মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী।।
গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ধাপে ধাপে ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ ১৫ জুন শিক্ষামন্ত্রনালয় থেকে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর ছুটি ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হল। এরকম কিছু হবে- আগে থেকেই অনুমেয় ছিল। পূর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে । আমরা একটি ধারা (কওমি) তা মেনে নেতে পারছিলাম না। প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য অনলাইন-অফলাইন সরব হয়ে ওঠেছিল। আমার ধারণা- এটি থামাতেই এবং সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করবার লক্ষ্যেই পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কৌশল অবলম্বন করে বলেছিলেন- 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।' অবশ্য তখনও বুঝা যাচ্ছিল না যে- পরিস্থিতি সহসাই স্বাভাবিক হচ্ছে। এখন চাক্ষুষ সে সময়ই আমরা অতিবাহিত করছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে বাহ্যত ক্ষতি পরিলক্ষিত হলেও তা তো সকল অঙ্গন -কওমি, আলিয়া, জেনারেল- সব ধারাতেই এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেও। আর এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতো সরকারও ভালোভাবে জ্ঞাত। এখানেই শেষ নয়- দীর্ঘ ছুটি, পরীক্ষা পেছানো, সেসন জট, চাকরির পরীক্ষা এবং বয়স ইত্যাদিতে সরকারেরও রয়েছে অনেক অনেক ক্ষতি এবং ঝামেলা। এখানে বিশেষত উল্লেখ্য যে, কওমি ধারা ব্যতীত অন্যান্য ধারায় চাকরি এবং ভর্তিতে বয়স গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই যে, এইচএসসি পরীক্ষা বিলম্বিত হচ্ছে, এতে করে পরীক্ষার্থী অনেকের জন্য এটি স্বপ্নভঙ্গের কারণও হতে পারে। কেননা, ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। অনুরূপভাবে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের জন্যেও এটি হতে পারে অশনিসংকেত; যদি না সরকার এ ব্যাপারে কোনো বিকল্প সুযোগ দেয়। কথা হচ্ছে- এ সকল কারণে তারাই সর্বাগ্রে সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কই, তারা একেবারেই নীরব এবং কাঙ্ক্ষিত নিরাপদ সময়ের জন্য চুপচাপ অপেক্ষমান। তবে কেন আমরা হতাশ হয়ে যাচ্ছি, ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছি। যদি শিক্ষাবর্ষ একবছর পিছনেও পড়ে যায় এবং এতে জাতির বৃহত্তর কল্যাণ সাধিত হয়- তবে তা কিভাবে অনুত্তম এবং অনুপযোগী বলবেন। এরুপ বলার কোনও যুক্তিপূর্ণ কারণ কি বাস্তবেই রয়েছে? আগেই বলছি- ক্ষতি সকল অঙ্গনেরই হচ্ছে। অবশ্য, তা আপেক্ষিক এবং এতে ভাবনারও যথেষ্ট খোরাক রয়েছে।
যেহেতু সরকার দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যানার্থেই এগুলো করছে, তাই আমাদেরও এসব ক্ষেত্রে সম্মত থাকাই উচিৎ এবং কর্তব্য। প্রতিষ্ঠান এবং পাঠদান বিষয়ে আমরা বিকল্প ভাবনা করতে পারি। সম্ভবত পাঠদানের ক্ষেত্রে অনলাইনই হবে সর্বোচ্চ পন্থা। এছাড়া ছাত্র শিক্ষক সবাই নিজ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন। এ সুযোগ সবাই ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগাতে পারেন। একই পাড়া-মহল্লার ছাত্র ওই মহল্লার আলেম থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ছাত্র, অভিভাবক, জনসাধারণের সাথে সার্বিক যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনকেই পুরোপুরিভাবে গ্রহণ করতে হবে। লেনদেনের জন্যে বিভিন্ন মোবাইল ব্যংকিং তো আছেই। যেহেতু অফিস খোলার অনুমতি রয়েছে, তাই অফিস খোলা রেখে শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যতীত অন্যান্য সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং এটিকে সফলভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এর বাইরে সকল ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যদি খুলে দেয়ার ওপর একমত হতে পারতেন, তাহলে সরকার হয়তো সহজেই সম্মত হয়ে যেত এবং অনুমতি প্রদান করতো। অত্যন্ত ফলপ্রসু হবে, যদি সকল ধারার শিক্ষাবোর্ডগুলো আন্তবোর্ড সম্মেলন করে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং তা সরকারের কাছে পেশ করতে পারে কিন্তু; তা কতোটা সম্ভব?
সুতরাং আমরা যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সুযোগ কামনা করছি বা এব্যাপারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি- আমরা শুধু আমাদের আলোকে নয় বরং দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা মাথায় রেখে চিন্তা করা, কথা বলাই সময়ের অপরিহার্য দাবি। আমাদের কওমি অঙ্গনের শীর্ষ দায়িত্বশীল, আলেম ও স্কলার্স সঠিক পথ ও পদ্ধতিতে গঠনমূলক আলোচনা- পর্যালোচনা করতে পারেন। অন্যান্য দেশের চিত্র, উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার ওপর চিন্তা-গবেষণা করে যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবতাপূর্ণ প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে পারেন। আর তাই হবে আমাদের পরিপক্ষতা ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক। কঠিন এ ক্রান্তিকালে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে, দৃঢ় মনোবল আর সাহসিকতায় সুগম হোক- আমাদের আগামীর পথচলা।
এর বিপরীতে যত্রতত্র যে কেউ কথা বলা, বিতর্ক সৃষ্টি করা, অযৌক্তিক চিল্লাচিল্লি করা- সমাজে, জনমনে আমাদের ঐতিহ্য আলোচনা ও প্রশংসার পরিবর্তে সমালোচনা এবং তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। যা হবে অদূরদর্শীতা সুলভ কাজ এবং সম্পূর্ণ হিতে বিপরীত।
মহান রবের কাছে অবনত মস্তকে, বিনয়াবনত হয়ে দুয়া করি-
ক্ষমা করো আল্লাহ, সুন্দর পৃথিবীটা নিরাপদ করে দাও।
বন্দিশালা থেকে মুক্তি চাই; শান্তির দুয়ার ওগো, দাও খুলে দাও।
-এএ