শায়খ ডক্টর আব্দুর রহমান আস সুদাইস হাফি. এর মক্কা মুকাররমায় জুমায় প্রদত্ত খুতবার সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ।
খুতবা-১০ ই জুলাই
অনুবাদ- মুহাম্মদ ইশরাক
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি বিস্তারের পর অবশ্যই আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবো। সাগরের উত্তাল ঢেউ যেমন সৈকতে ফিরে আসে। এই ভাইরাস মানব জাতির উপর রোগ -ব্যাধি ও মৃত্যুর বিশাল ও মজবুত চাদর বিছিয়েছে। বিশ্ববাসী মারাত্মক বিপদ ও অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।
বর্তমানে আল্লাহ তায়ালার ফজল ও করম এবং বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহে আরোগ্যতা ও সুস্থতার হার বৃদ্ধি হতে চলেছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে প্রত্যাগমনে আমরা সকল প্রকার সতর্কতা ও সাবধনতা অবলম্বন করে চলবো। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব। প্রতিরক্ষামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদের জন্য আত্মরক্ষার হাতিয়ার গ্রহণ করো। (নিসা, ৭২) আরো বলেছেন, তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।( নিসা, ২৯) আরো বলছেন, তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। (বাকারা, ১৯৫)
আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানি। তিনি এই পবিত্র ভূমিতে ধর্মীয় ও জাগতিক সকল উপকরণ গ্রহণে প্রশংসাযোগ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রহমত বর্ষণ করেছেন এবং এই সুরক্ষিত অঞ্চল থেকে মহামারী বিতাড়নের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের তাওফিক দান করেছেন। এটি ছিলো দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক ব্যবহারিক শিক্ষা এবং বিপদের গতিপথ লক্ষ্য করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।
মহামারী ও রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে যে পথ-পন্থা ও উপায়-উপকরণ গ্রহণের প্রতি শরীয়ত থেকে উৎসাহিত হয়েছে সেগুলোই আমাদের জন্য রক্ষাকবজ। তাই জীবনের বহমানতায় পুনরায় ফিরতে চাই বাড়তি সতর্কতা। আর চাই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং সতর্কতামূলক কার্যপ্রণালীর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন।
মুসলমান ভাইয়েরা! মহামারী, দুর্যোগ ইত্যাদি আসে আবার চলে যায়। কালান্তরে এসবের কতবার যে আবির্ভাব হলো এবং বিলুপ্তি ঘটলো। আল্লাহর রহমতে এগুলোর মধ্য রয়েছে সতর্কতা সংমিশ্রিত সুসংবাদ এবং চেপে বসা বিষন্নতা থেকে মক্তি ও নাজাত। কিন্ত এই বালা- মসিবত দুঃখ- দুর্দশা এবং শোকাকুল অবস্থা থেকে উৎসারিত আল্লাহর রহমত বরকত একমাত্র ঈমানওয়ালারা অনুধাবন করতে পারে।
হে ঈমানদ্বারগণ!করোনাকে কেন্দ্র করে আমরা কত যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে কত শিক্ষনীয় বিষয়। আবার শিক্ষা নেয়ার মত কত দৃষ্টান্ত দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
এসব শিক্ষা ও পরীক্ষার শুরুতে রয়েছে তাওহীদের তালীম ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ব্যাপারে একত্ববাদের শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য। (যুমার, ৩)
দ্বিতীয় নাম্বার, সৃষ্টিকুল ও মানবকুলের মধ্যে আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণের ব্যাপারে ঈমানকে মজবুত করা এবং ইয়াকীন ও বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা।
তিন নাম্বার, আমাদের শ্বাশত ধর্মের অন্যতম মূল্যবান বিষয় হলো মানুষের মর্যাদা ও সম্মান। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি বনি আদমকে মর্যাদা দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল ৭০) সৃষ্টির ব্যাপারে সুরা শামসের ৭ নাম্বার আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, শপথ প্রাণের এবং যা তিনি সুবিন্যস্ত করেছে তারও।
সুতরাং মহামারী রোগ -ব্যাধি ইত্যাদি মোকাবেলায় ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালাগুলো দৃষ্টান্তসমৃদ্ধ,একক ও অনন্য। প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে এর সূচনা । আর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সতর্কতার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি। উদাহরণত চলমান মহামারীতে আমাদের সামনে এই নীতিমালারই যথার্থতা উন্মোচিত হয়েছে।
মুসলমান ভাইয়েরা! মহামারী, দুর্যোগ ইত্যাদি আসে আবার চলে যায়। কালান্তরে এসবের কতবার যে আবির্ভাব হলো এবং বিলুপ্তি ঘটলো। আল্লাহর রহমতে এগুলোর মধ্য রয়েছে সতর্কতা সংমিশ্রিত সুসংবাদ এবং চেপে বসা বিষন্নতা থেকে মক্তি ও নাজাত। কিন্ত এই বালা-মসিবত দুঃখ- দুর্দশা এবং শোকাকুল অবস্থা থেকে উৎসারিত আল্লাহর রহমত বরকত একমাত্র ঈমানওয়ালারা অনুধাবন করতে পারে।
হে ঈমানদ্বারগণ!করোনাকে কেন্দ্র করে আমরা কত যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে কত শিক্ষনীয় বিষয়। আবার শিক্ষা নেয়ার মত কত দৃষ্টান্ত দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
এসব শিক্ষা ও পরীক্ষার শুরুতে রয়েছে তাওহীদের তালীম ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ব্যাপারে একত্ববাদের শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য। (যুমার, ৩)
দ্বিতীয় নাম্বার, সৃষ্টিকুল ও মানবকুলের মধ্যে আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণের ব্যাপারে ঈমানকে মজবুত করা এবং ইয়াকীন ও বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা।
তিন নাম্বার, আমাদের শ্বাশত ধর্মের অন্যতম মূল্যবান বিষয় হলো মানুষের মর্যাদা ও সম্মান। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি বনি আদমকে মর্যাদা দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল ৭০) সৃষ্টির ব্যাপারে সুরা শামসের ৭ নাম্বার আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, শপথ প্রাণের এবং যা তিনি সুবিন্যস্ত করেছে তারও।
সুতরাং মহামারী রোগ -ব্যাধি ইত্যাদি মোকাবেলায় ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালাগুলো দৃষ্টান্তসমৃদ্ধ,একক ও অনন্য। প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে এর সূচনা। আর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সতর্কতার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি। উদাহরণত চলমান মহামারীতে আমাদের সামনে এই নীতিমালারই যথার্থতা উন্মোচিত হয়েছে।
চতুর্থ নাম্বার, এই মহামারী,প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্বিপাক, সমস্যা -সঙ্কট ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা- গবেষণা এবং এগুলোর পরিণাম ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করবেন এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্মত, বুদ্ধিজীবি ও গবেষক পন্ডিতবর্গ। যারা পরামর্শ, মতবিনিময় এবং পূর্বের গবেষণালব্ধ তথ্য ও তত্ত্বের ভিত্তিতে যৌথভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করবেন। স্বতন্ত্র ও এককভাবে বা প্রসিদ্ধিপ্রীতিবশত অথবা বিরোধিতা করে নয়।
সুতরাং সাধারণ কর্মী এবং রোগীদের এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ বচন উদগীরণের কোন অবকাশ নেই।
ভন্ড মিথ্যুক প্রতারক ও দালালদের কথায় কর্ণপাত করবেন না। তারা লক্ষ লক্ষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মৃতদের থেকে চক্ষু বুঁজে রেখেছে। সুতরাং আমরা সকলে সতর্ক থাকবো।সবাই সাবধান হয়ে চলবো। আমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকই স্বেচ্ছাসেবক।
মুসলিম উম্মাহ! পঞ্চম নাম্বার যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে তা হলো জনগণ এখনো নিজ দেশের অবস্থান সম্পর্কে অনবহিত। অথচ সমাজের জন্য তাদের অনেক দ্বায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে। এখনো কোনখানে এমন অঞ্চল গড়ে ওঠেনি যে ভূমিতে পতপত করে উড়তে থাকবে সহিহ আকিদার ঝান্ডা। যার বসতি ও বাসকারী মেনে চলবে কুরআন- সুন্নাহের বিধান। যেখানে রাজা প্রজার মধ্যে গড়ে উঠবে অটুট বন্ধন। দৃঢ় ও মজবুত সম্পর্ক। পারষ্পরিক কোন দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত ও বিরোধী থাকবে না। বরং সেখানে থাকবে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর কল্যাণের আহবান।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'যেন তারা কাকুতি মিনতি করে।' (আনআম-৪২) রাস্ট্র দায়িত্বশীল। সে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে যত্নবান হবো। সাবধান ও সতর্কতা অবলম্বন করে পুনরায় জীবনের বহমানতায় ফিরে আসবো। এবং সবকিছুতে ভারসাম্য বজায় রেখে চলবো।
ভয়াবহ এই মহামারী থেকে বাঁচতে হলে এই পবিত্র ভূমি মক্কা মুকাররমার আদর্শ অনুসরন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পারষ্পরিক সহযোগিতা ও সুবিন্যস্ত কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
কেননা শরীয়তের মূলনীতি হলো, প্রীতিকর বিষয় আনয়ন করা। অপ্রীতিকর বিষয় দমন করা। ক্ষতিকর বিষয় অপসারণ করা। মানুষের হেফাজত করা। তাদেরকে মহামারী ও ঝুঁকির দিকে ঠেলে না দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ' যে কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন সবার জীবনই রক্ষা করলো।'(মায়েদা, ৩২)
তাইতো এই বরকতময় নগরী অন্যান্য প্রাধান্যযোগ্য বিষয়ের চেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই অধিকতর অগ্রগণ্য করে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়ে স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতিই অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। আর হজ্ব দ্বীনের একটি নিদর্শন এবং এই নগরের জন্য সম্মানের ভূষণ।
উল্লিখিত নির্ভুল ও ব্যতিক্রম সিদ্ধান্তটি মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগতম ও সমর্থন পেয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত নিজেদের শান্তি ও স্বাস্থ্যের হেফাজতের লক্ষ্যে এই বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করা।
এ সিদ্ধান্ত কতই না উত্তম। যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তারা কতই না কল্যাণকামী। যারা এর প্রতি সাড়া দিয়েছেন তারা কতই না শান্তিকামী। শুরু ও শেষের সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। সকল দান ও প্রদানের কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়াও তাঁরই জন্য।
-এটি