আলী আব্দুল মুনতাকিম।।
সভাপতি, কেরামত আলী মমতাজীয়া মাদরাসা, দক্ষিণগাঁও, সবুজবাগ ঢাকা
আড়াই লক্ষ বর্গমাইলে পৌনে সাতকোটি মানুষের দেশ ফ্রান্স। ইউরোপের এই দেশটিতে ৫০% খৃষ্টান, ১০% মুসলমান। ১% অন্য ধর্ম, বাকীরা ধর্মহীন।
ফ্রান্সকে বিশ্বের গনতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হলেও মুসলিমদের বেলায় তাদের গনতন্ত্র অনুপস্থিত। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স। তাদের ইতিহাস যেমন ফরাসি বিপ্লব, লৌহযুগের কারনে কিছুটা গৌরবোজ্জ্বল যা অস্বীকার করা হয় না, তেমনি শঠতা, প্রতারনা ও আগ্রাসনেও অগ্রগামী। উত্তর আফ্রিকার হাজারো মানুষ তারা হত্যা করেছে লুন্ঠন করেছে। দাদাগিরি ও আগ্রাসনের নোংরা ইতিহাস রয়েছে তাদের।
মূল কথায় আসি। শার্লি হেবদু (CHARLIE HEBDO) ইউরোপীয় পাপিষ্ঠ ও আজন্ম উগ্র সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। ১৯৭০ সালে প্রকাশনা শুরুর ১০ বছরের মাথায় এটি বন্ধ করে দেয় সরকার, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট চার্লস ডিগলিকে বিদ্রূপ করার কারনে। ১৯৯১ সালে আবার প্রকাশ শুরু হয়। সপ্তাহে প্রতি বুধবার যে কোন একটি বিতর্কিত কার্টুন বা খবর নিয়ে সে প্রকাশিত হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক বার কয়েক পত্রিকাটিকে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু জন্মে যার দোষ সে ঠিক হবে কি করে!
জ্যাক বলেছিলেন— Anything that can hurt the convictions of someone else, in particular religious convictions, should be avoided", Chirac said.
বামপন্থি ম্যাগাজিন শার্লি এবদু এগিয়ে যেতে পেরেছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের মত সাইকো, ধর্মবিদ্বেষী সাপোর্টারদের কারনে। ফ্রান্সের দুশ্চরিত্র ও সাইকো রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রন, মুসলিমবিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলমানের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন, মোহাম্মদ সা. কে নিয়ে, মুসলিমদের নিয়ে, কার্টুন বিষয়ে তার অবান্তর, অশোভন ও বিদ্বেষপূর্ন বক্তব্য দিয়ে। একথায় পরে আসছি।
ম্যাক্রনের ফ্রান্সের কালোমনের ম্যাগাজিন শার্লিহেবদু হচ্ছে সব অঘটনের মূল।বহুবার ম্যাগাজিনটি মোহাম্মদ সা. কে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন এঁকেছে।
গোটা বিশ্বের সকল মানুষের শ্রেষ্ঠ মানুষ, যা অমুসলিম দার্শনিক বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন, যিনি মানবতার মুক্তির দূত, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন বিশাল বিলবোর্ডে, ভবনের দেয়ালে টানিয়ে অপমান করবেন তা মুসলমানদের সহ্য করতে হবে এরকম ভেবে ম্যাক্রন ভুল করেছেন।
মানবতার মুক্তির গাইড মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে ৩ নভেম্বর ২০১১ সালে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করায় ১১ নভেম্বরে বোমা হামলা করা হয় পত্রিকা অফিসে (যা কোন মুসলমান ই সমর্থন করেনি, কারন ইসলাম এরকম হামলা সমর্থন করে না)। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আবারো সিরিজ ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করতে থাকে। ফলে আবারে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ইউরোপসহ মুসলিম বিশ্ব। ২০ টি মুসলিম দেশের সাথে ফ্র্যান্স কুটনৈতিক সম্পর্ক,পরিচালিত স্কুল, দাতব্যচিকিৎসালয় প্রভৃতি বন্ধ করে দেয়। ৭ জানুয়ারী ২০১৫ সালে আবারো পত্রিকাটি দুজন গানম্যান দ্বারা হামলার স্বীকার হয় এবং ১২ জন মারা যায় (এ হামলাও মুসলিম বিশ্ব সমর্থন করেনি)। এসব কিছুর পেছনে উগ্র বিষাক্ত ম্যাক্রন মনোভাবাপন্নরা দায়ী। শার্লী হেবদুকে তারা বাঁচিয়ে রাখবে। ম্যাক্রনের আগের সরকার গুলো হেবদুর সব কাজ পছন্দ করতেন না, কিন্তু ম্যাক্রনরা ভিন্ন গ্রহের। চোরেরা চোরেরা মাসতুত ভাই। তখন গার্ডিয়ান পত্রিকা ১ লক্ষ ইউরো, ফ্র্যান্স সরকার ২.৫ লক্ষ ইউরো, গুগল ১ লক্ষ ইউরো এভাবে অনেক দাতারা হেবদু ম্যাগাজিনকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উৎসাহ দিয়ে সাহসী করে তুলে, বাঁচিয়ে রাখে।
৬৬% ভোট পেয়ে ৭ মে ২০১৭ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ৪২ বছর বয়সি ম্যাক্রন। এর আগে অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী থাকা কালে বা তারও আগে সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য থাকা কালে তার চতুরতার স্বাক্ষর রেখে এসেছেন।
বৃটিশ দাদা জার্মান দাদীর বংশধর ম্যাক্রন স্কুল জীবনেই বদমাশিতে পাকা ছিলেন। ইতোমধ্যে জেনে গেছেন সবাই ১৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সি স্কুল শিক্ষিকার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আলোড়ন তুললে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বড় ৩ টি সন্তানের মা স্কুল শিক্ষিকা ব্রিজিটে ট্রুগনাসকে ১৫০ মাইল দূরে পাঠানো হয়। তবুও লাভ হয়নি। পরিবারের অমতে ৩ বছর পর ম্যাক্রন ও ব্রিজিটে বিয়ে করেন, যখন ম্যাক্রনের সৎ পুত্র তার চেয়ে বড়। ৩ টি পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেন ম্যাক্রন।জীবন শুরুতেই যিনি আপন পরিবারের মানুষকে অশান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি আজ ইউরোপের গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল বা ত্রাতা সেজেছেন।
তিনি ইইউ কে শক্তিশালী করে মুসলিম বিশ্বকে একহাত নিতে চান। তিনি ভুলে যান ফ্রান্স শুধু তার দেশই নয়। জিনেথিন জিদানেরও দেশ।প্যারিসে হাটলে ১০ জনের গা লাগলে ১ জন মুসলমান পাওয়া যায়। এক পণ্য বর্জনের ডাকেই ম্যাক্রনের মুখ শুকিয়ে গেছে।ধমক দিয়ে কাবু করা যাবে না। সৌদি আরবসহ মধ্যে প্রাচ্যে যখন ফ্র্যাঞ্চ এর পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে সারা মুসলিম বিশ্ব তা স্বাগত জানিয়ে পণ্য বর্জন অব্যাহত রেখেছে ।
তুরস্কও এ ডাকে শামিল হয়েছে। এ এক অভূতপূর্ব ঐক্য। পৃথিবী দেখুক মহানবীর উম্মতেরা তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা. এর অবমাননার কড়া জবাব দিতে জানে। তুরষ্ক ঘোষণা করেছে, শার্লীহেবদুর বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে,কুটনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ম্যাগাজিনটি এরদোয়ানকে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করে যাচ্ছে।
খৃষ্টান বিশ্বের কেন্দ্র তথা উচ্চ পদমর্যাদার আর্চবিশপ থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট কড়া ভাষায় ফ্রান্সের নিন্দা করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানেরও কড়া বার্তা ফ্রান্সের প্রতি। দিশেহারা ম্যাক্রন তার দেশের নাগরিকদেরকে মুসলিম দেশগুলো ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ম্যাক্রন ভুল করছেন। মুসলিম দেশগুলোতে ফ্রান্সের আগন্তুক বা পর্যটকগন মেহমানের মর্যাদা পাবে। মেহমানদারিতে মুসলমানগন সেরা।
ম্যাক্রন এর মত অল্প শতাংশ লোক গোঁড়ামি করার অর্থ এই নয় গোটা ফ্রান্সবাসী খারাপ। ফ্রান্স এর পর্যটক বা ব্যবসায়ী বা ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার নিশ্চিন্তে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক ভ্রমণ করতে পারে। ১ লা নভেম্বর থেকে ফ্রান্সে লকডাউন শুরু করতে হচ্ছে। এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি। সব শেয়ারের দর তীব্র নিম্নমুখী। ভেঙে পড়তে যাচ্ছে ব্যবসায়িক চেইন।
যৌনতা, বেহায়াপনা ও অসভ্যতায় বিশ্বকে পেছনে ফেলে দেয়া ফ্রান্সকে বলব আকাশের মালিকের দিকে তাকান। ইটালির প্রধানমন্ত্রী আকাশের মালিকের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আকাশের মালিক, জমিনেরও মালিক, গোটা বিশ্ব ভ্রমান্ডের মালিক ও প্রতিপালক। ইউরোপের কোল ঘেঁষে আটলান্টিক মহাসাগর। গোটা ইউরোপকে আটলান্টিক বানিয়ে দেয়া মালিকের জন্য মিলি সেকেন্ডও লাগবে না। ভুল করলে আমরাও ছাড়া পাব না। খালিক- মালিক-রব তো বলেই রেখেছেন, সুরা ফাতিরে-১৬নং আয়াতে- إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ
তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করে এক নতুন সৃষ্টির উদ্ভব করবেন।