মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী।।
বর্তমান যুগে মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ যেন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ নানা কারণে মানসিক চাপে ভোগেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং কর্মক্ষেত্রের নানা রকম জটিলতা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণেও সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ। অনেক সময় আবার অর্থনৈতিক সঙ্কট, খারাপ স্বাস্থ্য, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যুর কারণেও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।
আর মানসিক চাপ থেকেই অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হন। তাই শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা জরুরি। এমন কিছু ব্যবস্থা আছে যেগুলো অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে মানসিক চাপ কমিয়ে আনা যায়। এব্যাপারে ইসলামের আলোকে ৫টি পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
১. হতাশ হওয়া যাবে না: হতাশা থেকেই মূলত মানসিক চাপের সৃষ্টি। মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদ আসবেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিক থেকে বিপদ এসে পড়ে আমাদের ওপর। পার্থিব জীবনে বিপদে পড়ার কথা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত নং-১৫৫-১৫৬)।
এ আয়াতে কারিমা থেকে বুঝা গেল, আমাদের বিপদ আসবেই। বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও এ আয়াতে কারিমায় বলা হয়েছে। তাই মুমিনের জবনে হতাশার কোনো স্থান নেই। মুমিন হবে আশাবাদী। মহান আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে।
২. তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখা: একজন মুমিন হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। আর তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থাবান ব্যক্তিকে মানসিক চাপ কাবু করতে পারে না। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- "আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই...।" (সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ১০৭)। তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে আমাদেরকে তাকদিরের ভালো-মন্দের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরী।
৩. জাহান্নামের বিপদের কথা স্মরণ করা: মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে দুনিয়ার বিপদের তুলনায় পরকালীন জীবনের বিপদের কথা বেশি বেশি স্মরণ করা জরুরী। দুনিয়ার বিপদ-আপদ আমাদের জন্য পরকালের বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার কারণ হতে পারে। আর পরকালের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ খুবই নগণ্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- "যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।" (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত নং- ৪৬)।
৪. নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা: পবিত্র কুরআনুল কারিম মুমিনের প্রফুল্লতার অনাবিল উৎস। পবিত্র কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতে মুমিনদের মনের প্রফুল্লতা এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়। বস্তুত কুরআনুল কারিম একটি বরকতময় গ্রন্থ। মাত্র ২৩ বছরে আরব জাহানের বর্বর একটা জাতিকে সভ্যতার আলোয় বদলে দেওয়া হয়েছিলো পবিত্র কুরআনের বদৌলতে।
তাই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, সমগ্র সৃষ্টিকূলের ওপর যেমন মহান আল্লাহ তাআলার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম। তেমনি সকল বাণীর ওপর, সকল গ্রন্থের ওপর পবিত্র কুরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়। সুতরাং যাবতীয় বিষন্নতা ও মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য পবিত্র এই গ্রন্থ যতো বেশি সম্ভব তিলাওয়াত করা আমাদের কর্তব্য।
৫. ইস্তিগফার করা: মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে হবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, "অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে।" (সূরা নুহ, আয়াত নং-৭১)।
এ সম্পর্কে রাসূলে কারিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।" (সুনানে আবু দাউদ)।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
-এএ