বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন এটা এখন আলোচনার শীর্ষে। আজকের মজলিসে আমেলার বৈঠকে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদগুলোতে আসবে নতুন মুখ। কারা পদে আসতে পারেন এটা নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ। তবে পদে যারাই আসুন তারা আগামী দিনে কী কর্মকৌশল অবলম্বন করবেন এটা নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হচ্ছে না। যেহেতু গতানুগতিক নির্বাচনের মতো এখানে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয় না এজন্য ইশতেহার প্রকাশের বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক নয়। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন তাদের উচিত অন্তত কী কর্মকৌশল অবলম্বন করবেন সে ব্যাপারে আগেই জানানো। বিশেষ করে যাদের ভোটে বা সমর্থনে নির্বাচিত হবেন তাদেরকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করা।
প্রত্যেক নির্বাচনেই প্রার্থীরা তাদের ভোটারদের কাছে সংগঠনের জন্য নিজের অবদানের কথা এবং দায়িত্ব পেলে কী কাজ করবেন সেটা জানিয়ে থাকেন ইশতেহারের মাধ্যমে। যেহেতু বেফাকের পদগুলো অতীতেও আমেলার সদস্যদের পরামর্শের ভিত্তিতে পূরণ করা হয়েছে এবারও তেমনটা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব পদে কারা আসতে পারেন এই তালিকায় অনেকের নাম রয়েছে। যদিও সবাই পরিচিতমুখ তবুও নেতৃত্বে এলে কারা কী করবেন সেই কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলে সদস্যদের জন্য নেতৃত্ব বাছাই করা সহজ হতো।
বেফাকের বিগত দিনের কয়েকটি কাউন্সিল দেখেছেন এমন একজনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেছেন, যেহেতু আমাদের বড়রা কেউ পদের জন্য নিজেরা বলেন না তাই ইশতেহার ঘোষণার প্রশ্নই আসে না। তবে তিনিও মনে করেন, ঘোষণা না করা হোক, অন্তত যারা নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন সবার আগেই কর্মকৌশল প্রণয়ন করা উচিত। সম্ভব হলে যাদের সমর্থনে দায়িত্ব নির্বাচন হবে তাদেরকে সে ব্যাপারে অবহিত করা। তাছাড়া আগে থেকে কর্মকৌশল ঠিক থাকলে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই কাজে নামা সহজ হবে।
তবে বেফাকের একটি সূত্র জানায়, বেফাকের দায়িত্বশীলরা খুব পরিকল্পনা করে কাজ করেছেন কমই। যখন যে বিষয় সামনে এসেছে উপস্থিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য বেফাকে বিগত দিনে পরিকল্পিত, গোছানো এবং সৃজনশীল কাজের পরিমাণ কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেফাকের আমেলার একজন সদস্য বলেন, ‘আমাদের এখানে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য কাজ করার চেয়ে বিভিন্ন বলয় রক্ষা, নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা এগুলোর দিকেই দায়িত্বশীলদের বেশি নজর থাকে। এজন্য এতোদিনে বেফাক যে জায়গাটিতে যাওয়ার সেখানে যেতে পারেনি।’
তবে তিনি প্রত্যাশা করেন, এবার যে নতুন নেতৃত্ব আসবে তারা আগের চেয়ে গোছালো ও পরিকল্পিত কাজ করবেন। তাদের নেতৃত্বে বেফাক গতি ফিরে পাবে, হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে এমনটা আশা তার।
প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরের মাথায় এসে অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়েছে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেফাক। বেশ কিছুদিন ধরেই বেফাকের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলছে অস্থিরতা। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির খবরও ছড়িয়েছে কয়েকবার। এই অবস্থায় নতুন যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদেরকে আগের যেকোনো দায়িত্বশীলের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে সবার আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা নিয়ে যেতে হলে তাদেরকে অতীতের মতো গতানুগতিক কাজ করলে হবে না। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে গোছালো, সৃজনশীল ও প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বেফাকের নতুন নেতৃত্ব প্রশ্নে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের সবাই যোগ্য এবং স্বীকৃত। বেফাকের জন্য অতীতের তাদের অবদানও রয়েছে। আশা করা হচ্ছে যারাই নেতৃত্বে আসুন প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি-অগ্রগতির জন্য কাজ করবেন। এতে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ভিড় শক্তিশালী হবে এবং আগামী দিনে প্রতিষ্ঠানটি কওমি অঙ্গনের আশার প্রতীকে রূপ নেবে।
-এএ