মোস্তফা ওয়াদুদ: সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডার একজন ক্রিকেট তারকা। দেশ-বিদেশে তার যেমনি রয়েছে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ। তেমনি একজন হাজী সাহেব হিসেবে পাক্কা মুসলিমের সার্টিফিকেটও আছে তার। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি ঘটালেন এক অন্যরকম বিপত্তি। তাও সেটা নিজের দেশে নয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের কলকাতায়। তিনি ফিতা কেটে ও প্রদীপ জ্বালিয়ে পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি ‘আমরা সবাই ক্লাব’ এর ৫৯তম শ্যামা পূজার উদ্বোধন করেন।বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সমোলাচনার ঝড়।
অসংখ্য ভক্ত সাকিবের এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তাকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তবে আলেম-উলামা ও দীনের দায়ীগণ তাকে তাওবা করতে আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।
আজ শনিবার (১৪ নভেম্বর) আস সুন্নাহ ফাউণ্ডেশন এর ইউটিউব চ্যানেলে বিশিষ্ট দায়ী শায়খ আহমাদুল্লাহ বিশ্বসেরা অলরাউণ্ডার সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘একজন মুসলিম কখনোই অন্য ধর্মের উপাসনায় শরীক হতে পারে না। কারণ ইমানকে ধ্বংস করে দেয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো শিরক। শিরকের চেয়ে বড় কোনো গুনাহ নেই। আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করলেও শিরকের গুনাহ কখনো মাফ করেন না। সাকিব আল হাসান যে অন্য ধর্মের উপাসনায় গিয়েছেন। আমি মনে করি তিনি না বুঝেই গিয়েছেন। তবে তিনি তার এ কর্মের দ্বারা মারাত্মক অপরাধ করেছেন। তাই তাঁকে তাওবা করার আহবান জানান তিনি।
মিরপুর মুসলিম বাজার জামে মসজিদের খতিব, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও দায়ী মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ সাকিবের পূজা উদ্বোধনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িকতার ছুতা দিয়ে আপনি অন্য ধর্মের পূজা উদ্বোধন করতে পারেন না। একজন মুসলমান ঐ পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক যে পর্যন্ত আল্লাহ বলেছেন। আল্লাহর হুকুমকে বাদ দিয়ে আপনাকে কেউ অসাম্প্রদায়িক সাজতে বলেনি।’
তিনি বলেন, ‘আপনার ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই। আপনি যদি আগে নিজেকে পরিচয় দেন। আমার কাছে কোনো ধর্ম নেই। কিচ্ছু নেই। আমার কাছে আগে আমি অমুক, তমুক। তারপরে আমি মুসলমান হলেও ভালো, না হলেও ভালো। তাহলে আপনার সাথে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনি যদি ইমানদার ও মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনি যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীকার করেন। তাহলে আপনার ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো, এই ধরনের কাজ কোনো ইমানদার; ইমানের বিবেচনায় কখনো করতে পারে না। এটা অসম্ভব ব্যাপার।’
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাকিব ভক্তরা অনেক ক্ষোভ ঝেড়েছেন। নানাজন নানারকম মন্তব্য করছেন।
ফেসবুকে সাইফুল চৌধুরী নামের একজন লিখেছেন, ‘হাশিম আমলা, মইন আলীরা কিন্তু মদ কোম্পানির লগো জার্সিতে ব্যবহার না করে জরিমানা দিতেও পিছপা হননি। কারণ তারা মুসলমান। সাকিব ভাই আপনি পুজো উদ্বোধন করতে পারেন না, আপনি মুসলিম। সম্মান দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আপনি কিন্তু একজন সম্মানিত হাজীও বটে। আপনার এই কাজের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
মো. রইস উদ্দীন লিখেছেন, ‘এ কাজটি করার জন্য ওদের বিরাট কোহলি, সচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি ছিল। এরা কি আপনার চেয়ে কম? এরা অনেক বড় ক্রিকেটার। কিন্তু এদের দিয়ে না করিয়ে আপনাকে এরকম একটা শিরকি কাজ করালো; আপনি হাজি হয়ে বুঝলেন না। মনে রাখবেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেমন সম্মান দিতে জানেন তেমন কেড়ে নিতেও জানেন। ধিক আপনাকে।’
এইচএম আব্দুল হামিদ লিখেছেন, ‘হাজী সাহেব ইন্ডিয়া গিয়ে মন্দির উদ্বোধন করেন, যেখানে ইন্ডিয়া ফ্রান্সকে সহযোগিতা করে। আর নিজের দেশের ভক্তের ফোন ছুরে মারেন। এমনটা আশা করা যায় না। ইসলামের স্বার্থে আঘাত পড়লে সাকিবকেও বয়কট করব ইনশাআল্লাহ।’
এমডব্লিউ/