মাসউদ আহমাদ।।
আমার বন্ধু হাসান বলেছিল, সমতল পৃথিবীর ধারণায় মানুষ এর প্রান্তে গিয়ে মহাশূন্যে পড়ে যেতে পারে। মূলত কথিত মহাশূন্যের অস্তিত্বই নেই। নিরেট আকাশ ঘিরে রেখেছে পৃথিবীকে। জমিনবাসীর এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
পৃথিবী হলো জমিন। বারবার কোরআনে তা-ই বলা হয়েছে। পৃথিবী কোনো গ্রহই নয়৷ গ্রহ বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। জমিন এবং আকাশের চাঁদ, সূর্য ছাড়া সবই তারা।
বিস্তীর্ণ জমিনের কিয়দংশই আমাদের দেখানো হচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানের সক্ষমতা অনুযায়ী জমিনের বহুবিস্তৃত অংশের মানচিত্র থেকে আমাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আমরা এমন একটা গোলাকার পৃথিবীতে মজেছি, যেটি শুধু তত্ত্ব।
গোলাকার পৃথিবীর ধারণায় সিজ্জিনের এই ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না যে, তা আসলেও সপ্ত জমিনের নিচের কিছু। সপ্ত জমিনের তলায় জাহান্নামের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়। ইয়াজুজ-মাজুজ জাতিদ্বয়ের অবস্থান সম্পর্কে গোলাকার পৃথিবীর ধারণায় অবিশ্বাস তৈরি হয়।
তাবারানির বর্ণনায় রয়েছে, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. বলেন, ‘আমি ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “ইয়াজুজ এক জাতি আর মাজুজ এক জাতি।
এদের প্রত্যেকের ভেতরে আবার চার লক্ষ জাতি বিদ্যমান। এদের একজন মারা যাওয়ার পূর্বে এক হাজার ঔরসজাত সশস্ত্র সন্তান রেখে যায়। ইবনে আব্বাস রা. বলেছিলেন, জমিনকে ছয় ভাগে ভাগ করা হলে পাঁচ ভাগ ইয়াজুজ-মাজুজের দখলে। কাতাদা রহ. তাদের বসবাসকৃত অঞ্চলকে চব্বিশ লক্ষ ফারসাখ বর্ণনা করেছিলেন, যা ছিল সেই সময়ের সাধারণ মানুষের বসবাসকৃত অঞ্চলের দশ গুণ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব গোলাকার পৃথিবীতে নেই। আমরা কি ধরে নেবো তাদের অস্তিত্ব অন্য এক পৃথিবীতে? নাহ। পৃথিবী সমতল ও অনেক বিস্তৃত আর এ পৃথিবীতেই উক্ত জাতিদ্বয়ের বসবাস রয়েছে।
বিভিন্ন হাদিসে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীকে সমতল হিসেবে জানিয়েছেন। পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলোতে পৃথিবীকে সমতল, বিস্তৃত ও স্থির বলা হয়েছে এবং একইভাবে বিস্তৃত বলা হয়েছে আকাশকে। কোরআনের সমতল জমিনের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানের চশমা চোখে দেওয়া মানুষেরা সবসময় আমাদের সক্ষমতা বিবেচনা করেন আর আকাশের বিস্তৃতির বিষয়ে এই সক্ষমতার কথা ভুলে যান। সাহাবাগণ বিশ্বাস করতেন, গোলাকার গম্বুজের মতো আকাশ সমতলে বিছানো পৃথিবীর ওপর নিরেট ছাদ হিসেবে রয়েছে।
আকাশ আমাদের দৃষ্টিসীমায়। আমাকে হাসান বলেছিল, গোলাকার পৃথিবীকে ঘিরেই আকাশ রয়েছে এবং তা পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরে। আদতে এমনটা হলে আল্লাহ পাক মানুষকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশে কোনো ত্রুটি বা, ফাটল দেখার প্রসঙ্গ তুলতেন না।
الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ ہَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ ﴿۳﴾
তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোনো ফাটল দেখতে পাও কি?—সুরা মুলক, ৩।
গোলাকার পৃথিবী, মহাশূন্য—এসবের ধারণা ব্যাবিলন থেকে এসেছে। অভিশপ্ত ব্যাবিলনের জাদুবিশ্বাস আর অধুনা বিজ্ঞানের এই মহাবিশ্ব কখনোই ইসলামের সৃষ্টিতত্ত্বকে সমর্থন করে না। আল্লাহ পাকের ছয় দিনে এ জগৎ সৃষ্টিকে সন্দেহে ফেলে। বিগব্যাং তত্ত্বে মহাবিশ্বের শুরুতেই মহাশূন্য বিদ্যমান, অথচ আল্লাহ পাক আগে জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং জমিন থেকে আলাদা করেছেন আকাশকে; তিনি সাত আকাশ বানিয়েছেন, তারপর জমিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন, আকাশের বিপরীতে এ জমিনের নিচে দ্বীপের মতো আরও সাত স্তর সৃষ্টি করেছেন।
ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ٭ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ فَسَوّٰىہُنَّ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ ؕ وَ ہُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿٪۲۹﴾
তিনিই সে সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সব বিষয়ে অবহিত।—সুরা বাকারা, ২৯।
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ وَّ مِنَ الۡاَرۡضِ مِثۡلَہُنَّ ؕ یَتَنَزَّلُ الۡاَمۡرُ بَیۡنَہُنَّ لِتَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ۬ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ قَدۡ اَحَاطَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عِلۡمًا ﴿٪۱۲﴾
আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পারো যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত।—সুরা তালাক, ১২।
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّہَارَ یَطۡلُبُہٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِہٖ ؕ اَلَا لَہُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের ওপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি, যা তাঁর আদেশের অনুগামী। শুনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ বরকতময়, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।—সুরা আরাফ, ৫৪।
-এটি