সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ঢাকার দুই সিটিতে করোনাকালে প্রতিদিন গড়ে ৫১ ডিভোর্স

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: করোনায় গৃহবন্দি অবস্থায় গৃহবিবাদ বাড়ছে। ফলে ঘটছে বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটিতে গড়ে ৫১টি বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বাধ্যতামূলক নৈকট্যকেই দায়ী করা হচ্ছে।

বিষয়টি ‘উদ্বেগের’ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি জীবন মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ ও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে বিচ্ছেদ। আপসে অনীহা, সমাধান খুঁজে বের করার অনিচ্ছা, এমনকি ধৈর্যধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাড়ছে ডিভোর্স।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে ৫৬৩টি। আগস্টে ৫৪৫টি। সেপ্টেম্বরে ৫৪১টি। অক্টোবরে ৮২০টি। নভেম্বরে ৪৫৩টি। ডিসেম্বরে ৪৯৮টি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিচ্ছেদ হয় ৫২৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫২টি, মার্চে ৪৯২টি। এপ্রিলে অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় এ মাসে তালাকের সংখ্যা শূন্য। মে মাসে ১১৩টি, জুনে ৪৪১টি এবং জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৮৭৮টি বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৫১৪টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৬১৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪১ ও মার্চে ৪৫৫টি। এপ্রিলে কোনো তালাক কার্যকর হয়নি। মে-তে ৫৪টি, জুনে ৬৩২টি ও জুলাইয়ে ৬৫৪টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে।

দিন দিন বিচ্ছেদের এই মাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে লিঙ্গবৈষম্যকে দায়ী করেছেন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মো. মাহবুবুর রহমান। তার মতে, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে অনেক সময় পার করলে তিক্ততা নয়, বরং ভালোবাসা বাড়ার কথা। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেটা ভালোবাসা না বাড়িয়ে বরং তিক্ততা বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো লিঙ্গবৈষম্য।

লকডাউনের কারণে কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন একই সঙ্গে থাকছে। এ সময় নানা কারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতের অমিল দেখা দিচ্ছে; একে-অন্যের দোষ-ত্রুটিগুলো প্রকট হয়ে ধরা পড়ছে। অনেকে নিজেদের সময় দেওয়ার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিচ্ছে। এতে করে উভয়পক্ষই কোনো না কোনোভাবে নিজেদের ভালোবাসার অনুভূতির জায়গাগুলো হারিয়ে ফেলছে। শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। পরনারী বা পরপুরুষে আকৃষ্ট হচ্ছে। সেখান থেকেও বাড়ছে ডিভোর্স।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবীব বলেন, কেভিড-১৯ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে স্বামী-স্ত্রী গৃহবন্দিত্ব নিতে বাধ্য হচ্ছে। একে অপরকে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সব রকমের সময়ই দিচ্ছে। সম্পর্কের অনেক ডাইমেনশন থাকে উল্লেখ করে এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, একে অপরের কাছে সঙ্গীরা যখন অনেক বেশি এভেইলঅ্যাবেল হয়ে যায় তখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

কোভিডের মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক চাপটাও বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন শাহ এহসান হাবীব। তার মতে, এখন মানুষের আয় নেই। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত যারা রয়েছে তারা এতদিন একভাবে চলে এলেও হুট করে এ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে দেখা দিচ্ছে একটি বড় ব্যবধান। এই ব্যবধানটা মেনে নিতে না পারায় বাড়ছে বিচ্ছেদ।

আবার করোনার কারণে অন্য দেশের মানুষ প্রশান্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজস্ব যানবাহনে করে একটু বাইরে থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটা সম্ভব নয়। এ থেকেও ঘরবন্দি একঘেয়ে জীবনে সৃষ্টি হচ্ছে মানসিক চাপ, বাড়ছে কলহ।

শহুরে মানুষের আলাদা একটা জগৎ থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের পারিবারিক বন্ধনটা অনেক বেশি দৃঢ় হলেও শহুরে পরিবারগুলোয় তা না। গ্রামে সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ অনেক বেশি দায়বদ্ধ। সেখানে সবসময় আত্মীয়স্বজন যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে। ফলে পারিবারিক কলহের সুযোগটাও কম। যা শহুরে জীবনে দেখা যায় না। শহুরে মানুষের আলাদা একটা জগৎ থাকে। সেখানে সবাই নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করে। সেখান থেকেও বাড়ছে বিচ্ছেদের ঘটনা। সর্বোপরি মানুষের মাঝে অসহিষ্ণুতা ও কাউকে ছাড় না দেওয়ার প্রবণতাই বিয়েবিচ্ছেদের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ