মুফতি জাকারিয়া মাসউদ ।।
আজ মুসলিম জাতি ইসলামের সকল বিষয় নিয়েই নানা মতে বিভক্ত হয়েছে। একদল অপর দলের কাজকে যেভাবেই হোক বাতিল বলার চেষ্টা করবে। তাঁর হাকিকত তালাশ করার চেষ্টা তো দুরের কথা বরং সঠিক টাকেও ভুল প্রমাণ করার অপচেষ্টা করতে সামান্য দ্বিধা করে না।
তার বাস্তব একটি উদাহরণ হলো আল্লাহ নামের জিকির আজকে একদল মানুষ আমি বলবো শিক্ষিত নামের অবুঝ যারা পীর মুরীদির বিরোধিতা করতে যেয়ে মহান আল্লাহর জিকির কে এমন চোখে দেখে যেন তা হুনাহের কাজ। কারন একটিই তা হলো পীর সাহেব গন জিকির করেন এবং শিক্ষাদেন তাই তা নাজায়েজ হয়ে যাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ জিকিরের মাঝে যে কল্যান রেখেছেন তা যদি কেউ মনে করতো তবে সর্বদা মহান আল্লাহর নামই জপ করতো। আসুন একটু কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জিকিরের ফযিলত জেনে আসি।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো, তার প্রতি নৈকট্য-মাধ্যম অন্বেষন করো এবং তার পথে সংগ্রাম করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫)
অসিলা বা মাধ্যম গ্রহণ হলো- সমগ্র আদেশ কর্মের মাধ্যমে পালন করা। সব ধরনের নিষেধ থেকে বিরত থাকা। এক্ষেত্রে সব রকমের অনুস্মরণ ও আনুগত্য অন্তর্ভুক্ত।
জিকির ও আল্লাহর স্মরণ হলো- কল্যাণের উন্মুক্ত দ্বার, শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যম, পুণ্যার্জনের মহৎ পন্থা ও অমঙ্গল থেকে রক্ষার কারণ। কেননা, জিকির ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতকে পূর্ণতা দেয়।
আমলের ঘাটতি পূরণ করে। সওয়াব-পুণ্য বিপুল করে দেয়। গুনাহ-ত্রুটি মিটিয়ে দেয়।
জিকিরের মাহাত্ম্য, মর্যাদা ও কল্যাণের দিক থেকে এর অবস্থান বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা জিকিরকে নামাজ ও হজ্বসহ অনেকগুলো ইবাদতে ফরজ করেছেন। আর শরিয়তও সর্বাবস্থায় জিকিরের প্রতি উৎসাহিত করেছে।
জিকিরের সওয়াব ও প্রাপ্য হলো, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে এমন পুরস্কার দেবেন, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো হৃদয় তা কল্পনাও করেনি।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির" দিনের প্রথম ভাগে বলবে, বিনিময়ে তাকে দশ জন দাস স্বাধীন করার সওয়াব দেওয়া হবে। তার জন্য একশটি নেকি লেখা হবে। তার একশটি গুনাহ মাফ করা হবে। এই দোয়া সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে রক্ষা কবচ হবে। এর চেয়ে বেশি কল্যাণ আর কেউ অর্জন করতে পারবে না; তবে যে এই আমলটি বেশি করবে সেই কেবল পারবেন। ” (মুসলিম, হাদিস: ১৪১২)
জিকিরের সব চেয়ে বড় সওয়াব হলো, জান্নাত অর্জন ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। জিকির আদায়কারীকে আল্লাহ তাআলা বিপদ-দুর্বিপাক, কষ্ট-অসুবিধা ও সামগ্রিক সমস্যা থেকে রক্ষা করেন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন- فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ . لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ.
যদি তিনি আল্লাহর তসবিহ পাঠ না করতেন, তবে তাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হতো। ’ (সুরা সাফফাত, আয়াত- ১৪৩-১৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন- فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ.
.সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)
জিকিরের একটি পার্থিব লাভ হলো, জিকির আত্মা ও শরীরকে শক্তিশালী করে। ইবাদতে নিমগ্ন হতে সহায়তা করে। হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা রিজিকে বরকত দান করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নুহ আ. তার পুত্রকে বলেছেন, তোমাকে "সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি" পড়ার তাগিদ দিচ্ছি। কারণ এটি হলো সৃষ্টির সালাত, সৃষ্টির তাসবিহ। আর এটির মাধ্যমে সৃষ্টিকে রিজিক দেওয়া হয়।
(মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ৬৫৮৩) আল্লাহ তাআলা আমাদের বিপুল পরিমাণে জিকির করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রধান মুফতি কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর।
-এটি