শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাদরাসা খোলার সিদ্ধান্ত নিবে বেফাক; অফিস খুললে সহযোগিতা পাবেন শিক্ষকরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>

দুই মাসের অধিক সময় হয়ে গেল মাদ্রাসাগুলো বন্ধ। যায়যায়দিন অবস্থা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের পরিবারে। করোনার কঠিন এই মুহূর্তে মাদরাসার আয় বন্ধ হওয়ায় আটকে আছে শিক্ষকদের মাসিক প্রদেয়। ভিন্ন আয়ের উৎস না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন দ্বীনি শিক্ষার অতন্দ্র প্রহরীরা।

অন্যদিকে কবে মাদরাসা খুলবে, এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অনিশ্চিত। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রকার আলোচনা হয়নি।

কওমি মাদ্রাসাগুলোর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে চাচ্ছি। এর আগে এই আলোচনা তোলা যাচ্ছে না। সুতরাং ঈদের পরে মাদরাসা খুলছে, এমন খবর সত্য নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া এটি মানব স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়।

এভাবে মাদ্রাসা যদি আরো কয়েক মাস বন্ধ থাকে তাহলে আগামী দিনের কওমি মাদ্রাসা-শিক্ষকদের করুন অবস্থা এখনই আঁচ করা যাচ্ছে। ভিন্ন কোন আয়ের উৎস না থাকায়, ইতিমধ্যেই চরম অর্থনৈতিক সংকটে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো আরও কিছু দিন বন্ধ থাকলে তৈরি হতে পারে সংকটাপন্ন অবস্থা।

এদিকে বেফাকের পূর্বঘোষিত তহবিলের অগ্রগতি নেই। অফিস খোলার আগ পর্যন্ত তারা কোন প্রকার সহযোগিতা করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।

এ সম্পর্কে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, বেফাকের অফিসিয়ালি সকল কার্যক্রম বন্ধ। অফিসে জনবল নেই। তাই অফিস খোলার আগে আমরা এ বিষয়ে কিছুই করতে পারছি না। এছাড়া অফিস খোলার বিষয়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তহবিল গঠনের পর ভেবেছিলাম কিছুদিনের মধ্যে হয়তো সীমিত পরিসরে অফিস খোলার অনুমতি দিবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সকল অফিস বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

করোনার কঠিন এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের জীবন কিভাবে কাটছে?

ঢাকার একটি মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা কামরুল আহসান। অধ্যাপনার কুড়ি বছরে বেতন পাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। স্বল্পআয়ের এই স্যালারি থেকে সঞ্চয়ের সুযোগ ছিলনা। তিন সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের পেছনে ব্যয় হতো বেতনের পুরোটাই। তার স্ত্রী টিউশনি থেকে যে টাকা পেতেন সেটাও ঢালতে হতো সংসারে।

মাওলানা কামরুল আহসান আমাদেরকে বলেন, দু মাস ধরে বেতন আটকে আছে। বাসা ভাড়া দিতে পারছিনা। সহধর্মিনীর আয়ও বন্ধ। সকাল-দুপুর-রাত ডাল ভাত চলছে। দুদিন পূর্বে চাল ডাল ও শেষ হয়ে যায়। মুদি দোকানি বাকি দিতে রাজি নন। কঠিন অর্থনীতিকেই পরিস্থিতিতে তিনিও হয়তো সংকটে আছেন। আমাকে বাকি দিবেন কিভাবে?

জীবনে কারো কাছে হাত পেতে কিছু চাইনি। ২০ বছর অধ্যাপনা করেছি। কিভাবে মানুষের কাছে হাত পাতি, বলুন তো!" বলছিলেন মাওলানা কামরুল আহসান।

মাওলানা কামরুল আহসান একজন নন। তার মতো অসংখ্য কামরুল আহসান মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারো অবস্থা হয়তো তার চেয়েও বেশি খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় আছে কি?

-ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ