ফরহাদ খান নাঈম।।
ইসলামে নারীর অবস্থান কোথায়? ইসলামে একজন নারীর অধিকার কী কী? ইসলামে নারীরা কি আসলেই অবহেলিত? এই প্রশ্নগুলো এখনো কিছু কিছু মানুষের মনে উঁকি দেয়।
অধিকারের দিক থেকে ইসলাম নারী-পুরুষকে সমানভাবে বিবেচনা করেছে; তবে সঙ্গত কারণেই উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
যখন কোনো পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে, ইসলাম বলে, তখন সে তার পরিবারের জন্য কল্যান বয়ে আনে। একজন কন্যা সন্তান যদি অর্থনৈতিকভাবে পরিবারে অবদান রাখতে নাও পারে, তথাপি সে তার পিতা-মাতার জন্য জান্নাতে পথ সুগম করতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
যদি কেউ তার কন্যা সন্তানকে ভালোবাসে, তাকে দ্বীন শিক্ষা দেয় ও উপযুক্ত বয়সে সৎ পাত্রস্থ করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।"
যে পিতা তার কন্যা সন্তানকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে, সুন্দরভাবে লালনপালন করে, এবং বয়স হলে সৎ পাত্র দেখে বিবাহ দিয়ে দেয়, সেই পিতার পুরস্কার হলো জান্নাত।
অন্য একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তির দুজন কন্যা সন্তান থাকে, এবং তাদেরকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত সুন্দরভাবে লালনপালন করে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে থাকবো (এই বলে তিনি সা. তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল একত্রিত করে তুলে ধরলেন)।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারজন কন্যা ছিলো। তিনি তাদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি কখনোই তাদেরকে বোঝা মনে করতেন না। এমনকি একটি হাদীসে তিনি তার কন্যা ফাতেমা রা. এর ব্যাপারে বলেছেন- ফাতেমা আমার আমার একটি অংশ; যে তাকে কষ্ট দেয়, সে যেনো আমাকেই কষ্ট দেয়। বুখারী।
এভাবেই ইসলামে একজন কন্যা সন্তানকে কখনোই বোঝা মনে করা হয় না; বরং কন্যা সন্তানকে আখিরাতে মহাপুরস্কারের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিবাহের ক্ষেত্রেও ইসলাম একজন নারীর মতামতের যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যদি কেউ তার কন্যাকে তার অমতে বিয়ে দেয়, তাহলে সেই বিবাহ গ্রহণযোগ্য হবে না। বুখারী।
স্ত্রী হিসেবেও ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। ইসলামে যদিও স্বামীর আনুগত্যকে আবশ্যক করা হয়েছে, তবুও সাংসারিক সকল বিষয়ে একজন স্ত্রী স্বাধীনভাবে তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
একজন স্ত্রী তার স্বামীর অর্থসম্পদের আমানতদার। ইংরেজিতে একজন স্ত্রীকে হাউজওয়াইফ তথা গৃহিণী বলা হলেও, আরবিতে একজন স্ত্রীকে "রাব্বায়াতুল বাইত" বা বাড়ির রাণী বলা হয়।
ইসলাম স্ত্রীর ভরণপোষণ থেকে শুরু করে তার যাবতীয় খরচাদি বহন করার দায়িত্ব তার স্বামীকে দিয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সূরা নিসা: আয়াত ৩৪।
ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে দিয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যখন তারা (স্বামী-স্ত্রী) একে অপরের হাত ধরে, তখন আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে তাদের গুনাহসমূহ ঝরে যায়।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। সূরা নাবা: আয়াত ৮। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় ইসলামে নারী-পুরুষ কেউ কারো থেকে ছোট নয়; বরং সৃষ্টিগতভাবে তারা একে অপরের পরিপূরক।
ইসলাম নারীকে মা হিসেবে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছে। একজন মা সন্তান উৎপাদন ও লালনপালনের ক্ষেত্রে যেই সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেন, ইসলাম তাকে তার এই কষ্টের স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামে একজন মাকে এতোটাই সম্মান দেওয়া হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তিরমিযি।
ইসলাম নারীজাতিকে এতো মর্যাদা দিয়েছে যে, পবিত্র কুরআনে নারীজাতির নামে একটি সম্পূর্ণ সূরা (সূরা নিসা) রয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শহীদ একজন নারী-সাহাবী সুমাইয়া রা.। নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সর্বপ্রথম ইমান আনেন একজন নারী - উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রা.।
ইসলামই যেহেতু সর্বক্ষেত্রে নারীকে সম্মানিত করেছে, তার অধিকার নিশ্চিত করেছে, তাই একমাত্র ইসলাম অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে নারীজাতির মুক্তি ও সম্মানজনক জীবনধারণের উপকরণ।
ব্যাকটুজান্নাহ ডট কম থেকে ফরহাদ খান নাঈমের ভাষান্তর।