ফরহাদ খান নাঈম।।
ইসলাম কুকুর পালন নিষিদ্ধ করেছে। যে ব্যক্তি অযথা কুকুর পালন করবে, প্রতিদিন তার সৎকর্ম থেকে দুই ক্বিরাত করে সওয়াব কমতে থাকবে। তবে শিকার করা, গবাদি পশু পাহাড়া দেওয়া ও ক্ষেত-খামারি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুকুর পালন জায়েয আছে।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, গবাদি পশু পাহাড়া দেওয়া, শিকার করা কিংবা ক্ষেত-খামার পাহাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া যে ব্যক্তি কুকুর পালন করবে, প্রতিদিন তার সওয়াব থেকে এক ক্বিরাত করে কমানো হবে। মুসলিম: ১৫৭৫। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত অপর হাদিসে দুই ক্বিরাত করে কমানোর কথাও বলা হয়েছে।
কোনো কোনো ইসলামিক স্কলার বলেন, উপরোক্ত হাদীসের উপর ক্বিয়াস করে বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্যও কুকুর পালনের অনুমতি রয়েছে। শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ. বলেন, যদি কারো বাড়ি শহরের মাঝখানে অবস্থিত থাকে, এমতাবস্থায় বাড়ি পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কুকুর পালন জায়েয হবে না; অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে দুই ক্বিরাত করে সওয়াব কমানোর হুকুম বর্তাবে।
কিন্তু কারো বাড়ি যদি নির্জন কোনো এলাকায় অবস্থিত হয়, সেক্ষেত্রে বাড়ি পাহাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে কুকুর পালনের অনুমতি রয়েছে। কেননা মানুষের জানমাল গবাদি পশুর চেয়েও দামী। মাজমুঊ ফাতওয়ায়ে উসাইমিন ৪/২৪৬
তবে কুকুর নিজে নাপাক নয়; বরং কুকুরের লালা নাপাক। যদি কোনো ব্যক্তি কুকুর স্পর্শ করে কিংবা কুকুর তাকে স্পর্শ করে, তাহলে শুধুমাত্র স্পর্শের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি নাপাক হয়ে যায় না। কারণ শিকার করা, গবাদি পশু পাহাড়া দেওয়া ও ক্ষেত-খামারি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুকুর পালনের বৈধতা রয়েছে। আর এসব ক্ষেত্রে কুকুরকে স্পর্শ করার প্রয়োজন হওয়াটা একান্ত স্বাভাবিক। তাই ইসলাম এক্ষেত্রে মানুষকে ছাড় দিয়েছে।
তবে স্পর্শ করার সময় যদি স্পর্শকারীর হাত ভেজা থাকে কিংবা কুকুরের শরীর ভেজা থাকে তাহলে তার হাত সাতবার পানি দ্বারা ও একবার মাটি দ্বারা ধৌত করা আবশ্যক। অন্যথায় উক্ত ব্যক্তির হাত নাপাক থেকে যাবে। মাটি যদি দুষ্প্রাপ্য হয়, তাহলে সাবানও ব্যবহার করা যাবে। মাজমুঊ ফাতওয়ায়ে উসাইমিন ১১/২৪৬
কুকুর যদি কারো পাত্র থেকে পানাহার করে, তাহলে সেই খাবার ও খাবারের পাত্র নাপাক হয়ে যায়। এবং সেই পাত্র পবিত্র করতে হলে তাকে তা পানি দিয়ে সাতবার এবং অষ্টমবার মাটি দিয়ে ধৌত করতে হবে। তবে কোনো পাত্র যদি শুধুমাত্র কুকুরের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়, তাহলে তা পবিত্রকরণের দরকার নেই।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কুকুর কোনো পাত্র লেহন করে, তাহলে উক্ত পাত্র সাতবার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে এবং অষ্টমবার মাটি দিয়ে ধৌত করতে হবে। মুসলিম: ২৮০
কুকুরের সাথে একই পাত্রে পানাহার করা অথবা কুকুরকে চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রে শরঈ নিষেধাজ্ঞা থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক রোগের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ছত্রাক মুখের মধ্য দিয়ে মানব অন্ত্রে প্রবেশ করে ও অন্ত্রে আক্রমণ করে। এতে করে লিভার, ফুসফুস ও তলপেট সংক্রমিত হয়। এটি মাঝে মাঝে মানুষের শ্বাষকষ্টও ঘটায়।
সর্বোপরি একজন মুসলমানের পক্ষে শুধুমাত্র সৌখিনতার জন্য কুকুর পালন করে, কুকুরের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে , কুকুরকে চুমু দিয়ে ও কুকুরের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে ভালোবাসা আদান-প্রদান করে কাফের-মুশরিকদের অনুকরণ করার মাধ্যমে নিজের ইমানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা উচিত নয়।
IslamQA থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।