শায়খ ড. আহমদ ইবনে তালেব হুমাইদ।।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর কর এবং তোমরা আত্মসমর্পনকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমÐলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর, এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতিবন্ধন সম্পর্কে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১) মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলি শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে সে মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১)
সবচেয়ে সত্য কথা হলো পবিত্র কোরআন। উত্তম আদর্শ হলো মোহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে, দীনের নামে নব আবিষ্কৃত বস্তু। আর প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তুই হলো বিদআত। প্রত্যেক বিদআত গোমরাহি। আর প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামে যাবে। হে মুসলমানগণ! জেনে রাখ, আমল কবুল হওয়া ও এর পূর্ণাঙ্গতা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।
প্রত্যেকে নিয়ত অনুসারেই প্রতিদান পাবে। আমল সঠিক হওয়ার মাপকাঠি হলো নবীজির (সা.) নির্দেশনা। ইসলাম স্পষ্ট। ইমান আভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ইহসান ইমানের চূড়ান্ত রূপ। ইহসান হচ্ছে, তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন, যদি এমনটা সম্ভব না হয়, তাহলে মনে কর, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। জেনে রাখ, কিয়ামত আগত। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক কবরস্থ সবাইকে উঠাবেন। নিশ্চয়ই গর্ভাশয় হলো সৃষ্টিজীবের একত্রিত হওয়ার স্থান, ফেরেশতার ফুঁৎকার, ভাগ্যের ফয়সালা সেখানেই হয়ে যায়। শরিয়তের বিধিবিধান এবং এর দণ্ডবিধি স্পষ্ট। সন্দেহজনক বিষয় ঝুঁকিপূর্ণ। হারাম কাজ হলো বিপদ-মুসিবত। জবান সঠিক হওয়া এবং ইসলামের ফরজ বিধান সঠিকভাবে পালন অন্তরের সাথে সম্পর্ক। দীন হলো সৃষ্টি ও ¯্রষ্টার হক আদায় করা। পাপমুক্তি ইসলামের মাধ্যমেই হবে। আল্লাহর কাছে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।
আল্লাহ পবিত্র, উৎকৃষ্ট। তিনি পবিত্র উৎকৃষ্ট বস্তুকে কবুল করেন। নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। নির্দেশিত বিষয়ে আমল করতে হবে। অতি জিজ্ঞাসা, প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা, দলিল-প্রমাণে অযথা মতবিরোধ ধ্বংসের কারণ। সন্দেহজনক বিষয় এবং আল্লাহ রাগান্বিত হন এমন কাজ থেকে বেচেঁ থাক। দুনিয়া-আখেরাতে অনর্থক কাজ থেকেও বেচেঁ থাক। সব কাজ গুরুত্ব দিয়ে ভালোমতো কর।
যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহকে হেফাজত কর অর্থাৎ আল্লাহর বিধিবিধানের হেফাজত কর, আল্লাহও তোমাকে হেফাজত করবেন। তাঁর কাছে চাও, তিনি দেবেন। তাঁর কাছেই সাহায্য চাও, যিনি মহান, ক্ষমতাধর। জেনে রাখ, বিপদ-আপদ সবই তাকদিরে নির্ধারিত। ধৈর্যের সাথে সাহায্য আসবে। কষ্টের সাথে প্রশস্থতা আসবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৬) মনে যা চায়, তা করা যেন লজ্জাকে একদম বিদায় করে দেওয়া।
অথচ ইসলামে একথা স্বতসিদ্ধ যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, অতঃপর এর ওপর অটল থাকবে, পবিত্রতা অর্জন করবে, নিষ্কুলুষ থাকবে, সব কাজে আল্লাহর স্মরণ করবে, নামাজ পড়বে, দান-সদকা করবে, ধৈর্য ধারণ করবে, কোরআন তিলাওয়াত করবে, কোরআনের অনুসরণ করবে, এর থেকে নসিহত হাসিল করবে, সে ইমান পূর্ণ করল।
আমলের পাল্লা পরিপূর্ণ করল এবং প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করল। অন্তর আলোকিত করল, অন্তরের প্রবেশপথকেও আলোকিত করল। নিজেকে আজাদ করল এবং মহান প্রভুকে সন্তুষ্ট করল।
এ আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। সুস্পষ্ট সুন্নতগুলো আকড়ে ধরতে হবে। দীনের নামে নব আবিষ্কিৃত বিষয়াবলি থেকে বেচেঁ থাকতে হকেব। আগুনে উপুড় হওয়া জবানের ফসল। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা পরষ্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। জেনে রাখ, দায়িত্ব, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার লক্ষ্য হবে দায়িত্বশীলের (আল্লাহর) নিকট প্রিয় হওয়া, তাঁর সুনজরে আসা। তার জন্যই প্রয়োজনে দেশ ত্যাগ কর, অতিরিক্ত বোঝা বহন কর, কামনা-বাসনা মথিত কর।
তাকেই অনুসরণ কর এবং অবিচল থাক। এটাই হলো প্রকৃত সম্মান। রাস্তা পার হয়ে তার পথে আস, যিনি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল, সুন্দর। জেনে রাখ, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার কাছে যখন দোয়া করবে ও আশা রাখবে আমি তোমার পূর্বের কৃত সব অপরাধ মাফ করে দেব।
এতে আমি কোনো পরওয়া করিনা। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহ উচ্চাকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! তুমি যদি আমার কাছে কিছু গুনাহ নিয়ে সাক্ষাৎ কর এমন অবস্থায় যে, তুমি আমার সাথে শিরক করনি, তাহলে আমিও তোমার কাছে এসে তোমাকে ক্ষমা করে দেব।
২২ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি মদিনার মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী
-এটি