মাসউদুল কাদির।।
একের পর শোক সংবাদ। খুব কাছে থেকে জানতাম মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী রহ.কে। ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয় উস্তাদ মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী রহ.-এর মুখে তার নাম শুনতাম।
পরিচয় হওয়ার পরে গৌরববোধ করতাম, আমার উস্তাদের বন্ধু। একসঙ্গে পথচলা কিংবা কিছু কাজ করারও সৌভাগ্য হয়েছে। দারুণ হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত মনে হয়েছে তাকে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় তিনি সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন। একজন সরলপ্রাণ আলেমেদ্বীনকে বাংলাদেশ হারিয়েছে নিঃসন্দেহে।
বহুবিদ যোগ্যতায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ ছিলেন আবু সুফিয়ান যাকী রহ.। মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাঃ ইয়াহইয়া রহ. আবু সুফিয়ান যাকী রহ.কে নিয়ে অনেক রসাত্মক গল্পও করতেন ইসহাক ফরিদী রহ.।
আমি তাদের অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে একান্তে বসবার, আতিথেয়তা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। লাজনাতুত তালাবার সেই সামিয়ানা ভেদ করে যে আলোর মশাল তারা ধারণ করেছিলেন তাই মূলত আলেমদের বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত লাবণ্য। পরে আমরা অনেকে সাহিত্য সংগঠন করেছি তবে প্রকৃত মানুষ তৈরির কাজটা কতটুকু করেছি সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। লাজনা প্রকৃত মানুষ তৈরির কাজটা অত্যন্ত সুচারুরূপে করতে পেরেছিল। লাজনার ফসল দেখে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
শূন্যদশকের গোড়ার দিকে আমরা যখন শীলন বাংলাদেশ-এর ব্যানারে সাহিত্যসভা শুরু করি লাজনার এই বলয়ের আলেম লেখকদের অনেক
সহযোগিতা পেয়েছিলাম। প্রিয় মুশফিক উস্তাদ ইসহাক ফরিদী রহ. লেখালেখিকে খুবই উৎসাহিত করতেন। কেউ কোনো কিছু লিখলে খুবই মূল্যায়ন করতেন। রাজধানীর চৌধুরীপাড়া মাদরাসা ছিল লেখালেখির মিশন তৈরির হটস্পট।
আবু সুফিয়ান যাকী রহ.-এর মতো বিচক্ষণ আলেম লেখকদের জন্ম এ-ই কওমী অঙ্গনে হয়েছিল বলেই পরবর্তী প্রজন্ম আরও অনেক লেখক পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই।
দারুল দেওবন্দের চিন্তাধারায় চলতে পারা সৌভাগ্যের তার প্রমাণ করেছিলেন মাওলানা যাকীরা। আমি তার সঙ্গে একান্তে কথা বলেছি। দেওবন্দী আদর্শের ক্ষেত্রে কখনো কোনো ছাড় দিতে রাজী ছিলেন না তিনি। দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তার দারুণ ভালোবাসা। পাকি মানসিকতার বিরোধী ছিলেন তিনি। তার লেখনী, বক্তৃতায় যুদ্ধাপরাধবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট ছিল।
আমরা জানি, হযরত আবু সুফিয়ান যাকী সাদকায়ে জারিয়ার অনেক কাজ করেছেন। সেগুলো তার কবরকে নূরান্বিত করবে প্রতিনিয়ত। আল্লাহর কাছে সে প্রার্থনাই করি।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ, রামপুরা, ঢাকা
-এটি