সুফিয়ান ফারাবী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ওয়াজ মাহফিল। হাজার হাজার তৌহিদি জনতার মিছিলের নাম। কোরআন ও হাদিসের আলোয় মুসল্লিদের কাটে দীর্ঘ সময়। দেশের বরেণ্য আলেমগণ সবুজ বাংলার পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে দেন ইসলামের সুমহান বাণী। চলতি শতাব্দীর ২০২০ সাল বিশ্ব মনে রাখবে ভিন্নভাবে। সারা পৃথিবীর উপর দিয়ে বয়ে গেছে মহামারীর ঝড়ো হাওয়া। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এখনো লকডাউন কার্যকর রেখেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শীতের মৌসুমে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিদগণ বলছেন, শীতের শুরুতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উঠতে পারে। চলমান নানা বিধিনিষেধের পাশাপাশি নতুন করে সতর্কতা জারি করেছে সরকার। গণজমায়েতই যখন স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন সময়ে মাহফিল নিয়ে কী ভাবছেন সরকার ও ইসলামী চিন্তাবিদরা?
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, সকল ধরনের গনজমায়েত নিষিদ্ধ। করোনা থেকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছি আমরা। আমরা এখনো মহামারীর ভেতরেই আছি। হয়তো আগের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম। কিন্তু মহামারী শেষ না হওয়ায় তাবলীগ, মাহফিলসহ সব ধরনের গণজামায়াত করতে না করা হয়েছে। আমরা সকলের অবগতির জন্য আবারো প্রজ্ঞাপন জারি করার প্ল্যান করছি।
জামিয়া গহরডাঙ্গার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস মুফতি রুহুল আমিন মনে করেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে অপরিহার্য বিষয়গুলো ঠিক রেখে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনের বিষয়গুলো আপাতত এড়িয়ে চলা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ রেখে মসজিদ এবং আবাসস্থলগুলোকে পাঠশালা করে তোলা যায়। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা যেসকল স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলেছেন সেগুলো মেনে চলা, সরকারের পক্ষ থেকে আরোপিত বিধিনিষেধ মান্য করা প্রয়োজন। আমি ইউরোপ আমেরিকাতে দেখেছি, মসজিদভিত্তিক জ্ঞান চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। মসজিদে যে সকল আলোচনা হয় সেগুলো রিসিভারের মাধ্যমে ঘরের মা-বোনরাও শুনতে পান। এজন্য মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম আরো বেগবান করা উচিত।
অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন মনে করেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যদি আবারো অবনতির দিকে যায়, তখন ওয়াজ মাহফিল বন্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ধাপ চলছে। সেখানে শীত বাড়ছে, করোনা ছড়াচ্ছে। সুতরাং শীতের মধ্যে যদি দ্বিতীয় মেয়াদে করোনাভাইরাসের প্রভাব দেখা দেয় তাহলে মাহফিলসহ সকল ধরনের গনজমায়েত বন্ধ রাখতে হবে। আমরা আশা রাখবো ভালো কিছু। আশা করি আল্লাহ আমাদেরকে আজাব থেকে মুক্ত করবেন। আর যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যায় তাহলে মাহফিল চালু রাখা যাবেনা।
তবে বিশিষ্ট বক্তা ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী বলেন, জনগণের স্বার্থে মাহফিল চালু রাখা প্রয়োজন। কেননা করোনার কারণে দেশের শপিংমলগুলো বন্ধ নেই। বন্ধ নেই সুপারশপ, হাট-বাজার কিংবা লোকাল বাসের ঝুলিয়ে নেয়া যাত্রী। সেখানেতো কেউ দূরত্ব বজায় রাখার কিংবা গণজমায়েত না করার কথা বলছে না। তাহলে দীনের ভ্রাম্যমাণ এ শিক্ষাকেন্দ্র কেনো বন্ধ রাখা হবে। সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গিতে মাহফিল বন্ধ রাখার কিংবা গণজমায়েত না করার কথা বলছেন। সে দৃষ্টিভঙ্গিতেই আমি মাহফিল চালু রাখার কথা বলছি।
তিনি বলেন, দেশের শপিংমল কিংবা হাট-বাজারে ও বাসে মানুষ ওজুসহ হাত-মুখ ধুয়ে যায় না। কিন্তু মাহফিলে ঠিকই ওজুসহ পূর্ণ পবিত্রতা হাসিল করে যায়। তাই করোনার দোহাই দিয়ে গণজমায়েত নিষিদ্ধের নামে মাহফিল বন্ধ করা কোনো যুক্তিসংগত কারণ হতে পারে না।
ওআই/হুআ/মোস্তফা ওয়াদুদ/