মোস্তফা ওয়াদুদ>
প্রতিটি দেশে, প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি ব্যবস্থায় ধর্ষণকে সব থেকে বড় এবং ঘৃণ্য অপরাধ বলে ধরে নেওয়া হয়। শুধু ধরে নেওয়াই বলবো না, ধর্ষণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও তেমনভাবেই ঠিক করা হয়। কোথাও কোথাও আবার এই বিষয়টিকে সামাজিক ব্যাধি বলেও ধরে নেওয়া হয়। এই শাস্তির ফলে নিগৃহীতার জীবনেও নেমে আসে নানা ধরনের বাধা।
পৃথিবীর সবদেশেই ধর্ষনের শাস্তি কার্যকর করা হয়। কোথাও প্রকাশ্যে গুলি করে ধর্ষককে হত্যা করা হয়। কোথাও বা আবার গণধোলাই দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয় ধর্ষকের নি:শ্বাস। আর ধর্ষকের সাজা কার্যকর যে দেশে যত বেশি শক্তিশালী সে দেশে ধর্ষণের সংখ্যাও ততটাই কম। আজ আমরা জানবো ‘বিশ্বের কোন দেশে ধর্ষকের কী শাস্তি?’ তা সম্পর্কে।
সৌদি আরব- এখানে ধর্ষণের সাজা ‘রজম’ বা প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপ করে মারা। যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষকের মৃত্যু না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। মৃত্যুর পর বন্ধ হয় ধর্ষকের উপর পাথর নিক্ষেপ। এটি খুবই ভয়ঙ্কর শাস্তি। এমন ভয়ঙ্কর শাস্তির কারণেই এদেশে ধর্ষণের সংখ্যা অনেকটাই কম।
উত্তর কোরিয়া- এদেশে ধর্ষণের সাজা শুধুই মৃত্যুদণ্ড। যদি কারো ব্যাপারে ধর্ষণের অভিযোগ আসে। তাহলে প্রথমেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।এরপর অভিযোগ প্রমাণ হলে জনতার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় ধর্ষককে।
আফগানিস্থান- পৃথিবীতে সৌদি আরবের পরে ধর্ষণের হার সবচেয়ে কম আফগানিস্তানে। সেখানে ধর্ষণের সাজা শুনলে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। কারণ, ধর্ষণ করে কেউ ধরা পড়লে সোজা মাথায় গুলি করে মারা হয় ধর্ষককে।
পাকিস্তান- বাংলাদেশের পাশের রাষ্ট্র পাকিস্তানেও রয়েছে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান। জনসম্মুখে ফাঁসি দিয়ে ধর্ষকের মৃত্যু নিশ্চিতের আইনটি পাকিস্তান সরকার চালু করেছে গত ২০১৮ সালে।
ইরান- হয় ফাঁসি, না হয় সোজাসুজি গুলি। এভাবেই এদেশে শাস্তি দেওয়া হয় ধর্ষককে। কারণ তারা মনে করে, দোষী ধর্ষিতা নন, ধর্ষকই এই কাজে আসল দোষী।
চীন- কমিউনিজিমে বিশ্বাসী এই দেশটিতে ধর্ষণের সাজা শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডই। ধর্ষণ প্রমাণ হলেই আর কোনও সাজা নয়, সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। আর তা কার্যকর করা হয় অত্যন্ত দ্রুত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত- মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ আরব আমিরাতে ধর্ষকের শাস্তি কার্যকর হয় মাত্র সাতদিনে। আর সেটা হলো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর।
মঙ্গোলিয়া- দক্ষিণ আফ্রিকার প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্র মঙ্গোলিয়ায় ব্যতিক্রমী শাস্তি দেয়া হয় ধর্ষককে। সেটা হচ্ছে ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মিশর- আরেকটি আরব রাষ্ট্র মিশর। এদেশে ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ধর্ষকের শাস্তি সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষণকারীকে হদ্দের (মৃত্যুদণ্ড) শাস্তি দেন।’ (বুখারী শরীফ)
যেহেতু এই ধর্ষণের শাস্তি রজম ও বেত্রাঘাত প্রকাশ্যে দেয়া হয়। সমাজে এর একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হয়। মানুষ প্রকাশ্যে এই শাস্তি প্রত্যক্ষ করে একটা বার্তা পায় যে, এই অপরাধ করলে এভাবেই প্রকাশ্যে ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে। শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি তো সাজা পাচ্ছেই, তার নাম-পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে ফলে এটি তার পরিবারের জন্যও অপমানজনক একটি ব্যাপার। ইসলামী শরিয়তের এই হদ (শাস্তি) বাস্তবায়ন হলে সমাজ থেকে ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মত অপরাধগুলো নির্মুল হয়ে যেতে বাধ্য।
ইসলামী ফিকহ শাত্র অনুযায়ী যে নারীকে ধর্ষণ করা হয় তিনি মোটেও দোষী হবেন না এবং তাকে কোন প্রকারের শাস্তি দেয়া হবে না। একজন নারীকে যদি কেউ ধর্ষণ করতে যায়, তাহলে তার পূর্ণ অধিকার আছে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করার। এই আত্মরক্ষা তার জন্য ফরজ। এমনকি এ জন্য যদি কোন নারী ধর্ষণে উদ্যত ব্যক্তিকে হত্যাও করেন, তাহলেও এ জন্য তিনি দোষী গণ্য হবেন না।
ইমাম ইবনুল কুদামা হাম্বলী রহ. এর আল মুগনী গ্রন্থে এসেছে, ‘যে নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করতে উদ্যত হয়েছে ইমাম আহমাদ রহ. এমন নারীর ব্যাপারে বলেন, ‘আত্মরক্ষা করতে গিয়ে সে নারী যদি তাকে মেরে ফেলে। ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, যদি সে নারী জানতে পারেন যে, এ ব্যক্তি তাকে উপভোগ করতে চাচ্ছে এবং আত্মরক্ষার্থে তিনি তাকে মেরে ফেলেন তাহলে সে নারীর উপর কোন দায় আসবে না।’ (আল মুগনী ৮/৩৩১)
এমডব্লিউ/