চট্টগ্রামে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ এর আয়োজনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ হয় গত শনিবার। সেখানে কিছু উগ্র কর্মীরা ইসলাম, মুসলমান ও মুসলমানের ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে উস্কানীমূলক শ্লোগান দেয়। যার ফলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ আলেমগণ। দেশের শীর্ষ তিন আলেমের বক্তব্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আজকের প্রতিবেদন। তৈরি করেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবেন না: হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে বাবুনগরী
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে উগ্র কর্মীদের উস্কানীমূলক শ্লোগানের কড়া সমালোচনা করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজত মহাসচিব, হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তারা
আজ রবিবার (৮ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ঈমান-আকিদা ভিত্তিক সংগঠন। লক্ষ কোটি মুমিন মুসলমানের প্রাণের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতকে নিয়ে উস্কানিমূলক সন্ত্রাসী শ্লোগান দিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। হেফাজতকে নিয়ে কোন রাম বামদের উস্কানি আর আস্ফালন সহ্য করা হবে না।
হেফাজত মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরী বলেন, পৃথিবীর বুকে ইসলাম একমাত্র শান্তির ধর্ম। হজরত মুহাম্মদ সা. বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। হাদিস শরিফে রাসূল সা. সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিধান বর্ণনা করেছেন। সংখ্যালঘুদের জান, মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষার আদেশ দিয়েছেন। কেবলমাত্র শান্তিরধর্ম ইসলামই সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত রয়েছে। মুসলমানরা কখনো হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করেনি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদ এসব উস্কানিমূলক শ্লোগান দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে আধিপত্যবাদি শক্তির ছত্রছায়ায় হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
সম্প্রীতির বিরুদ্ধে হিন্দুদের এমন উস্কানি নজিরবিহীন: আল্লামা কাসেমী
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের’ মিছিল ও সমাবেশ থেকে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, দল, আলেম-উলামা ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর উসকানিমূলক সন্ত্রাসী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে এমন নগ্ন উস্কানী নজিরবিহীন।
আজ রবিবার (৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি প্রশ্ন তুলে আরও বলেন, এসব কি ভদ্র, সভ্য ও সহনশীলতার শ্লোগান, সম্প্রীতির শ্লোগান, শান্তির শ্লোগান? আমরা তাদের এমন নগ্ন উসকানীমূলক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, তারা যেভাবে ভারতে ইসলামবিদ্বেষী উগ্র হিন্দুত্ববাদের ব্র্যান্ডেড স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ বলে ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগান দিল, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে জিজ্ঞাসা, তারা কি এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা হিন্দু ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড শুরুর আহ্বান জানাতে এটা করেছিল?
আল্লামা কাসেমী বলেন, দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে কারা আধিপত্য কায়েমের সুযোগ করতে এসব করাচ্ছে, দেশবাসী সহজেই বুঝতে পারছে। উপরন্তু আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে রাজ্যসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বিজিপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য বাংলাদেশে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ তৈরি করে সেখানে মুসলিম বিরোধী উন্মাদনা সৃষ্টি করতে দেশটির গোয়েন্দারা এসব করাতে পারে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উস্কানি দিচ্ছে : চরমোনাই পীর
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে গিয়ে দেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এ উস্কানি দেওয়ার অপরাধে এদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নিষিদ্ধ করতে হবে।
রবিবার এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিক থেকে বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ছোট্ট একটি দেশে এত বেশি জনসংখ্যা, তারপরও সব ধর্ম ও মতের মানুষের এ দেশে যুগযুগ ধরে সম্প্রীতি বজায় থাকার পর হঠাৎ করে তথাকথিত ঐক্য পরিষদ দেশে দুটি শীর্ষ ইসলামী সংগঠনের (ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলাম) বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে তারা দেশে কী করতে চায়?
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে দিতে চায়? চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি কর্মসূচিতে আপত্তিকর উস্কানিমূলক কিছু স্লোগান দিয়ে দেশময় ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি প্রশাসনকে এ ধরনের উস্কানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।
এমডব্লিউ/