ইয়াহইয়া বিন আবু বকর নদভী।।
আবু ইউসুফ উমায়রা একজন ফিলিস্তিনি যুবক৷ সে প্রতিবন্ধি৷ ছোটোকাল থেকেই তার হাত পা গুলো বেড়ে উঠেনি৷ কিন্তু তার এই প্রতিবন্ধিত্ব তার পড়ালেখা, উচ্চাভিলাষ ও স্বপ্ন পূরণের পথে অন্তরায় হতে পারেনি৷ সে তার প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে আছে৷ অব্যাহত এগিয়ে চলছে স্বপ্ন পূরণের পথে৷
তবে মজার বিষয় হলো, হাত পা বিহিন এই প্রতিবন্ধি যুবকটি মাত্র অল্পদিনের মধ্যেই মার্শাল আর্ট বিদ্যায় কমলা রঙের বেল্ট অজর্ন করেছে৷ মার্শাল আর্টে সে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে৷ শুধু তাই নয়, একবার সে তার উস্তাদের সাথে ট্রেনিংরতবস্থায় লাঠি খেলায় চমক দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো৷
২৪ বছর বয়সী আবু ইউসুফ উমায়রা বর্তমান ফিলিস্তিনের ‘গাজা’ উপত্যকার ‘আল মাশতাল’ নামক একটি মার্শাল আর্টস ক্লাবে ট্রেনিংরত আছে৷ একবার কেউ তাকে প্রশ্ন করেছিলো- এই পঙ্গুবস্থায় কেন সে এতো কষ্ট করে এসব শিখছে? অথচ কষ্টসাধ্য এই কারাতে শিখা একজন সুস্থ মানুষের জন্য ও অনেক সময় কঠিন এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ কিন্ত সে কী করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলো?
উত্তরে সে বলেছিলো: আমি মার্শাল আর্টস জগতে প্রবেশ করেছি দুটি উদ্দেশ্য৷
—একঃ আমি দেখি মানুষ সাধারণত কোনো বিষয়ে সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হলে বিষয়টিকে অসম্ভব মনে করে হাত গুটিয়ে নিরাশ হয়ে বসে পড়ে৷ কিন্তু আমি তাদের মতো নই৷ আমি প্রমাণ করে বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই যে, প্রতিবন্ধিতা হলো মনের প্রতিবন্ধিতা, দেহের নয়৷ আর অসম্ভব বলতে কিছু নেই৷ পৃথীবিতে সবকিছুই সম্ভব৷ তবে সে জন্য প্রয়োজন দৃঢ় প্রত্যয়, পাহাড় সম হিম্মত, পিপিলিকার মতো নিরবচ্ছিন্ন শ্রম ও মেহনত।
দুই আমি আত্মরক্ষার জন্য কারাতে শিখতে ক্লাবে ভর্তি হয়েছি৷ এবং আমার স্বপ্ন, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া, এবং তাতে সফলতা অর্জর করা৷
আবু ইউসূফ দুর্দান্তভাবে লাঠি ঘুরানো এবং তা দিয়ে আঘাত করতে পারে৷ যা তার না থাকা অঙ্গের সহায়ক ভূমিকা পালন করে৷
এছাড়াও কীভাবে শক্তিশালী ঘুষি মারতে হয় তাও সে পারে৷ তার শরীর ও বাহু দিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলি ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রতিহত করতে শিখেছে।
তার কোর্চার( প্রশিক্ষক) হাসান আল-রাহি বলেন, আমার শিক্ষার্থী বিশেষ ইচ্ছা ও হিম্মতের অধিকারী। ইউসুফের বিভিন্ন দক্ষতা দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি৷ এছাড়াও যারা তার চেয়ে কম অক্ষম তাদের জন্য ও সে কাজ করতে পারে।
আবু ইউসূফ উমায়রা গাজার পশ্চিম তীরে একটি শরণার্থী শিবিরে বাস করে৷ এবং সে প্রতিদিন মোটরসাইকেল যোগে রাস্তায় চলাচল করে। গত বছর সে গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়া ও আইন অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে৷ তথ্যসূত্র: আখবারুল খালিজ আরবি
-এটি