সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকদিন ধরেই চলছে গণমাধ্যম বয়কটের আহবান। বিশেষত একটি নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেলকে ঘিরে দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা এ বয়কটের ডাক দিয়েছে। এতে সেই চ্যানেলের প্রায় ২০ লক্ষ লাইকার কমে গেছে। তারা পড়েছেন দেশী বিদেশী বহুমূখী চাপে। এ নিয়ে তারা বিষয়টিকে পুরো গণমাধ্যম বয়কটের কথা বলে আলেমদের দোষ চাপাতে চাচ্ছে। কিন্তু উলামায়ে কেরাম কি বলছেন এসব বিষয়ে। কয়েকজন আলেমের বক্তব্য ও লেখা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন করেছেন মোস্তফা ওয়াদুদ।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বক্তা ‘মিজানুর রহমান আজহারী’ তার ফেসবুক পেজে স্টাটাসে বলেছেন, সংযোগে সংবাদে বয়কট করি ৭১ চ্যানেলকে।
সম্প্রীতি এক স্টাটাসে তিনি গতকাল মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জিয়া রহমান এর ডিবিসি নিউজে সালাম নিয়ে বিরুপ মন্তব্যের উত্তরে লিখেছেন, একাত্তর টিভির পথেই হাটছে ডিবিসি নিউজ: ইসলাম ও আলেম ওলামারাই যেন টার্গেট।
তিনি লেখেন, গণমাধ্যম বয়কটের কথা আমরা বলিনি। শুধু ৭১ টিভিকে বয়কটের কথা বলেছি। গণমাধ্যম বয়কট করলে আমরা চলবো কি করে? দেশ চলবে কি করে? বয়কটের আহ্বানও তো আমরা গণমাধ্যমের থ্রুতেই করেছি। আপনাদের নিজেদের দোষ পুরো গণমাধ্যমের উপর চাপাতে চাচ্ছেন কেন ভাই? আর আমরাইবা গণমাধ্যমকে বয়কট করতে যাবো কোন দু:খে? বয়কট করেছি সুনির্দিষ্টভাবে একটি টিভিকে। সেটা হচ্ছে ৭১ টিভি। যে কোন প্রতিষ্ঠানের নামের শুরুতে শুধু “একাত্তর” শব্দটা বসালেই সেটা গ্রহনযোগ্য হয়ে যায় না। নীতি আর সততা দিয়ে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে হয়। ৭১ কোনো পণ্য নয়, ৭১ সবার। ৭১ মানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সাম্য ও সুশাসন। যে যার সুবিধামত ৭১ বিক্রির ঠিকাদারি বাতিল করা প্রয়োজন।
তিনি সকল সাংবাদিকের কাছে অনুরোধ করে বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করুন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করুন। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহস অর্জন করুন। ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করুন। যে কোন প্রতিবেদনকে প্রান্তিকতামুক্ত রাখতে- শুধুমাত্র অসঙ্গতি বা নেতিবাচকতা নিয়ে পড়ে না থেকে ইতিবাচকতাও তুলে ধরুন।
এ বিষয়ে ডিবিসি নিউজের রাজকাহন অনুষ্ঠানে অনেক আগের একটি সাক্ষাতকারে ‘মুফতি ফয়জুল্লাহ’ বলেছেন, ইসলাম কখনো গণমাধ্যম বয়কটের পক্ষে নয়। বরং ইসলাম বিদ্ধেষীদের পক্ষে। যারা গণমাধ্যমে ইসলাম নিয়ে বিদ্ধেষ পোষণ করে । কিংবা ইসলামের প্রতি সাধারণ মানুষের কাছে ঘৃণা ছড়াতে চায় তাদের বয়কট করা উচিত। আর যারা ইসলামের পক্ষে কাজ করে ইসলাম তাদের এগিয়ে যেতে বলে। বয়ংকট নয়।
একই সাক্ষাতকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রফেসর ‘মাওলানা হুসাইনুল বান্না’ বলেছেন, গণমাধ্যম ইসলামের শত্রু নয়। বরং ইসলাম গণমাধ্যমকে প্রচারের জন্য শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।
‘শায়খ আহমাদুল্লাহ’ বলেছেন, আমরা গণমাধ্যম বন্ধের পক্ষে নয়। বরং একটি বিশেষ চ্যানেল বন্ধের কথা বলা হয়েছে। সে চ্যানেলটি ধারবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইসলাম বিদ্ধেষী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পাঠ্যপুস্তকে বাচ্চাদের ও-ওড়না বা আ-তে আল্লাহ বলাতে তারা এটা নিয়ে নোংরা উল্লাস করেছে। এটা নিয়ে তারা আপত্তি করেছে। তারা তাঁদের চ্যানেলে কখনো আল্লাহর নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না। বরং তারা বলেন, সৃষ্টিকর্তা। এ চ্যানেলটি বিশেষভাবে যখনি সুযোগ পায় ধারাবাহিকভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে। তাই আমরা সে চ্যানেলটি বয়কটের আহবান করেছি। তারা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, তাদের সাথে বসার মতো পরিবেশও তারা রাখেনি।
এ বিষয়ে স্যোশালিস্ট ‘সাইমুম সাদী’ লিখেছেন, একাত্তর টিভির মেন্টাল গেইমটা যদি ধরতে পারেন তাহলে বুঝতে পারবেন তাদের ইসলাম বিরোধিতা কোন পর্যায়ের। সারাদেশে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয় তারা সেটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাদ্রাসার দিকে আংগুল তোলার চেষ্টা করে।বছরে যদি দুই তিন হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তারা সেদিকে না গিয়ে নোয়াখালীর কোন একটা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ঘটনাকে হাইলাইটস করবে বিভিন্নভাবে। যাতে মানুষ মনে করে শুধু মাদ্রাসাগুলোয় ধর্ষণ হয়, মাদ্রাসা সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হয়। ওয়াজ মাহফিলে দু একজন ওয়ায়েজ উল্টাপাল্টা বয়ান করলে সেটাকেই হাইলাইটস করবে। এবং বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে চাইবে যে, ধর্ষণের জন্য ওয়াজ মাহফিল দায়ী।
এমডব্লিউ/