শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ফ্যাসিস্ট সরকারের সব অন্যায়ের বিচার হবে : ডা. জাহিদ কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব

মুনাজাতে যে ১০ বিষয় লক্ষ রাখলে দোয়া কবুল হবেই!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবো না।

হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)

আলোচ্য হাদিসে আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম দয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। বান্দাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, বান্দার গুনাহ যত বেশিই হোক না কেন, আল্লাহ তা আপন দয়ায় ক্ষমা করে দেবেন। যদি সে যথানিয়মে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মুহাদ্দিসরা দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন এবং তা দোয়া কবুলে সহায়ক হয়। তা হলো :

১. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আমার বান্দা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, নিশ্চয় আমি তাদের নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুক। এতে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

২. নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করা। হাদিসের বর্ণনামতে ইখলাস বা নিষ্ঠা দোয়া কবুলের শর্ত। ৩. আল্লাহর প্রশংসাসূচক গুণবাচক নামের সঙ্গে দোয়া করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৮০)

রাসুলুল্লাহ সা. আয়েশা রা. কে এভাবে দোয়া করতে বলেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৯৫)। এখানে আল্লাহর ‘ক্ষমাশীল’ গুণ উল্লেখ করে দোয়া করতে বলা হয়েছে।

৪. দোয়ার আগে আল্লাহর প্রতি ‘হামদ’ (প্রশংসা) ও রাসুলের প্রতি ‘সালাত’ (দরুদ) পাঠ করা। ফাজালা ইবনে উবাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সা. বসে ছিলেন। এমন সময় একজন লোক এলো এবং নামাজ আদায় করল। এরপর সে বলল, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘হে নামাজি! তুমি তাড়াহুড়া করলে। নামাজ শেষে যখন তুমি বসবে, তখন তুমি আল্লাহর উপযুক্ত হামদ এবং আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। অতঃপর তুমি দোয়া করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৬)

৫. কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বদরের ময়দানে আল্লাহর নবী সা. এর দোয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর তিনি কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে স্বীয় প্রভুর কাছে বিনীত হয়ে বললেন …।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৬৩) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩২০)

৬. প্রচণ্ড আশা নিয়ে দোয়া করা। আল্লাহর প্রতি প্রচণ্ড রকম আশা নিয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবি সা.। তিনি বলেন, ‘দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল সৎকাজে প্রতিযোগী, তারা আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা করত। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)

৭. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

৮. একান্তে দোয়া করা। দোয়া ও প্রার্থনার শিষ্টাচার হলো একান্তে দোয়া করা। তা প্রকাশ না করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

৯. দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করা। আল্লাহর প্রতি দাবি ও অধিকার নিয়ে দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন না বলে, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমার প্রতি দয়া করুন। সে যেন দৃঢ়তার সঙ্গে চায়। কেননা কেউ আল্লাহকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩৩৯)

১০. দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। নবি করিম সা. বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না।’ (আল জামি বাইনাস সহিহাইন, হাদিস : ২২৯২)

আল্লাহ মানুষকে তাঁর কাছে চাইতে, দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াকে ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রভু বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬০)। নবী করিম সা. বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)

মুমিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ