আওয়ার ইসলাম: করোনা দুর্যোগের এই সময়ে দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বিরাজ করছে অর্থনৈতিক মন্দা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতেও।
যারা বিভিন্ন সময়ে মাদরাসাগুলোতে দান-অনুদান দিতেন, তাদের অর্থ আয়ের উৎসগুলো বন্ধ থাকায় তারাও মাদরাসাগুলোতে অর্থ দিতে পারছেন না। তাই বিভিন্ন মাদরাসার মতো আশুলিয়ার জামিয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম মাহমুদিয়া মাদরাসাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
এ নিয়ে মাদরাসার অর্থনৈতিক মন্দার কথা তুলে ধরে মুহতামিম মাওলানা মুফতী মাসুম আহমাদ ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য মাওলানা মুফতী মাসুম আহমাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস টি তুলে ধরা হলো-
দেখতে দেখতে দুই বছর পেরিয়ে গেলো। সময়ের চাকা অনবরত ঘুরছে। তার কাজ ঘোরা, সেতো ঘুরবেই।
জামিয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম মাহমুদিয়া (মাদরাসা)। একটি নাম, একটি ইতিহাস।
মরহুম ও বর্তমান মহান দুই বুজুর্গের বরকতি নামে চালচুলোহীন অবস্থায় ছোট্ট মাদরাসাটির যাত্রা আরম্ভ হয়েছিলো। শুরুর দিন থেকেই নুরানি মকতব (প্রি প্রাইমারি) থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত যার পরিধি। দুরুদুরু মনে পথ চলা শুরু করেছিলাম। প্রথম সবক শাইখুল হাদিস ফক্বিহুল উম্মাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা. -এর বরকতি হাতে। শেষ সবকও একই ভাবে।
ঢাকার উত্তরের বারান্দা বলা হয় আশুলিয়াকে, তারই এক গহীন কোন গোমাইল গ্রামে মাদরাসার অবস্থান। একাধিকবার গিয়েও খুঁজে বের করা দুষ্কর, আল্লাহর উপর ভরসা করে সেখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীনের এই বাতিঘর।
ছাত্র সংখ্যা গেলো শিক্ষাবর্ষে ছিলো পাঁচশো। নতুন শিক্ষাবর্ষে আরো বাড়তে পারে; যদিও যারা আছে তাদেরই নাওয়াখাওয়া ঘুম ঠিকঠাক জোটা কঠিন। বাঁশ টিনের ঘরগুলো ছাত্র-শিক্ষকদের নিজ হাতে বানানো।তাই বোধহয় খানিকটা মায়া জন্মে গেছে। কেউ ছেড়ে যায়না। প্রায় সবাই আবাসিক।
শিক্ষক স্টাফ ২৫ জন। বেশিরভাগ শিক্ষক স্টাফ মাদরাসার জন্মলগ্ন থেকেই আছেন। রাতদিন নববী আদর্শ শেখা শেখানোয় সদা তৎপর সবাই। সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়।
সীমাবদ্ধতার কোন অন্ত নেই। এর ভিতর দিয়েও প্রথম বছর ১০ জন এবং দ্বিতীয় বছরে ১৫ জন ছাত্র দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করলো।
টানাটানির সংসার,। তা সত্বেও ক্বওমি মাদরাসার ঐতিহ্যমতে শুরু দিন থেকে অসহায় দরিদ্র মেধাবীদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিং চালু আছে। একশো পাঁচজন মেধাবী এতীম অসহায় ছাত্রের তিনবেলা খাবার, কিতাব-পত্র সব এই লিল্লাহ-ফান্ড (পুওর ফান্ড) থেকে ব্যবস্থা করা হয়।
দ্বীন দরদী অতি আপন কিছু বন্ধুবান্ধব কর্তৃক প্রদত্ত যাকাত, ফিতরা, সদাক্বা, মানত ইত্যাদি এই ফান্ডের উৎস।
তবে বৎসরান্তে বরাবরই লিল্লাহ খাতে বেশ কিছু ঋণ চেপে যায়, যেটা রমজান মাসে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বন্ধুদের সুদৃষ্টিতে আর অবশিষ্ট থাকেনা।
করোনা দূর্যোগে এবার এমন এক পরিস্থিতিতে রমজান মাস পার হচ্ছে, কারো সাথে কারো না আছে সাক্ষাৎ, আর না ফোনে কাউকে কিছু বলতে পারছি!
এর মাঝে বলতে খানিকটা ইতস্তত লাগছে বলে। আল্লাহ মহান, তিনি ঋণ মুক্তির কোন একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবেন! পরিচালনার দায়িত্বটা অধমের কাঁধে থাকায় নানান টেনশন এমনিতেই এসে ভর করছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি উত্তরণে দু'আ পাবো মনে করে, সোশ্যাল মিডিয়ার কথা মাথায় এলো। তাই এলোমেলো অগোছালো কিছু কথা এখানেই শেয়ার করলাম।
মাদরাসাগুলো দ্বীনের বাতি, এগুলো আলোকিত করে রাখা সকল মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। সংকট আসবে চলেও যাবে, মুমিন ঈমানী পরীক্ষায় সফল হবে এটাই কাম্য। পরিশেষে মাদরাসা, ছাত্র-শিক্ষক ও সর্বপরি সবার জন্য সার্বিক কল্যানের দু'আ চেয়ে দু'আ করে শেষ করছি।
লেখক: প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস, জামিয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম মাহমুদিয়া, আশুলিয়া, ঢাকা।
ইমাম-খতিব, চেয়ারম্যান বাড়ি জামে মসজিদ, বনানী, ঢাকা। ০১৭১১৯৪৬৪৬৩।
-এটি