ফরহাদ খান নাঈম ।।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (কারো কারো মতে তিনি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন) আমি আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে আমি সকল দেশের সব জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিকে একত্রিত করবো এবং তাদের সবাইকে নিয়ে কুরআনের নীতিমালা অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা তৈরি করবো; কারণ একমাত্র কুরআনের নীতিমালাই সত্য ও সার্বজনীন যা মানুষকে সত্যিকার অর্থেই সুখ ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারে। (সূত্র: বোনাপার্ট এ্যান্ড ইসলাম)
স্যার জর্জ বার্নাড শ: আমি সবসময়ই মুহাম্মাদের ধর্মকে এটির চমৎকার ওজস্বিকতার জন্য শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমার দৃষ্টিতে শুধুমাত্র এই ধর্মটিই সর্বকালের সার্বজনীন ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হবার যোগ্য যেটি ক্রমপরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা রাখে। আমি এই চমৎকার ব্যক্তিকে (মুহাম্মাদ সা.) অধ্যয়ন করেছি; এবং আমার মতে একমাত্র তাঁকেই মানবতার ত্রাণকর্তা বলা যেকে পারে।
আমি বিশ্বাস করি, যদি তাঁর মতো কোনো ব্যক্তির ওপর বর্তমান বিশ্ব পরিচালনা করার দায়িত্ব থাকতো, তাহলে তিনি অবশ্যই সমগ্র বিশ্বে বিরাজমান সকল সমস্যার সমাধান করে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন করতে পারতেন। আমি আগামবার্তা করে যাচ্ছি, মুহাম্মাদের ধর্মই একদিন ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করবে। (সূত্র: জেনুইন ইসলাম, ভলিউম ০১)
এইচ. জি. ওয়েলস: ইসলামে এমন সব শিক্ষা রয়েছে যা ন্যায়সঙ্গত শাসনব্যবস্থা ও ন¤্র-ভদ্র আচরণ নিশ্চিত করে; এবং এর অনুসারীদেরকে মহৎ ও সহিষ্ণু করে তোলে। ইসলামের এই শিক্ষাগুলো হচ্ছে সর্বোচ্চ শ্রেণির মানবতার শিক্ষা যা কেবলমাত্র মৌখিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং শতভাগ কার্যে পরিণত করবার যোগ্য। ইসলামের এই নৈতিক শিক্ষাগুলো এমন একটি অভূতপূর্ব সমাজ জন্ম দিয়েছে যেখানে কঠোরতা, সামাজিক অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়ন ও অন্যায়ের কোনো অস্তিত্বই নেই। এককথায়, ইসলাম ন¤্রতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, সৌজন্যতাবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধে পরিপূর্ণ একটি ধর্ম। (সূত্র: দ্য ইনভিজিবল ম্যান)
ফিলিপ হিট্টি: মুহাম্মাদ সা. ক্ষমতার শীর্ষ অবস্থানে থেকেও সেভাবেই জীবন যাপন করতেন যেভাবে ক্ষমতাহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতেন। তাঁর জীবন ছিল সহজ-সরল ও কপটতামুক্ত। সামান্য যে অর্থ মৃত্যুর সময় তাঁর কাছে সি ত ছিল তা তিনি সরকারি কোষাগারে দান করে যান। তিনি প্রতিদিন যেসব কাজ করতেন তা গুরুত্ব্পূর্ণ কিংবা ছোটোখাটো যে কাজই হোক না কেন সেসব এমনই বৈধতা পেয়েছে যে আমাদের যুগেও প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন মানুষ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সেইসবকে মেনে চলছে ও অনুকরণ করছে। মুহাম্মাদ সা. কে যেভাবে পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখা হয় ও তাঁর সব কাজকেই যেভাবে খুব নিখুঁতভাবে অনুসরণ করা হয় মানবজাতির মধ্যে সেরকম আর কেউ নেই। তিনিই একমাত্র পরিপূর্ণ মানুষ যার ছোটো-বড় সকল কর্ম ও বক্তব্য আইনে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এখন সেসব আইন মেনে চলছে বা অনুসরণ করছে। (সূত্র: দ্য হিস্ট্রি অব দ্য আরবস)
আর. বসওয়ার্থ স্মিথ: হযরত মোহাম্মদ (সা.) একাধারে সিজারের ন্যায় শাসনতন্ত্রের শীর্ষভাগে এবং পোপের ন্যায় ধর্মমন্দিদের উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর পোপের ন্যায় জাঁকজমক এবং সিজারের ন্যায় সেনাবাহিনী ছিল না। বেতন ভোগী সেনা, দেহরক্ষী সৈনিক, রাজকীয় প্রাসাদ ও নির্ধারিত রাজস্ব ব্যতীত তিনি স্বর্গীয় অধিকার বলে রাজত্ব করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, সুবিজ্ঞ দার্শনিক এবং প্রকৃত খৃষ্টানগণ একদিক হযরত মুহাম্মাদ সা. কে ইশ্বরের প্রকৃত নবী বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। (সূত্র: মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদিজম)
সরোজিনী নাইডু: ন্যায়বিচারবোধ ইসলামের এক অনুপম আদর্শ। যখনই আমি কোরআন অধ্যয়ন করেছি তখন প্রত্যক্ষ করেছি জীবন সম্পর্কিত সমস্ত গতিশীল নীতিকথা যা ভাববাদী অর্থে নয় বরং বাস্তব অর্থেই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার পথনির্দেশনা। (সূত্র: দ্য আইডিয়ালস অব ইসলাম)
ড. উইলিয়াম ড্রেপার: জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যিনি সবার চেয়ে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক-তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা এ সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে। (সূত্র: হিস্ট্রি অব ইনটেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট ইন ইউরোপ)
থমাস কার্লাইল: স্রস্টা পৃথিবীর মানুষের প্রতি সবচেয়ে মূল্যবান যে অনুগ্রহটি করেছেন তা হল মুহাম্মাদের মত প্রতিভা যিনি উর্ধ্ব জগত থেকে খোদায়ি বাণী নিয়ে আমাদের মধ্যে নাজিল হয়েছেন। ... তাঁকে যেসব নামে ডাকা হোক না কেন বিশ্বের কোনও সাম্রাজ্যের সম্রাটই তাঁর মুকুট ও সিংহাসন নিয়ে কখনও এমন আনুগত্য পায়নি যা পেয়েছেন মুহাম্মাদ যিনি নিজ হাতে তার সাধারণ আলখাল্লাটি সেলাই করেছেন! তিনি দীর্ঘ ২৩ বছরে (ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে) কঠিনতম নানা কষ্ট ও জীবনের পরীক্ষা সহ্য করেছেন এবং অনেক ব না তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। আমি তাঁর মধ্যে একজন সত্যিকারের নায়কের সব বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছি। তাঁর পরিচয় হিসেবে এটাই যথেষ্ট! (সূত্র: হিরোজ এন্ড হিরোজ ওরশিপ)
মহাত্মা গান্ধী: আমি নিশ্চিত যে, ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর (নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে, এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না। (সূত্র:১৯২৪ সালে ইয়াং ইন্ডিয়া তে প্রকাশিত গান্ধিজীর বক্তব্য)
মাইকেল এইচ হার্ট: জানি মুহাম্মদ সা. কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দেয়ায় অনেকেই বিস্মিত হবেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করবেন। কিন্তু তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনীতিক, মানবিক ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে সর্বাধিক সফল।
(সূত্র: দি হান্ড্রেডস)