সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


৪০টি মুসলিম দেশ সফর করে মুসলমানদের নিয়ে তথ্য দিলেন এক ইহুদি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: মুসলমানদের বিষয়ে নানা ভীতিকর কথা জেনে বড় হয়েছেন ড্রিউ বিনস্কি নামের এক ইহুদি। তবে শখ ও পেশাগত কারণে তিনি ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫০টিরও অধিক দেশ। তার মধ্যে প্রায় ৪০টি রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আর এসব দেশে ভ্রমণ করে তার শৈশবে মুসলমানদের বিষয় শোনা তার সব ভীতিকর বক্তব্যকে ঠুনকো, মিথ্যা আর অপপ্রচার বলে মনে হয়েছে।

ড্রিউ বিনস্কি মূলত একজন গলফার। ১৯টি দেশে তিনি গলফ খেলেছেন। তিনি এসেছেন ভারতেও। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার গমনাগমন রয়েছে নিয়মিত।

ভ্রমণ তার নেশা ও পেশা। এসব দেশে দেশে ঘুরে তিনি ভিডিও তৈরি করেন, ব্লগ লেখেন। সেই ড্রিউ বিনস্কি ৪০টি মুসলিমপ্রধান দেশ ভ্রমণ করার পর তৈরি করেছেন এমন একটি ভিডিও যেখানে তিনি জানিয়েছেন, সত্যিকারের ইসলাম কী? মুসলমানরা কেমন আর মুসলিম সংস্কৃতির কোন বিষয়গুলো তার প্রচণ্ডরকম ভালো লেগেছে।

তার সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ড্রিউ বিনস্কিতে পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৭ লক্ষবারের বেশি দেখা হয়ে গেছে ভিডিওটি।

ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা গেছে, ইসলাম পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা ১.৬ বিলিয়ন। আমি এতোগুলো দেশ ভ্রমণের পর মুসলিম সংস্কৃতিকে ভালবেসে ফেলেছি।

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই ইসলাম সম্পর্কে ভীতিকর মন্তব্য শুনে শুনে বড় হয়েছি৷ আমাকে অনেকেই মুসলমানদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিত। আমাকে বলা হতো, মুসলমানরা খারাপ লোক। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এরা জড়িত। তবে আমি যতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছি ততই অভিভূত হয়েছি। ততই মুসলমান সংস্কৃতির প্রেমে পড়েছি।

ভিডিও’র এক পর্যায়ে তিনি জানান মুসলিম সংস্কৃতির কোন কোন বিষয়ের প্রতি তিনি অনুরক্ত- এক. বিনস্কি তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছেন, মুসলমানেরা ভীষণ পরিবারকেন্দ্রিক। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে যেখানে পারিবারিক বন্ধনগুলো ঠুনকো সেখানে মুসলমানদের মধ্যে পরিবারপ্রীতি তুলনামূলক অনেক বেশি। তিনি বলেন, মুসলমানরা তাদের বাবা, মা এমনি দাদা দাদীর সাথেও মধুর সম্পর্ক রক্ষা করে। তাদের দেখভাল করে, দায়িত্ব পালন করে। অথচ মুসলমানদের এই পারিবারিক বন্ধন অমুসলিম দেশগুলোতে অনুপস্থিতই বলা চলে।

দুই. কোনো মুসলমানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মুসলমানরা তাকে “ভাই” বলে ডেকেছে। এ যেন একেবারে আত্মীয়তার মতো একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এর পর অনেকেই তার ওপর শান্তি কামনার জন্য বিধাতার কাছে প্রার্থণাও করেছে। এ বিষয়টি বিনস্কিকে পূলকিত করেছে।

তিন. মসজিদের বৈচিত্র্যময়তা এবং সৌন্দর্য একজন ইহুদি বিনস্কিকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে । তিনি বিভিন্ন দেশের মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখেছেন। বিনস্কি সব দেশের মসজিদকে মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছেন। বিনক্সি বলেন, মসজিদের ভেতরের নিরবতা আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একধরণের প্রশান্তি দিয়েছে। বিষয়টিকে ঐশ্বরিক বলেই মনে করেন তিনি।

চার. মুসলমানরা মেঝে বসে খাবার গ্রহণ করে এবং সবাই একসঙ্গে খায়। বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে এই সংস্কৃতি আছে। পাশাপাশি মুসলমানরা বেশিরভাগ সময়ই হাত দিয়ে খাবার খায়। মুসলিমরা খাবারগুলো একটি বিশাল থালায় নিয়ে সবাই এই থালা থেকে খাবার খায়। এই ব্যাপারগুলো অতীব চমৎকার। হাত দিয়ে খাবার খেলে খাবারের সঙ্গে একটা আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়।

পাঁচ. মুসলমানদের চা খাওয়ার ঐতিহ্যকেও তিনি উল্লেখ করেছেন তার প্রিয় সংস্কৃতি হিসেবে। তিনি বলেন, আমি দেখেছি প্রায় সব মুসলিমপ্রধান দেশে চা খাওয়ার একটা আলাদা রীতি আছে। আলাদা হলেও চায়ের প্রতি আবেগটা সব দেশের মানুষেরই একরকম। গরম গরম চা খাওয়ার জন্য যে আয়োজন সেই ব্যাপারটাই বিনস্কিকে মুগ্ধ করেছে।

ছয়. সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেষে উল্লেখ করেছেন বিনস্কি। বহিঃবিশ্বে মুসলিমদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী বলে প্রচার করা হচ্ছে । তবে একজন ইহুদী বিনস্কির মতে, আর সব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের আতিথেয়তার দিক অনেক এগিয়ে।

তিনি বলেন, কতবার যে মুসলমানদের বাড়িতে চা, কফি ও বিভিন্ন ভোজে যেতে নিমন্ত্রন পেয়েছি ও খেয়েছি তার হিসাব করে বলা সম্ভব নয়। এমন চরিত্রের মানুষগুলো কখনই জঙ্গি মতাদর্শের হতে পারে না।

ড্রিউ বিনস্কি যুক্তি দিয়েছেন, পৃথিবীর চারভাগের একভাগ জনসংখ্যা মুসলমান। আর মুসলমানেরা এমন আতঙ্কবাদী হয়ে থাকলে বিশ্বের কোনো দেশেই মানুষ টিকে থাকতে পারত না।

এখনও ১১টি মুসলিম দেশ ভ্রমণ বাকি আছে জানিয়ে ড্রিউ বিনস্কি বলেন, যারা বলে মুসলমানরা সন্ত্রাস, হানাহানি আর জঙ্গিবাদে জড়িত তাদের কথা একদমই প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুসলমানদের বিষয়ে যারা অপপ্রচারে লিপ্ত তাদেরকে মুসলিম দেশগুলোতে ভ্রমণের আহ্বান জানান ড্রিউ বিনস্কি।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ