মুফতি এনায়েতুল্লাহ।।
ভারতের আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলায় মুসলমানদের পক্ষ হয়ে তাদের অবস্থান জানান দেওয়া, করোনা পরিস্থিতিতে তাবলিগের মারকাজ নিজামুদ্দিন মারকাজ নিয়ে অপপ্রচারের মোকাবেলায় সরব হওয়া, তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করা কিংবা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত ও প্রতিবাদ জানানোর কাজটি তাকে দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়।
আবার কখনও শান্তি বজায় রাখার নিমিত্তে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘আরএসএস’ প্রধান মোহন ভগবতের সঙ্গে সাক্ষাত করে ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করতে হয়।
দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রীয় ও প্রদেশের ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মুসলমানদের অধিকার, স্বকীয়তা নিয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা, দেন-দরবারের নেতৃত্ব দিতে হয়।
দাঙ্গাপ্রবণ এলাকায় বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ২০ কোটি মুসলমানদের মৌলিক অধিকার আদায় ও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিতের জন্য তাকে লড়াই করতে হয়।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে সমস্যাপীড়িত মানুষের পাশে তাকে দাঁড়াতে হয়। ভারতের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয হলো, এখন পর্যন্ত তার কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ ভারতের মুসলমানের জন্য কষ্ট কিংবা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
কে তিনি?
কে এই অবিসংবাদিত নেতা?
কে এই অভিভাবক?
তিনি সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী। শায়খুল আরব ওয়াল আজম সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সুযোগ্য সন্তান ও উত্তরসূরী।
একটি ঘটনা উল্লেখ করে লেখাটি শুরু করি। ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ। ফজরের নামাজের জামাতে শরিক হতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করলাম দারুল দেওবন্দের মসজিদে রশিদে। স্থানীয় মুসল্লি ও ছাত্ররা কেউ ফজরের সুন্নত শেষ করে কোরআন তেলাওয়াত কিংবা জিকির-আজকার করছেন। কেউ সুন্নত আদায় করছেন। স্বাভাবিক আবহাওয়া। শান্ত পরিবেশ। মসজিদে প্রবেশ করেই দেখি, সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী পায়চারি করছেন। এটা তার পুরোনো অভ্যাস। নিয়ম অনুযায়ী ফজরের জামাত ও অন্যান্য আমল শেষ হলো। নামাজের পর সফরসঙ্গী সিলেটের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গহরপুর জামিয়ার প্রিন্সিপাল ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি জহির উদ্দিন ও আমি সাক্ষাৎ করি।
মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজুর সঙ্গে সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানীর ইসলাহি সম্পর্ক। তাকে খুব ভালোভাবে চেনেন, স্নেহ করেন। বাংলাদেশ সফরে এলে মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু তার সফরসঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে তার সঙ্গে যান। তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সাংবাদিককে হিন্দিতে ‘পত্রাকার’ বলা হয়। সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী আমাদের পরিচয় জেনে অত্যন্ত আগ্রহভরে অনেক বিষয়ে আলাপ করলেন। বরকতময় ঐতিহাসিক ‘মাদানী মঞ্জিলের দস্তরখানে’ সকালের নাস্তা করালেন পরম মমতায়। নাস্তার ফাঁকে তিনি বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় চোখ বুলালেন।
হাদিসের দরস, ইসলাহি মজলিস, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সমাজসেবাসহ নানা কাজে তিনি ব্যস্ত থাকেন। তার পরও তিনি রোজ সকালে খবরের কাগজে চোখ বুলাতে ভুলেন না। নিয়মিত সংবাদও শুনেন। এটা তার রুটিন। কারণ বহু সংস্কৃতি ও ধর্মের দেশ ভারতে নেতৃত্ব দিতে হলে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকতে হয়।
তার মতো ব্যক্তিত্ব যেখানে রোজ সকালে কয়েকটি দৈনিক চোখ বুলান সেখানে আমাদের নেতাদের অনেকে বেশ গর্ব করে বলেন, আমি কখনও কোনো পত্রিকা পড়ি না, খবর শুনি না। ভাবতে অবাক হতে হয়, তারা আবার আমাদের নেতৃত্ব দেন। অথচ তিনি সমকালীন প্রসঙ্গ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কোনো খবরই রাখেন না। এর ফলে তাদের প্রদত্ত ভাষণ, বিবৃতিতে সামকালীন প্রসঙ্গের চেয়ে থাকে ভিন্ন প্রসঙ্গ। এটা নিয়ে মাঝে-মধ্যে হাস্যরসের ঘটনাও ঘটে।
সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতবর্ষে কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটা একটি সামাজিক সংগঠন। তার পরও এটা ভারতবাসীর আস্থার সংগঠন। ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জমিয়ত। সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বড় ভাই সাইয়্যেদ আসাদ মাদানীর ইন্তেকালের জমিয়তের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতে নির্বাচনের অংশ নেয় না। তবে সমসাময়িক সব ইস্যুতে জমিয়ত তাদের মত প্রকাশ করে। জনসমর্থন সৃষ্টি, প্রতিবাদ, দাবি ইত্যাদি পেশ করে। ভারতজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে রয়েছেন জমিয়তের নেতারা। কেন্দ্রীয় জমিয়তের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত মতে তারা স্থানীয়ভাবে বিধায়ক, মন্ত্রী এমনকি লোকসভার সদস্যও হন ভিন্ন ব্যানারে। তবে তাদের মূল পরিচয় জমিয়ত নেতা।
সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানীর জন্ম ১৯৪১ সালে। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কোরআনে কারিমের হাফেজ হন। হাফেজ হওয়ার পর সর্বপ্রথম খতমে তারাবির ইমামতি করেন আসামে পিতা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির উপস্থিতিতে।
তারপর দারুল উলুম দেওবন্দের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর ফার্সি ভাষার ওপর পড়াশোনা করেন। পরে ১৯৫৫ সালে তিনি আরবি পড়া শুরু করেন এবং ১৯৫৯ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তিনি দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন। দেওবন্দের স্বর্ণযুগের উস্তাদদের কাছে ইলম অর্জনের পাশাপাশি সৌদি আরবের মদিনায় থাকাকালীন সময়ে অনেক আরব বিদ্বানদের কাছেও জ্ঞান হাসিল করেন।
সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৫ সালে বিহারের প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া কাসিমিয়া গয়ায় শিক্ষক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬৯ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস এবং তৎকালীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি সাইয়্যেদ ফখরুদ্দীনের হুকুমে জামিয়া কাসিমিয়া মাদরাসা শাহী মুরাদাবাদে মুদাররিস পদে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার আহবানে তিনি মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। ১৯৯৬-২০০৮ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি তিরমিজি সানীর দরস দিচ্ছেন।
তিনি বেশ জনপ্রিয় মুহাদ্দিস। তার দরস সবার জন্য বুঝা অত্যন্ত সহজ। তিনি সহজ পদ্ধতিতে হাদিস পাঠদান করেন। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের সমসাময়িক ঘটমার বিষয়গুলোর ওপর তাত্ত্বিক দিক-নির্দেশনা করেন। দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়্যাতকে আঁকড়ে ধরার প্রেরণা ও একনিষ্ঠতার সবক প্রদান করেন দরসে। ২০১২ সালে রাবেতায়ে আলম আল ইসলামির সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য।
মাদানী মঞ্জিল পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন, এখানেই তিনি থাকেন। খুব বেশি অর্থ-বিত্তের মালিক নন, বলা চলে উচ্চ-মধ্যবিত্ত। তবে চলাফেরা এবং দিনাতিপাত করেন স্বাভাবিকভাবে। আহার কিংবা বেশভূষায় বাড়তি কোনো জৌলুস নেই। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন। বড় ভাই সাইয়্যেদ আসাদ মাদানীর নিকট বায়াত হন ও খেলাফত লাভ করেন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার অসংখ্য মুরিদ রয়েছে।
ছয় ছেলে ও চার মেয়ের জনক তিনি। ছেলেরা হলেন- মাওলানা আজহাদ মাদানী, মাওলানা আমজাদ মাদানী, মাওলানা আজহার মাদানী, মাওলানা হোসাইন মাদানী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাদানী ও মাওলানা মহসিন মাদানী। মেয়ের জামাইগণ হলেন- মাওলানা ওবায়েদ, মুফতি সালমান মনসুরপুরী, মাওলানা আদিল ও মাওলানা হাসান মাদানী ইবনে আসজাদ মাদানী। মুফতি সালমান মনসুরপুরী শাহী মুরাদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম, ভারতের নির্ভরযোগ্য মুফতি ও লেখক। তিনি সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানীর আপন ভাগ্নেও।
২০১৬ সালের এক জরিপে সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানীকে বিশ্বের সপ্তম ক্ষমতাধর আলেম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি একজন অসাধারণ বক্তা। তাকে অতুলনীয় স্পষ্টভাষীরূপে গণ্য করা হয়। ভারতবর্ষের আলেম-উলামা ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র।
এই শ্রদ্ধার কারণেই আমরা দেখি, রাবেতায়ে আলম আল ইসলামির বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি সৌদি আরবে গেলে মসজিদে হারামের প্রধান খতিব তাকে অভ্যর্থনা জানানো জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। আর ভারতে তার ডাকে কংগ্রেস, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, আম আদমি পার্টি, সিপিএম, এনসিপি ও তৃণমূলের নেতারা একটেবিলে জড়ো হন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত তার জনসভাগুলো কানায় কানায় ভর্তি থাকে।
তার পরও তিনি বিনয়ী। বিনয়ের উদাহরণ। তার বিনয়ের চিত্র আমরা দেখেছি বাংলাদেশ সফরকালে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরকালে হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন এবং তিরমিজি শরিফে দরস দেন। ওই সাক্ষাতে পিতা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির প্রিয় শাগরেদ ও খলিফা আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সালাম-মুসাফাহা শেষে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আলাপচারিতার সময় তিনি চেয়ারে না বসে বিনয়ের সঙ্গে আল্লামী শফীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলেন। এখান থেকে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় অনেক কিছু।
ভারতে তার নেতৃত্বে জমিয়তের কাজ দিন দিন বেগবান হচ্ছে। তিনি ভারতের মুসলমানদের একক রাহবর হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মুসলিম সমাজের নিরক্ষরতা দূরীকরণে তার ভূমিকা অনন্য। তিনি ১৯৯৭ সালে ‘মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ট্রাস্টের অধীনে ধর্মীয় পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। দেওবন্দের মাওলানা মাদানী মেমোরিয়াল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া মাদানী ট্রাস্টের অধীনে বহু মাদরাসা ও মক্তব পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে অনুন্নত হারিয়ানা, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশে আবাসিক মাদরাসা এবং অনাবাসিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। পাঞ্জাবে আইটিআই প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র এলাকাসমূহে মসজিদ নির্মাণ এবং অন্যান্য সমাজিক ও মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এ ট্রাস্টের মাধ্যমে।
তিনি একজন গবেষক ও সুলেখক। ১৯৮০ সালে হিন্দীতে কোরআনে কারিমের তাফসির লেখার কাজ শুরু করে দুই খন্ডে ১৯৯১ তা শেষ করেন। দুই খন্ডে বিভক্ত ফিকহে হানাফির ইকদুল ফারায়িদ ফি তাকমিলে কায়দিস শারাইদ মারুফ বি-শারহি মানজুমাহ ইবনে ওহ্বানের পাণ্ডুলিপি পরিমার্জন ও সংশোধন করে প্রকাশ করেন। হাফেজ বদরুদ্দীন আইনির নুখাবুল আফকার ফি তানকিহে মাবানিল আখবার ফি শরহে মাআনিল আছার (ত্বহাবি শরিফ)-এর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি আল আজহার থেকে সংগ্রহ করে তা সংশোধন ও পরিমার্জন করে প্রকাশ করেন। হজরত মাদানী (রহ.)-এর স্বরচিত আত্মজীবনী ‘নকশে হায়াত’ উর্দূ থেকে আরবিতে ভাষান্তরিত করেন। বুরহান শরহে মাওয়াহিবুর রহমান নামক গ্রন্থটিও পরিমার্জনের কাজ করেছেন তিনি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভা-সেমিনার ও ধর্মীয় মাহফিলে যোগদান করেন নিয়মিত। প্রতিবছর বাংলাদেশ সফর করেন। এ ছাড়া পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, জাম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, আমেরিকা, কানাডা, পানামা, বারবাডোজ, ত্রিনিদাদ, মরিশাস, ব্রিটেন ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ থেকে তিনি ভারতবাসীর পথিকৃৎ হয়েছেন কাজ ও মেধা দিয়ে। পারিবারিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি জমিয়তের কাজ ছড়িয়ে দিয়েছেন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত। তাই তো দেখা যায় কখনও আসাম, আবার হিমাচল হয়ে গোয়া, সেখান থেকে মনীপুর, বিহার, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে জমিয়ত নেতারা কাজ করছে মানবতার কল্যাণে। এর প্রভূত প্রভাব দেখা যায়, রাজনীতির মাঠে।
ইতিহাস সাক্ষী, বিগত দশকগুলোতে জাতীয় কংগ্রেস, বিভিন্ন মোর্চা ও বিজেপিসহ যারাই কেন্দ্রে ও প্রদেশে সরকার গঠন করেছে, তারা সেভাবে মুসলিম সমাজের দাবি-দাওয়া পূরণ করেননি। এ চিন্তা থেকেই চিন্তা স্থানীয় জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছেন সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দসহ ভারতের অন্যান্য মুসলিম সংগঠনগুলোকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের বিভাজন ঠেকাতে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান।
তার মতে, কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে সমাজের একটি বড় অংশ ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু মুসলিম সমাজের মধ্যে এ রকম ঘটনা খুবই বিরল। ভারতের ২০ কোটি মুসলমান ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিলে ভোটের ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলা সম্ভব। ভারতের রাজনীতিতে এটা অত্যন্ত জরুরি।
কারণ, ভারত বারবার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে উগ্রবাদীদের হাতে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় রক্ত ঝরেছে। দেশটির গণমাধ্যম বরবরাই মুসলমানদের সঙ্গে একপেশে নীতি অবলম্বন করেছে। তার পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো, ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদের সংস্কার, মাদরাসায় সহায়তা, মুসলমানদের আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন নানাজনের-গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে।
এক কথায়, ভারতের মুসলমানদের স্বার্থে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী। সাম্প্রদায়িক ট্র্যাজেডির প্রেক্ষিতে আদালতে লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাজিকভাবে লড়ছেন সমানভাবে। তার বিশ্রাম নেই, ক্লান্তি নেই। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও তার হুংকারে কাঁপন ধরে উত্তর প্রদেশ থেকে শুরু করে দিল্লির অধিপতিদের মাঝে। সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী আছেন বলেই, বিরোধ সত্ত্বেও তাবলিগের কাজ চলে নিশ্চিন্তে। হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তিনি যেমন মোহন ভগবতকে সবক দেন, তেমনি আগলে রাখেন মুসলমানদের। ভারতের মুসলমানদের জন্য তার এই প্রচেষ্টা এভাবেই অব্যাহত রয়েছে। দোয়া করি, আগামী দিনগুলোতে হাজারও ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এভাবেই তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন।
-এএ