ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতন চার, পাঁচ বা ছয় হাজার টাকা। দায়িত্ব তাদের মসজিদের ভেতর, বাহির, প্রস্রাব-পায়খানা, অজুখানা, মসজিদের রাস্তা ও আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। অজুখানায় পানি আছে কি না সে খবর তো অবশ্যই রাখতে হবে। এতে নূন্যতম ত্রুটি বা অবহেলা করলে চাকরিচ্যুতির গ্লানি নেওয়া মামুলি ব্যাপার।
সাধারণ ভুলের কারণে যে কারও কটূক্তি শ্রবণ করা ও কুটকৌশলের সম্মুখীন হওয়া তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অন্তর্ভুক্ত। পাড়া, মহল্লা, রাস্তার মোড় ও চায়ের আড্ডার মুখরোচক গল্পগুলি হল তাদের দোষ চর্চা। অন্যরা ক্ষিপ্ত হলেও সভাপতি, সেক্রেটারি ও মোতাওয়াল্লিকে আলাদা ইজ্জত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
খাবার হালাল হারাম যাই হোক সুদখোর ঘুষখোরের বাড়িতে দাওয়াত রাখতে হবে এবং খেতে হবে। মরহুম মা বাবার জন্য জীবনে কোন দিন আল্লাহ্ তা আলার দরবারে হাত না উঠালেও ইমাম সাহেব তার ও তার পিতা মাতার নামে আলাদা ঘোষণা দিয়ে নাম উল্লেখ করে দোয়া না করলে তো অবস্থা খারাপ।
পদস্থ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে সালাম যত উঁচু আওয়াজে হবে, চাটুকারিতা ও পদলেহন যত বেশি হবে চাকরির মেয়াদ, পদোন্নতি ও সুযোগ সুবিধা তত বৃদ্ধি পাবে।
মোটকথা সর্বস্তরের মানুষের সাথে চলার উপায় হিসেবে খোশামুদি, তোষামোদি, তেলমাজা, অপদস্থতা স্বীকার করার পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকলেই এ দায়িত্বের উপযুক্ত হওয়া সম্ভব। নতুবা আপনার মেয়াদ খুব লম্বা হবেনা। কাছাকাছি মেয়াদেই আপনাকে অপমানিত হয়ে দায়িত্বচ্যুত হতে হবে।
ধার্মিকতা কতখানি নীচে গেলে সম্মানের এ আসন সুইপারের পজিশনে যেতে পারে? মূলত ইমাম ও মোয়াজ্জিনের অর্থটা আমরা আমাদের মূর্খ সমাজ ব্যবস্থা থেকে নিয়েছি। পদবী দুইটির অনেক মূল্য রয়েছে যা অনুধাবন করতে যেয়ে জ্ঞানীরাও বিকৃতির শিকার হয়েছে।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মসজিদ মানে ঘৃণ্য পদ্ধতিতে পাঁচদশ টাকার দান গ্রহণ করা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইক বাজিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি করা, শুধু সম্পদ বা লাঠির জোর দেখে বিভিন্ন পদচ্যুত, বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাঝে পদবী বন্টন করা, পদস্থ লোকেরা পদকে পুঁজি করে অবৈধভাবে মসজিদের সম্পদ ব্যবহার করা, মানুষের মাঝে ক্ষমতার অপব্যবহার করা, কারও ক্ষেত্রে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, ইমাম মোয়াজ্জিনকে সংকীর্ণ ও কোনঠাসা করে রাখা, অসম্মানজনক বেতন ধার্য করা ও কয়েকবারে সরবরাহ করা, হালালি হারামি যে কোন স্তরের মানুষ থেকে ত্রিশ চল্লিশ টাকা হারে বেতন উত্তোলন করা ইত্যাদি বহু কিছুর নাম মসজিদ।
সামাজিক ঘৃণ্য এ বাস্তবতা অপনোদন করতে আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে। ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের দায়িত্ব ও দায়িত্বের পরিধি বিশ্লেষণ করে তাদের জন্য সম্মানজনক বেতন ভাতা নির্ধারণের বিষয়টি গনমানুষকে বোঝাতে হবে। ইমাম ও মোয়াজ্জিনগণ অস্তিত্ব বিসর্জন না দিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্ব, আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তবেই ইসলামের স্বকীয়তা ঠিক থাকবে। আল্লাহ্ তা আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
-এটি