মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর>
সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. আব্দুর রহীম। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন মুসলিম নারীদের পড়তে হবে হিজাব। আর পুরুষের পরতে হবে টাকনু পর্যন্ত কাপড়। গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) এ বিজ্ঞপ্তি জারী করেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তি জারীর পর কিছু মানুষ উঠেপড়ে লাগে তার বিরুদ্ধে। এরপর জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. আব্দুর রহীম জারী করা বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হোন।
এ বিষয়ে মিডিয়ায় দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জারী করা বিজ্ঞপ্তির ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, এটা সব অফিসে থাকে না। আমি শুধু আমার অফিসের জন্য বলেছি। তিনি বলেন, ধর্ষণে যেমন কবিরা গুনাহ হয়। তেমনি টাকনুর নিচে কাপড় পড়লেও কবিরা গুনাহ হয়। একই রকম মহিলাদের ক্ষেত্রেও।
তিনি বলেন, বিষয়টি ধর্মীয় রীতি-নীতির আলোকে আমি নির্দেশনা দিয়েছি। এতদিন পরে হলেও আগে বিষয়টি নিজের ভিতরে ফিট করি। তারপর কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ভিতরে যেনো ফিট হয়। তাই অফিস প্রধান হিসেবে আমার এটা কর্তব্য মনে করে তাদের জানিয়ে দিয়েছি।
ডা. আব্দুর রহীমের এমন বিজ্ঞপ্তি জারীর কারণে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধূরী মানিক তাঁকে জামাতি, তালেবান ও বাংলাদেশে আল-কায়েদার এজেন্ট বলেছেন। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধূরী মানিক এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি অসাংবিধানিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সাংঘর্ষিক। এই তালেবানী লোককে ইমিডিয়েটলী রিমুভ করতেই হবে। শুধু রিমুভ না। বাংলাদেশকে তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টার জন্য ও সংবিধানবিরোধী একটি সিদ্ধান্তে আসার জন্য তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে ইসলামী একটি বিধান বাস্তবায়নে নূন্যতম চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে, তালেবান, জামায়াতি বা আল-কায়েদা ট্যাগ লাগানোর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন আলেমরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধূরী মানিকের মতামতকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধূরী মানিকের বক্তব্যের সঙ্গে একেবারেই একমত নই। তারা এসব কথা বলে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করছে। একজন মানুষ সরল মনে ইসলামী একটি বিধান পালনের জন্য বলেছেন। তিনি হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতি ততটা বুঝেননি। তবে তিনি ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে তাকে যারা তালেবান বলে, তারা আসলে ইসলামবিরোধী।
একজন সাবেক বিচারপতির মুখে এ জাতীয় মন্তব্য আদৌ ঠিক বা উচিত বলে মনে করেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, বিচারপতি কেনো? যে কারো মুখ থেকেই এমন বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। হ্যাঁ! সেটা উনাকে বলা যেতে পারে যে, উনি হেকমাতের খেলাফ কাজ করেছেন। কেননা দাওয়াত দিতে হবে হেকমাতের সঙ্গে। প্রজ্ঞার সঙ্গে। তিনি যেভাবে দাওয়াত দিয়েছেন। সেভাবে প্রজ্ঞাপন জারী করা উচিত ছিলো না। আগে বুঝায়ে পরে প্রজ্ঞাপন জারী করলে বেশি ভালো হতো। আমি মনে করি, যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছে তারাও মৌলিকভাবে জঙ্গিবাদীদের সহযোগিতা করছে।
মুসলিম দেশে মুসলিম পোষাক বাস্তবায়ন করতে গিয়েও একজন সরকারী উচ্চপ্রদস্থ কর্মকর্তা ব্যর্থ হলেন কেনো? জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের কাছে।
তিনি বলেন, মুসলিম দেশ হলেও আমাদের দেশে ইসলামী বিধিবিধান, শরীয়া আইন কোনোটাই রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত না। বিভিন্ন অফিস আদালতে একজন কর্মকর্তা তিনি যত বড়ই কর্মকর্তা হোন না কেনো, যতবড় উচ্চপ্রদস্থ হোন না কেনো তার জন্য আইনগতভাবে এই অবকাশ নেই। তাছাড়া তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিজ্ঞপ্তি জারী না করে অন্য মাধ্যমে ইসলামী পোষাক পরিচ্ছদবিধি অনুসরণ করার অধীনস্থদের উদ্বুদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। সেটাতে আইনগত কোনো বিধিনিষেধ নেই।
মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, আরেকটি খুব বড় বিষয় হলো মিডিয়া। ইসলামবিরোধী মিডিয়া। তারা ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত। সে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হতে দেখলেই তারা সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে। তারা অপপ্রচার চালায়। একটা ঘাপলা তৈরি করে। আমি মনে করি এটাও একটা বড় ধরনের কারণ। অন্যথায় প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকে উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান, সরকারি উচ্চপ্রদস্থ কর্মকর্তা নিজের অফিসে বা অধীনস্থদের মাঝে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে অন্তত ইসলামী সভ্যতার কিছু নিদর্শন বাস্তবায়ন করতে পারতেন।
কথা বলেছিলাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহামহাসচিব গাজী আতাউর রহমান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধূরীতো একজন পাগল। সে কিভাবে দেশের বিচারপতি হলো, এ নিয়ে আমি কনফিউশনে আছি। আসলে তাদের এলার্জি হলো ইসলাম নিয়ে। ইসলামের এলার্জিকে প্রশমনের জন্য তারা আল-কায়েদা শব্দের ব্যবহার করে। না হয় একজন বিসিএস ক্যাডার, সরকারি উচ্চপ্রদস্থ কর্মকর্তার ব্যাপারে এজাতীয় কথা কোনো সুস্থ মানুষ বলতে পারে না। সে একটি পাগল। অসুস্থ ও মানসিক রোগী।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, সাবেক বিচারপতির এই বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুর রহীম সাহেব যেটা করেছেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিচারপতি মানিকের ধর্মবিদ্ধেষী বক্তব্য শুধু জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রধান ডা. আব্দুর রহিম সাহেবকে আঘাত করেই নয়। বরং এটি মুসলিম অনুভূতিতেও চরম আঘাতের শামিল। তিনি যে ডা. আব্দুর রহিম সাহেবের বিচার দাবী করছেন। এটা হাস্যকর। উল্টো ধর্মবিদ্ধেষী বক্তব্যের জন্য আমরা তার বিচার দাবী করছি।