মোস্তফা ওয়াদুদ: বাংলাদেশের জন্য ধর্ষণ এখন খুব স্বাভাবিক। রাস্তা-ঘাটে, ঘরে-বাইরে, স্কুলে-বিদ্যালয়ে, পাবলিক ভার্সিটিতে-সরকারি ভার্সিটিতে প্রতি নিয়তই হচ্ছে ধর্ষণ। কখনো শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বা ছাত্রী ধর্ষিত করছে। কখনো বা শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণ হচ্ছে। কখনো রাস্তার বখাটে যুবক কর্তৃক তরুণি, কখনো বা রাজনীতি করা মাস্তান ছাত্র কর্তৃক রাস্তার অবলা নারী। ধর্ষণের ঘটনা যেনো এদেশে নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার। হাত বাড়ালেই যেনো মিলে ধর্ষণের পাত্র। যাকে পাও তাকেই করো ধর্ষণ। সে কী কারো বউ না কারো মা-খালা বা বোন! সেসব দেখার টাইম কোথায়?
এদিকে বাংলাদেশে ধর্ষণের খুব কম ঘটনাতেই দোষীদের সাজা হয়। তাই ধর্ষণের সময় কাঁপে না ধর্ষকের পা। ধর্ষকের হৃদয়ে কোনো ভীতিবোধও কাজ করে না এজন্য।
সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় আজ শনিবার সিলেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সাধারণ মানুষ। এতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে বলে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন।
কিন্তু এরপরও দেশে যেনো কোনোভাবেই কমছে না ধর্ষণ নামক এ বিষবৃক্ষের আস্ফালন। কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এ ধর্ষণ? ধর্ষণ প্রতিরোধে দেশের ছাত্র নেতাদের কী কোনো ভূমিকা আছে? অথবা কিভাবে কাজ করতে পারে ছাত্র নেতারা? মোটকথা ধর্ষণ প্রতিরোধে ছাত্র নেতারা কী ভাবছেন? এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম দেশের ইসলামী ধারার রাজনীতির ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন ছাত্র নেতার সাথে।
তারা মনে করেন দেশে বিচার ব্যবস্থার দূর্বলতা ও বিচারহীনতার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন ঘৃণিত ঘটনা। এগুলো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চারটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে বলে মনে করেন ইসলামী শাসতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নূরুল করীম আকরাম। তারা বলেন, ধর্ষণ বা ধর্ষক উভয়টিই দেশীয় আইনে অপরাধ হিসেব বলা আছে। কিন্তু এর কোনো বিচার সেভাবে দেখা যায়না। এজন্য আমাদের দেশে যে প্রথমত বিচারহীনতা বা বিচারের দূর্বলতার যে সংস্কৃতি আছে সেটা সবার আগে দূর করতে হবে।
এরপর শিক্ষার্থীদের থেকেই এর প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা যেতে পারে। কারণ ‘ধর্ষক শিক্ষার্থী’কে যদি অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারে তাহলে দেশ থেকে অনেকাংশে বিদায় নিবে ধর্ষণ নামক মহামারি।
তারপর হলো ‘যেখানেই ধর্ষক সেখানেই প্রতিরোধ’ এমন একটি স্বতন্ত্র আন্দোলন করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে অন্যান্য ধর্ষকগণ সতর্ক হয়ে যেতে পারবে। এতে তারা এমন ঘৃণিত অপরাধের সাথে নিজেদের আর জড়িত রাখবে না।
সর্বশেষ ধর্ষণ প্রতিরোধে ভিকটিমকে সহায়তার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি আইনি সহায়তা প্রয়োজন হয় সেটাও করার ক্ষেত্রে ছাত্র নেতারা ভূমিকা রাখতে পারেন। সংগঠনের সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম আরও মনে করেন, যদি ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করা যেতে পারে তাহলে এদেশ থেকে অনেকাংশে ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে।
কথা বলেছিলাম ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ (আল্লামা কাসেমী অংশ) এর সভাপতি এখলাছুর রহমান রিয়াদ এর সাথে। দেশে ধর্ষণ মহামারীর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, সরকারের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মীদের বেপরোয়া হয়ে উঠা। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও লাগামহীন চলাফেরা করার কারণে শিক্ষাঙ্গণগুলোতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনাগুলো পত্রিকার পাতায় পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু ধর্ষকদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার খবর তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায়না।
বাংলাদেশ থেকে এসব ঘৃণিত ধর্ষণ প্রতিরোধ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কাজ হবে ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা ও বিচার শেষে জনসম্মুখে তাদের শাস্তি দেয়া। যদি এই একটি কাজ করা যায় তাহলে আশা করা যায় দেশ থেকে ধর্ষণ নামক মহামারি বিদায় নিবে।
এরপরও ছাত্রনেতারা ধর্ষণ প্রতিরোধে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন। তন্মেধ্যে হলো, শিক্ষাঙ্গণগুলোতে যেসব নারী শিক্ষার্থী রয়েছে তাঁদেরকে সচেতনামূলক ও আত্মরক্ষারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করা। নারী-পুরুষ সকল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে অবগত করানো। এবং এর থেকে দূরে থাকার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেসব বিষয়ে সচেতন করা। পুরুষ শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও উন্নত চরিত্র গঠন করতে শিক্ষাঙ্গণগুলোতে ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে কাউন্সিলিং করা। প্রয়োজনে প্রশিক্ষনেরও ব্যবস্থা করা। ধর্ষক ও ধর্ষণের মোকাবেলায় সর্বত্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা। সর্বোপরি ধর্মীয় শিক্ষা শিক্ষাঙ্গণগুলোতে বাধ্যতামূলক করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতে পারেন ছাত্র নেতারা। তাহলেই বন্ধ হবে ধর্ষণ। বন্ধ হবে ধর্ষকের পিশাচী মনোভাব। বন্ধ হবে সমাজে ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণ নামক ঘৃণিত এ অপরাধ।
এমডব্লিউ/