ফরহাদ খান নাঈম।।
‘নেতা’ শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘ইমাম’। সেই অর্থে দেশ ও জাতির নেতৃস্থানীয় প্রত্যেক ব্যক্তিই একেক জন ইমাম।
একজন নেতার নেতৃত্বসুলভ গুণাবলীর মধ্যে তার ব্যক্তিগত চরিত্রমাধুর্য অন্যতম। ব্যক্তিগত চারিত্রিক সুষমার সাথে সাথে বিশেষ কোনো কাজে অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারাও নেতৃত্বের একটি বিশেষ গুণ। কুরআন - সুন্নাহ’য় একজন যোগ্য নেতার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান বাতলে দিয়েছেন। একজন যোগ্য নেতা নির্বাচনের ব্যাপারেও তিনি আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিভেদে রুচির বৈচিত্র্য একান্ত স্বাভাবিক; তবে সবকিছু ছাপিয়ে এক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, নামায কায়েম করার এবং যাকাত দান করার। তাঁরা আমার এবাদতে ব্যাপৃত ছিল। সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৭৩।
উপরোক্ত আয়াতে একজন ইমাম বা নেতার প্রাথমিক ও প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, একজন নেতা নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কখনোই নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না; বরং নেতৃত্বের সকল পর্যায়ে আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশকেই সর্বাগ্রে রাখবেন।
ক্ষমতার প্রভাব থাকার পাশাপাশি একজন নেতাকে অবশ্যই জ্ঞানবান হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে (তালুতকে) (নেতা হিসেবে) পছন্দ করেছেন এবং সুন্দর শারীরিক গঠন ও জ্ঞানের প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত। সূরা বাকারা: আয়াত ২৪৭।
উপরোল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা নেতা হিসেবে তালুতকে দুটি গুণ দান করেছেন: একটি হলো জ্ঞান, আর অপরটি সুঠাম শারীরিক গঠন। এখান থেকে বোঝা যায়, একজন নেতা প্রথমে তার আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান ও মেধা ব্যবহার করে বিরাজমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নেবেন, অতঃপর নিজের প্রভাব খাটিয়ে তা বাস্তবায়ন করবেন।
এক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাব ও জ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। একজন নেতা যার শুধু ক্ষমতা আছে; কিন্তু জ্ঞান নেই, সে যেমন তার জ্ঞানহীনতার কারণে সঠিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তেমনি ক্ষমতাহীন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হলেও ক্ষমতা না থাকার কারণে তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
ক্ষমতা ও জ্ঞানের পাশাপাশি সুন্দর নৈতিকতা, ধৈর্যশীলতা, সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা, বিনয়, আল্লাহভীরুতা, সত্যবাদিতা ও সর্বোপরি সরলতা একজন যোগ্য নেতার গুরুত্বপূর্ণ কিছু গুণ।
নিজের ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত মুসলমান হিসেবে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে নেতৃত্ব চর্চা করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল (দায়িত্বশীল); এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দল তথা অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। বুখারী।
নেতৃত্ব আসলে একটি দলবদ্ধ কাজ। যোগ্য অনুসারী ছাড়া একজন যোগ্য নেতার পক্ষেও সুন্দর পরিচালনা দুষ্কর। তাই নেতা যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম অনুযায়ী তার অধীনস্থদের পরিচালনা করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই নেতার নেতৃত্ব অনুসরণ করা আবশ্যক।
কুরআনরিডিং ডট কম থেকে ফরহাদ খান নাঈমের ভাষান্তর।