নাকের ডগায় তাকমিল পরীক্ষা। আর মাত্র ০৭ দিন বাকি। এখন আর পুরো কিতাব গেটে প্রস্তুতি নেয়ার সময় নেই। কেননা তাকমিল পরীক্ষার সিলেবাস অনেক লম্বা! কিন্তু কথা হলো সিলেবাস লম্বা হোক বা ছোটো। ভালো ফলাফলের জন্য মেহনতের কোনো বিকল্প নেই। আর মেহনতেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। যে নিয়মে কিতাবের পাতা উল্টালে খুব অল্প সময়ে পরীক্ষায় অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। নিয়মগুলো কী কী? কোন নিয়মে প্রস্তুতি নিলে কম সময়ে ভালো রেজাল্ট অর্জন করা যাবে? জানতে চেয়েছিলাম রাজধানীর জামিয়া মাহমুদিয়া ইসহাকিয়া মানিকনগর মাদরাসার প্রধান মুফতি ও শায়খুল হাদিস মুফতি মুহাম্মদুল্লাহ সাদেকীর কাছে। শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ে তাকমিলের বুখারি কিতাবের প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন সে বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি। তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিক মোস্তফা ওয়াদুদ।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য প্রথম শর্ত হলো সারাবছর ভালোভাবে মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। এরপর হাতের লেখা সুন্দর করতে হবে। এখন যেহেতু পরীক্ষার সময় একেবারে কাছাকাছি চলে আসছে। তাই তাকমিলের বুখারি কিতাবের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নিম্মোক্ত বিষয়গুলো ফলো করা যেতে পারে। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে। সেটা হলো হাদিসের বিষয়বস্তু সব এক। নফসে হাদীস ও নফসে মাসআলা সব এক জায়গায়ই। তাই যে কোনো একটি হাদিসের কিতাব ভালো করে হল করলে অন্যান্য সকল হাদিসের কিতাব সহজ হয়ে যায়। তবে কিছু কিতাবে প্রাসঙ্গিক কিছু ভিন্ন বিষয় রয়েছে। কিতাবের হাইসিয়াতও ভিন্ন। যেমন হাদিসের কিতাবের মাঝে আবু দাউদের হাইসিয়াত ভিন্ন। বুখারি কিতাবের হাইসিয়াত আবার আরেকরকম। মোটকথা হাইসিয়াত ভিন্ন। কিন্তু হাদিসের আলোচনা প্রায় কাছাকাছি।
এবার আসা যাক বুখারি কিতাবের প্রস্তুতি নিবে কিভাবে? সে বিষয়ের আলোচনায়। বুখারি কিতাবের প্রস্তুতির জন্য কিতাবুল ঈমানকে ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। কিতাবুল ঈমানে ‘ঈমান সংক্রান্ত’ কিছু বিষয় আছে। সেগুলো ‘মালাহা ওয়ামা আলাইহা’ পড়তে হবে।
ঈমানের সংঙ্গা কী? ইসলামের সংঙ্গা কী? ঈমান-ইসলামের মাঝে নেসবত কী? ঈমানের মারিফাত কী? ঈমানের হাকিকত কী? ঈমানের মাজাহেব কী? ঈমান বসিত না মুরাক্কাব এ প্রসঙ্গে ফুকাহা এবং মুহাদ্দিসিনদের পরস্পরে ইখতিলাফ কী? প্রত্যেকের ইখতিলাফের দলীল কী? তাঁদের ইখতিলাফের বুনিয়াদ কী? এসব বিষয়ে খুব ভালো করে বুঝে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। কারণ এসব বিষয় থেকে সবসময়ই কোনো না কোনো সুওয়াল থাকে।
বুখারির কিতাবুল ঈমান হলো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটার জন্য ঈমান সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে হল করতে হবে। পরীক্ষায় সাধারণত ঈমান ও ইসলামের সংঙ্গা থেকে প্রশ্ন করা হয়। ছাত্ররা এসবে ভুল করে থাকে। তাই এ বিষয়গুলো ভালোভাবে হল করতে হবে। সেটা উস্তাদ থেকে হোক বা সংশ্লিষ্ট শরাহ থেকে।
ঈমানের পরে যে বাবগুলো আছে সে বাবগুলো হল করতে হবে। বাবের মাঝে এক হাদিসের সাথে আরেক হাদিসের মুনাসাবাত কী? বাব দ্বারা ইমাম বুখারির মাকসাদ কী? ইমাম বুখারি বাবে যে হাদিস এনেছেন সে হাদিসের সাথে বাবের মুনাসাবাত কী ? এরপর ইমাম বুখারির উদ্দেশ্যের সঙ্গে আমাদের আহনাফের মতাদর্শের যদি ব্যতিক্রম হয় তাহলে তার সঠিক জবাব কী? এসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
সুতরাং এক নম্বরে কাজ হলো হল্লে বাব বা বাবগুলো হল করা। আর বাব দ্বারা ইমাম বুখারির মাকসাদ কী? আর এ মাকসাদ দ্বারা তিনি কী ছাবেত করতে চাচ্ছেন সে বিষয়টাও ফুটিয়ে তুলতে হবে। আর বুখারি হলো একমহাসাগর। সারাবছর তাকরির শুনেও অনেক ছাত্র বুখারি ভালোভাবে বুজতে পারে না। তাহলে সে পরীক্ষায় কিভাবে ভালো রেজাল্ট করবে? পলীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য তাকে লক্ষ রাখতে হবে অতিতের প্রশ্নের দিকে। কারণ সাধারণত দেখা যায় পরীক্ষায় পাঁচটি প্রশ্নের তিনটিই আসে প্রথম থেকে। সে অধ্যায়গুলো হলো কিতাবুল ঈমান, কিতাবুল ইলম, কিতাবুত তাহারাত ও সালাত। এখন পরীক্ষার্থী ভালো ফলাফলের জন্য এ অধ্যায়গুলো ভালোভাবে হল করবে।
এরপর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্ন কোত্থেকে যে আসে সেটা অনেক সময় খোঁজেও পাওয়া যায় না। আর বাকি রইলো মাসআলা। এর জন্য তিরমিজি থেকে তাহারাত ও সালাত ভালোভাবে হল করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় একজন পরীক্ষার্থী বুখারি কিতাবে ভালো রেজাল্ট অর্জন করতে পারবে।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম