্তর হিসেবে গণ্য হবেনা, বরং এটি তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য ওসিয়ত হিসেবে গণ্য হবে৷ আর ইসলামী শরীয়ার আলোকে কোন ওয়ারিশ এর জন্য ওসিয়ত করা বৈধ নয়৷
সে মতে এই ওসিয়ত কার্যকর হবে না৷ তবে তার মৃত্যুর পরে যদি তার সকল ওয়ারিশগণ এটাকে বহাল রাখতে চায় তাহলে তাদের সম্মতি ও ইচ্ছা হলে সেভাবে তারা কার্যকর করতে পারবে৷
আর জীবদ্দশায় যাবতীয় সম্পদ উত্তরাধিকারীদেরকে সম্পূর্ণরূপে দলিল ও দখলসহ হস্তান্তর করে দিয়ে নিজে নিঃস্ব হয়ে যাওয়াটা ইসলামী শরিয়ার যে দিকনির্দেশনা এবং তাকাজা সে অনুযায়ী এটি উত্তম পন্থা নয়৷ কেননা এতে নিজের একান্ত প্রয়োজনের সময় অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় কিংবা অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় ৷ কুরআনে আল্লাহ বলেছেন وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا
আর তুমি তোমার হাতকে একেবারে গর্দানের সাথে লাগিয়ে (সংকুচিত করে রেখনা আবার পূর্ণ ছড়িয়ে দিও না, ফলে তোমাকে নিন্দিত ও নি:স্ব হয়ে যেতে হবে ৷ সূরা ইসরা-২৯
সুতরাং উত্তম হল যদি সম্পদ দিতে হয় জীবদ্দশায়, তাহলে সবাইকেই কিছু কিছু দিবে৷ যাতে তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়৷ তারা সম্পদ উপভোগ করতে পারে৷ কেউ বিশেষ কোনো সংকট অথবা সমস্যায় পতিত হলে তাকে বিশেষভাবে অনুদানের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেয়া আর তেমনটি না হলে সকলকে সমান সমান ভাবে দেয়া৷ এক্ষেত্রে অনেক আলেমদের মতামত হল ছেলে-মেয়ের মধ্যে এই ধরনের উপঢৌকন প্রদানের ক্ষেত্রে তারতম্য না করা উত্তম।
মাওলানা মামুনুল হকের অফিসিয়াল ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত
-এটি