আবু তালহা রায়হান
ইট পাথর আর সুরকিতে গড়া শহুরে মানুষগুলো একটু বেশি স্বার্থপর । সমাজ কাঠামোতে তাদের বিচিত্র স্বভাব পরিলক্ষিত হয় ।এরা কেউ কারো নয়।সবাই যার যার।বোবা কান্নার মতো মানুষ কেঁদে যায়।তবুও দেখার মতো কেউ নেই।সত্যি কথা বলতে এ-শহুরে জনপদের মাঝে মানবতার যে ছড়াছড়ি—তা কিন্তু কেবল লোক দেখানো মানববন্ধন, প্লেকার্ড আর ফেস্টুনে মোড়ানো।বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই।
এইত গত কাল সারিঘাট থেকে বাসে করে সিলেট যাচ্ছিলাম।দেখলাম বাসের মধ্যে ৩৫/৪০বছরের এক মহিলা নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যাবার উপক্রম। সাথে দু'জন মধ্যবয়স্ক মহিলা। সোবহানীঘাট এসে সবাইকে ডাকছে, "ভাই একটু নামিয়ে দেন না।"
দেখলাম সবাই যে যার মতো নেমে যাচ্ছে।একটুও ফিরে তাকানোর সময় নেই তাদের।বিবেকের তাড়নায় মহিলাটির কাছে যাই এবং মেডিকেল পর্যন্ত পৌঁছে দেই। বৃদ্ধা আমার দিকে বিস্ময়দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। অত:পর নীরবকণ্ঠে প্রভূর দরবারে কি যেন বলতে বলতে আমাকে বিদায় জানালেন।তার এই বিদায় চিত্র আমাকে চিন্তার সাগরে নিমজ্জিত করে।
বনার অতলগহ্বরে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি।আমি ভাবি,সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজাত মানুষ এত নিঠোর হয় কী করে!চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভুপেন হাজারিকার সেই গান, “মানুষ মানুষের জন্য,
জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না"?
ভুপেন হাজারিকা তার এ গানের মধ্যে মানবতার কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের দেশে মানবতা কথাটা শুধু গান, গল্প, প্রবন্ধ আর নেতাদের বক্তৃতায় পাওয়া যায়। এ- মানবতা আর ডুমুরের ফুল একই বিষয়, বাস্তবে যাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
বর্তমান সময়ে মানবাধিকার কর্মীরাই মানবতা দেখায় না। পুলিশের ঘুষ, উকিল এর উচ্চ ফিস আর নেতাদের লবিং ছাড়া আপনার কোনো অধিকারই রক্ষিত হবে না। যতই মিছিল করেন,মিটিং করেন, দেখবেন আপনার নেতাকে কেউ ফিটিং করে রেখেছে।
গ্রাম্যকবীর একটি গান মনে পড়েগেল, “হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা করেঙ্গা সব কচু, আসলেই তে পকেট ভরেঙ্গা"।
অনেকে বড় বড় কথা বলেন, দেশে পরিবর্তনের বন্যা বয়ে দিবেন।কিন্ত বাস্তবে দেখা যায় তাদের নিজেদেরই কোনো পরিবর্তন নেই! আমি নিজেও সেসব লোকেদের বাইরে নই৷তবে চেষ্টা করছি নিজেকে পরিবর্তন করার৷ কারণ গুণীজনরা বলেন, “আপনা পরিবর্তনে সমাজ পরিবর্তিত হয়। আসুন আমরা পরিবর্তিত হই,নববী সভ্যতায় সমাজকে রাঙিয়ে তুলি!
-এটি