আবদুল্লাহ তামিম।।
প্রায় সময় হঠাৎ করেই মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যান্য রোগের কারণে বেশিরভাগ সময় রক্তের প্রয়োজন হয়। কখনও কখনও এমনও ঘটে যে রোগীর জন্য রক্তদানকারী ব্যক্তি না পাওয়া গেলে রোগী প্রাণ হারানের সম্ভাবনা থাকে। রক্ত দান করতে চাইলে তাকে তাৎক্ষণিক সহায়তা করার জন্য ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারেন। ব্লাডব্যাংকে রক্তের জন্য একটি কার্ড প্রয়োজন হয়। কার্ড থাকলেই দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করা যায়। এ সব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা নিয়ে ফাতোয়া প্রকাশ করেছে দেওবন্দ।
ফতোয়ায় বলা হয় ব্লাডব্যাংকের এ কার্ডের সুবিধাটি হল তিন মাসের মধ্যে, যে কোনও ব্যাক্তি প্রয়োজনে রক্ত পেতে পারে, যদি রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়, তিনি কার্ডটি দেখান এবং ব্লাড ব্যাংক থেকে যা চান তার রক্ত নিয়ে যান।
আবার কখনো ব্লাড ডোনেট করতে ক্যাম্প করে রক্ত নেয়া হয়। এসব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনার বিষয়ে ফাতোয়া দেয়া হয়।
দেওবন্দের ফতোয়ায় বলা হয় ২০১৫ সালে ভারতের কেরালায় ইসলামিক আইনশাস্ত্রের ২৪ তম সেমিনারে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ওঠে আসে।
সে ফিকহি সেমিনারে রক্তদান সম্পর্কিত কিছু ফতোয়া গৃহীত হয়েছিল, যার মধ্যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো। রক্তের ব্যাংক যেখানে লোকেরা স্বেচ্ছায় রক্ত দান করে এবং তারা ব্যাংকগুলি অভাবগ্রস্তকে বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহ করে সেখানে মুসলমানদের জন্য রক্তদান করা জায়েয। এটি মানব সেবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (তথ্যসূত্র: কিতাব আল নওয়াজিল, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ২১৫)
রক্ত সাধারণত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নাপাক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় (প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া) এক জনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা হারাম।
তাই রক্ত গ্রহণের বিকল্প নেই, এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নে লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
১. যখন কোনো অসুস্থ ব্যাক্তির জীবননাশের আশংকা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ব্যতীত বাঁচানোর কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম আরো উৎসাহ দিয়েছে।
২. রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ, অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশংকা নেই বটে, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়; এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ ও জরুরি।
৩. যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে; তখন অযথা রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা চাই।
৪. যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে না, বরং শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্য হয়; সে অবস্থায় ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক রক্তদান জায়েজ নয়।
রক্ত ক্রয়-বিক্রয়, ইসলাম কি বলে?
রক্ত বিক্রি জায়েজ নয়। কিন্তু যে শর্তের ভিত্তিতে প্রথম সূরতে রক্ত দেয়া জায়েজ সাব্যস্ত হয়েছে, ওই অবস্থায় যদি যথা রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া না যায়, তখন তার জন্য মূল্যে দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে যে রক্ত দিবে তার জন্য রক্তের মূল্য নেয়া জায়েজ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৩৮)
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তরে কোনো বিধি নিষেধ আছে?
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েজ। মুসলিম আর অমুসলিমের রক্তে কোনো প্রভেদ নেই। কিন্তু শরিয়তসিদ্ধ কথা হলো, কাফের-ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে।
কারণ তারা নাপাক ও হারাম খাদ্য গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে খাবারের প্রভাব রক্ত-মাংসে পড়ে। তাই সে ক্ষেত্রে অমুসলিমের মন্দ স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার বেশ আশংকা থেকে যায়। (এজন্য শিশুর জন্য পাপাচারী মহিলার দুধ পান করা মাকরুহ করা হয়েছে।) সুতরাং এসব ক্ষতির দিকে লক্ষ্য করে, অমুসলিমের রক্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪০)
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে রক্তদানের বিধান
স্বামীর রক্ত স্ত্রীর শরীরে, স্ত্রীর রক্ত স্বামীর শরীরে প্রবেশ করানো জায়েজ। তারা একে-অপরের জন্য অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মতো। তারা একে-অন্যকে রক্ত দিলে বিয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। বৈবাহিক সম্পর্কও যথারীতি বহাল থাকে। কেননা ইসলামী শরিয়তের সূত্র মতে, মাহরামের সম্পর্ক দুধ পানের মাধ্যমে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন। আর দুধ পানের দ্বারা মাহরামের সম্পর্ক স্থাপনের বয়স আড়াই বছর।
সুতরাং আড়াই বৎসর পর কোনো মহিলার দুধ পান করার দ্বারা যেমন মাহরাম সাব্যস্ত হয় না, তেমনি রক্ত নেওয়া ও দেওয়ার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মাহরামের সম্পর্ক তৈরি হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪০) সূত্র: দেওবন্দ অনলাইন ফাতোয়া
-এটি