সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জ্ঞান-পিপাসুদের জন্য মসজিদে নববির আড়ম্বরপূর্ণ গ্রন্থাগার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াহইয়া বিন আবু বকর নদভী।।

সমৃদ্ধিশীল গ্রন্থাগার দেশের ঐতিহ্য, গর্ব। যে দেশের গ্রন্থাগার যত উন্নত ও সমৃদ্ধ, সে দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতি এবং ভাষা-সাহিত্য ও তত উন্নত। বিশ্বের সমৃদ্ধশালী গ্রন্থাগারের মধ্যে মসজিদে নববির গ্রন্থাগার। এটি মসজিদে নববির সংলগ্নে অবস্থিত।

মদিনাবাসী ও অন্যান্য দর্শনার্থীদের জন্য এ গ্রন্থাগারটি ‘ইলমের কেন্দ্র’। মদীনাবাসী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারতের জন্য আগত নবী-প্রেমীক এবং জ্ঞানপিপাসুরা তাদের ইলমের পিপাসা মেটাতে জ্ঞানের এই ভান্ডারকে কাজে লাগানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। ফলে মসজিদে নববির গ্রন্থাগারটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

১৩৫২ হিজরিতে সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ মসজিদে নববিতে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবনা অনুযায়ী সৈয়দ আহমেদ ইয়াসিনের তত্ত্বাবধানে পরবর্তিতে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন বাবে উমর বিন খাত্তাবের উপরের তলাটিতে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাবে উমর বিন খাত্তাবে মসজিদ নববির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

১৪৩৮ হিজরিতে মাসজিদে নববির জেনারেল প্রেসিডেন্সি সাঊদ পরিবারে শাসনামলে মসজিদে নববির দ্বিতীয় সম্প্রসারণের পর পাঠাগারটি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরানো হয়। অতঃপর দ্বিতীয় সম্প্রসারণকালে গ্রন্থাগারের সমস্ত হলগুলির পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হয়। গ্রন্থাগার পর্যন্ত পৌঁছার জন্য লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। জ্ঞান-পিপাসুদের জন্য লাইব্রেরিটি ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে। দর্শনার্থী , ইসলামী স্কলার এবং গবেষকদের বিশ্রামের জন্য বিশেষ জায়গা ও এতে রয়েছে। তাদের বিভিন্ন সেবায় ১০ টিম সার্বক্ষনিকভাবে ডিউটিরত থাকে।

গ্রন্থাগারের প্রশাসনিক অফিস ও শিশু ইউনিটের অফিস একটি বৃহৎ হলরুম নিয়ে গঠিত। এতে আলোকসজ্জা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শীতের মৌসুমে উষ্ণতা, জমজম পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, চেয়ার, টেবিল, উন্নত মানের কার্পেট, কম্পিউটার এবং অত্যাধুনিক অন্নান্য সরঞ্জামদির সহ আরো অনেক সুবিধা রয়েছে।

গ্রন্থাগারটির ৫১৬ টি আলমারিতে মোট ১৭৬,০০০ চেয়ে ও অধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। বইগুলির মধ্যে বিপুল সংখ্যক বই কেনা। এছাড়া বিনামূল্যে ও হাদিয়ার অনেক বই ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। লাইব্রেরিটি প্রতি ঘন্টায় গড়ে ৩০০ জন পরিদর্শন করে। আলমারী থেকে বইগুলি বের করার সুবিধার্থে বইগুলিকে ৭২টি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এবং বর্ণানুক্রমিকভাবে তা সাজানো। শিশুদের জন্য ও বিশেষ বিভাগ রয়েছে৷ সেখানে রয়েছে সিরাতে নববি, গল্প, এবং ১৩০টি বিষয় সম্বলিত অন্যান্য শিশু-সাহিত্যে বইয়ের বিশাল সমাহার৷

গ্রন্থাগারের অনন্য একটা বৈশিষ্ট হলো- তাতে রয়েছে প্রযুক্তি ও অডিও গ্রন্থাগার এবং পান্ডুলিপি বিভাগ। পান্ডুলিপি বিভাগটিতে রয়েছে নতুন ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপির এক বিশাল ভান্ডার ৷ পান্ডুলিপির এ বিভাগটি প্রথম তলায় এবং বাবে উসমান বিন আফান-এ অবস্থিত। পান্ডুলিপিগুলিতে বই, কুরআনের পুরাতন কপি, ডিজিটাল ফটোগ্রাফ এবং আধুনিক সরঞ্জাম এবং কম্পিউটার ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরও রয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ৬০০ টি কুরআনের নুসখা, এবং ২৫০টি মুদ্রিত অনুলিপি, ১৫৫০টি শিরোনামে লিখিত ১০,৪০ খন্ড পত্র-পত্রিকা। ২৬০,০০০টি ডিজিটাল পাণ্ডুলিপি রয়েছে। গ্রন্থাগারের বইগুলি প্রতি বছর বাছাই করা হয়। এবং প্রতি বছর প্রায় ১২,০০০ বই বাইন্ডিং কিংবা পুনরায় মুদ্রণ করা হয়৷ পাঠকদের রুচির প্রতি বিশেষ লক্ষ্যে রেখে প্রতি বছর অনেক নিত্যনতুন বই গ্রন্থাগারে স্থান পায়৷ আল-আরাবিয়া অবলম্বনে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ