সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

রাশিয়ার ভ্যাকসিন কি সত্যি সফল?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা. তাসনিম জারা,

চিকিৎসক, এনএইচএস ইংল্যান্ড                                                                                                                                                এমএসসি অধ্যায়নরত, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

রাশিয়া ভ্যাকসিন কি চলে আসলো? আপনার যারা আমাকে ফলো করেন, তাদের আমি বলেছিলাম ভ্যাকসিন বা ঔষধের ব্যাপারে কোনো আপডেট আসলে আপনাদের জানাবো।

রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে এখন অনেক সংবাদ দেখতে পাচ্ছি। দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমগুলো খবর প্রচার করছে। অনেকে রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। আবার অনেকে প্রকাশ করছে সন্দেহ। আমি এ লেখায় আপনাদের কাছে পরিস্কার চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আমরা সবাই অধীর আগ্রহে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করছি। রাশিয়ার ভ্যাকসিন আমাদের সে অপেক্ষার অবসান ঘটালে ভালোই হবে। তবে তার জন্য ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও কার্যকর হতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার এ ভ্যাকসিন কি নিরাপদ ও কার্যকর। আমি তিনটি পয়েন্টে বিষয়টি পরিস্কার করে তুলে ধরবো।

প্রথম পয়েন্ট: স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা।

যে কোনো ভ্যাকসিন সেটা অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন, মডার্ণের ভ্যাকসিন, চায়না চায়নাব্রেকের ভ্যাকসিন বা রাশিয়ার ভ্যাকসিন। যে ভ্যাকসিনই হোক, সেটা কাজ করবে কিনা সেটা জানার একটা পদ্ধতি আছে। এ পদ্ধতি কারো জন্য ভিন্ন নয়। যে পদ্ধতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে স্বচ্ছতা। এ স্বচ্ছতা পালন করা হয় কয়েকটি ধাপে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ভ্যাকসিন সম্পর্কে তথ্য জার্নালে প্রকাশ করা। কেনো জার্নালে প্রকাশ করা হয়? যাতে করে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা পূঙ্খনাপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন কোথাও কোনো ক্রটি আছে কিনা? এতে ভ্যাকসিনের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি হয়। আর এ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে, অনিরাপদ ও অকার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগেই ধরা পড়ে যায়। অক্সফোর্ড, মডার্ণ তাদের ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্য জার্নালে প্রকাশ করেছে। সেটা যাচাই বাছাই হয়েছে। রাশিয়া তাদের গবেষণা এখনো প্রকাশ করেনি। তাই সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা যাচাই করতে পারছেনা যে, ভ্যাকসিন আবিস্কারে রাশিয়ার দাবিটি আসলেই সঠিক কিনা?

দ্বিতীয় পয়েন্ট: একটি ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা সেটা মানবদেহে তিন ধাপে গবেষণা করে দেখা হয়।

এ তিন ধাপের ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতার সুযোগ নেই। সেটা করলে মানুষের জীবনকে ঝুকির মুখে ফেলা হয়। রাশিয়ার দাবী হচ্ছে ভ্যাকসিনটি প্রথম দুই ধাপ পার করেছে। দাবী বলছি, কারণ তারা এ ব্যাপারে জার্নালে কিছু প্রকাশ করেনি। এ পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ছয়টি ভ্যাকসিন এই দুই ধাপ পার করেছে। রাশিয়ার এ ভ্যাকসিনটি তৃতীয় ধাপ পার করা এখনো বাকি। তুলনামুলক চিত্র‌ যদি তুলে ধরি, অক্সফোর্ড মডার্ণসহ মোট ছয়টি ভ্যাকসিন এ ধাপে আছে। কিছু ‍কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে রাশিয়ার ভ্যাকসিন থেকে এগিয়ে আছে। কিন্তু তারা রাশিয়ার ভ্যাকসিনের মতো অনুমোদন পায়নি।

তৃতীয় ধাপটি কেনো গুরুত্বপূর্ণ একটু বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন মনে করছি। এ ধাপে হাজার হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কাজ করে কিনা? মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে কিনা? সেগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই ধাপে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হয়। রাশিয়ার ভ্যাকসিনকে এ আবশ্যকীয় ধাপ পার করার আগেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অন্যভাবে যদি বলি, রাশিয়ার এ ভ্যাকসিনটি মাত্র ৭৬জন মানুষের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছে। তুলনায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন এক হাজারের বেশি মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। আর শুধু আমেরিকাতেই ৩০হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চলছে। বুঝতেই পারছেন, একটি ভ্যাকসিন ‘তৈরি’ বলার আগে কত বেশি সংখ্যক মানুষের উপরে পরীক্ষা করতে হয়? আর রাশিয়ার ভ্যাকসিনের জন্য কত অপ্রতুল পরীক্ষা হয়েছে। এ ব্যাপারে খোদ রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের সংস্থা ‘এইচএটিও’ উদ্ধেগ প্রকাশ করে সরকারকে অনুরোধ করেছে, তৃতীয় ধাপ শেষ হওয়ার আগেই অনুমোদন না দিতে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলছে, এতো অপ্রতুল তথ্য থেকে ভ্যাকসিনটি কার্যকর কিনা বলা অসম্ভব।

তৃতীয় পয়েন্ট: তাহলে কি রাশিয়ার ভ্যাকসিন আবিস্কার অসফল?

তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষার আগে বৈজ্ঞানিকভাবে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবে রাজনৈতিকভাবে সে দাবী হয়তো করা যেতে পারে। যারা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র পুতিনের কথা নির্ভর করতে চাইবেন, তারা হয়তো ভ্যাকসিনটি নিবেন। তা কার্যকর হতেও পারে আবার স্বাস্থ্যের জন্য হালকা বা মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।

আর যারা বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তাদের এখনো অপেক্ষা করতে হবে। ছয়টি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে আছে। অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে গবেষণায় এগিয়ে চলছে। হয়তো শীঘ্রই কোনো ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের সাফল্যের সংবাদ আমরা পেয়ে যাবো।

আশা করি এ কথাগুলো আপনাকে ভ্যাকসিন সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দিতে সহায়তা করেছে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ