মোস্তফা ওয়াদুদ: আস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। জবাবে বলা হয়, আপনার উপরও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। এটা মুসলমানদের ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম। এর নাম সালাম। সালাম দেয়া সুন্নাত। আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, ‘কোনো কথা বলার আগেই সালাম দাও।’ (মিশকাত শরীফ)
ইসলামী পরিভাষায় সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে মানুষের মাঝে ভালবাসা ও প্রীতিবোধ বৃদ্ধি পায়। একজনের সাথে অন্যজনের আন্তরিক মহাব্বত ও সম্প্রীতি বেড়ে ওঠে। সালাম দেয়া সুন্নাত হলেও তার উত্তর দেয়া ওয়াজিব। আর ওয়াজিব ছেড়ে দেয়া অনেক বড় গোনাহের কাজ।
যত কথা ও কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সালাম দেয়া। সালাম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের সব তিক্ততা-হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাত)।
জানার বিষয় হলো- কেউ কাউকে সালাম দিলে সালামের উত্তর নীরবে দেয়া যাবে কি? কীভাবে সালামের উত্তর দিতে হবে? সালামের উত্তর দেয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?
এর উত্তরে মুফতিগণ বলেন, সালামের উত্তর সালামপ্রদানকারীকে শুনিয়ে দিতে হবে। কেননা সালামের অর্থ হলো- আপনার ওপর শান্তি এবং বরকত বর্ষিত হোক। সুতরাং সালামের উত্তরও সুন্দরভাবে সালাম প্রদানকারীকে শুনিয়ে তার জন্য এভাবে দোয়া করা যে, আপনার ওপরও শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক। আর সালামের ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা হলো- সম্ভব হলে আরও বেশি বাড়িয়ে দোয়া করা। অর্থাৎ সালামপ্রদানকারী যত শব্দে দোয়া করেছেন তার জন্য আরও কিছু শব্দ বাড়িয়ে দোয়া করা।
আর দোয়া করা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا অর্থ-‘আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর শুনিয়ে সুন্দরভাবে আরও বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। সম্ভব হলে বেশি দোয়া করা। সম্ভব না হলে যেটুকু সালাম বা দোয়া করা হয় ন্যূনতম ততটুকু উত্তর দেয়া বা দোয়া করা জরুরি। এতে পরস্পরের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শত্রুতা দূর হয়ে যায়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
তবে কেউ যদি সালামের উত্তর নীরবে প্রদান করে তাহলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নীরবে জবাব প্রদান করার দ্বারা কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তা এমন- যেমন অনেকেই সালামের উত্তম মনে মনে (নীরবে) দিয়ে থাকে। এমনভাবে সালামের উত্তর দেয় যে, এর মাধ্যমে ভালোবাসা সৃষ্টির পরিবর্তে মনের মধ্যে বিদ্বেষ জন্ম নেয়ার অবস্থা তৈরি হয়।
কেউ কাউকে আগ্রহ নিয়ে সালাম দিল, কিন্তু আগ্রহের সঙ্গে উত্তর না পেলে কিংবা খুব নিম্ন স্বরে বা নীরবে উত্তর এলে তাতে সালাম দেয়া ব্যক্তির মনে সন্দেহ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, মনোক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিংবা ওই ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়।
সালাম দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি এভাবে নিয়মিত হতে থাকলে তা এক সময় ভুল বুঝাবুঝিতে পরিণত হয়। পরস্পর সালাম বিনিময়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সে কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে উত্তম ভাষায় সালাম ও দোয়ার উত্তর দেয়ার প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
এমডব্লিউ/