মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক।।
একুশ শতকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগ ভয়াবহ এক এক অদৃশ্যমান বিপদের মধ্যে সারাবিশ্বে দিনাতিপাত করছে। বিশ্বে মহামারী কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় স্থবির হয়ে আছে প্রত্যেকটি জনপদ। সারা বিশ্বে লাশের মিছিল হচ্ছে। মৃত্যু আজ ঘরের দরজায় এসে কড়ানাড়ছে। ঘর থেকে বের হলে মনে হয় মৃত্যু এসে গ্রাস করবে। বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবুও চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ ব্যর্থ। বিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা শত চেষ্টা করেও করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারছে না। কমছে না মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন লাশ হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ অন্যদিকে রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে অচল হয়ে খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন এবং বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ কর্ম হারিয়ে বেকার। ফলে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।
কোভিড-১৯ চীন উৎপত্তি হয়ে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কঠিন আঘাত হেনেছে। মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের পাশাপাশি স্বল্পন্নোত এবং নিন্ম আয়ের দেশগুলোর ওপর আঘাত হেনেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে ঘোষিত ও অঘোষিত লকডাউন চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। ঘর হলো সবচাইতে নিরাপদ জায়গা। কিন্তু অনেক মানুষ ঘরে থাকার পরেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মেটানোর দুঃচিন্তা তাদের কে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা। করোনার মহামারিতে সবচাইতে দুঃচিন্তাগ্রস্থ হলো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। ধনী-গরীব, রাজা- প্রজার ফারাক জানে না নোভেল করোনা ভাইরাস। করোনায় গরিবের স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাও।
বাংলাদেশে নিন্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচাইতে বেশি। দেশের ক্রান্তিকালে এই দুই শ্রেণির মানুষের দুঃখ দুর্দশা সবচাইতে বেশি। নিন্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সারা বছর কাজ থাকেনা। যারা দিন আনে দিন খায় তাঁদের হাতে আয় বা সঞ্চয় থাকে না। বছরের নির্দিষ্ট কিছু মাস কাজ করার পর সারা বছর ঘরে বসে বসে খেতে হয়। সঞ্চয় শেষ হলে পেটের তাগিদে আবার কাজে নামতে হয়।
ধার দেনা করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হয়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে নিজেদের অভাব অনটনের কথা প্রকাশ করার মত কোন উপায় ও থাকেনা। কিন্তু তাদের কপালে বাড়ছে-দুশ্চিন্তার ভাঁজ। লোক চক্ষুর অন্তরালে নিরবে নিভৃতে নির্জনে অশ্রু বিসর্জন দিতে হচ্ছে তাদের। করোনার চেয়ে ভয়ংকর যন্ত্রণা হলো পেটের ক্ষুধা। যেটা নিবারণের জন্য প্রতিনিয়ত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের লড়াই করতে হয়। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় তারা করোনার ভয়ে ভীত নন। ক্ষুধার জ¦ালা মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছে বলতে ও পারছেনা। আবার অনেক জনপ্রতিনিধি ও তাদের সেভাবে কোন খোঁজ নিচ্ছেন না।
অপরদিকে কষ্টে আছে সমাজের পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, ছোটখাটো ব্যবসায়ী, স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক, বেসরকারী শিক্ষক, কিন্ডার গার্ডনের শিক্ষক, প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরীরত ব্যক্তি, বিভিন্ন বেসরকারী ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকসহ সমাজের আরো অনেক ব্যাক্তি বর্গ। যারা সরকারি ত্রাণ সে তো দূরের কথা। দলীয় কিংবা মুখচেনা না হলে তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমার স্ব চক্ষে দেখা যারা বর্তমানে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারাও ত্রাণ পেয়েছে এমনকি এর মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকুরিজীবিও। আবার আমি দেখেছি দিনমজুরের ঘরবন্দী জীবন থেকে বাঁচবার ও দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার আর্তনাদ। কৃষক, কামার, কুমোর, জেলে, শ্রমজীবী মানুষদের রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে সঠিক ত্রাণ না পাওয়া এবং অনাহারে জর্জরিত ছোট্ট শিশুটিকে খেতে দিতে না পারা মায়ের করুণ আর্তনাদ।
দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালে কাজ করার মত পরিবেশ বিরাজমান নেই। আর কতদিন ঘরে বসে কাটাতে হবে তা কেউ বলতে পারেনা। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। নিজস্ব আয় দিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতেই সব শেষ হয়ে যায়। সঞ্চয় করার মত কিছুই থাকেনা। যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইয়ের অধিক স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও অন্যান্য সদস্যসহ যাদের পরিবার, তাদের বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। যাদের কাজ থাকেনা তাদের তিনবেলা খাবার ও জোটেনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসন অসহায় দুঃস্থ মানুষদের হাতে সরকারি সহযোগিতা তুলে দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করেছে মধ্যবিত্ত, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের তালিকা তৈরি করে তাদের হাতে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিতে। অসহায় দুঃস্থদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সমাজের উদার মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষ মানবতার ডাকে অসহায় দুঃস্থদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। রাতের আধাঁরে প্রশাসন ও সমাজের দানবীর মানুষ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে সহযোগিতা করছে। যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তারা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা ও চক্ষু লজ্জার ভয়ে কোন সাহায্য সহযোগিতা হয়তবা গ্রহণ করতে পারছে না। এ সকল মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের তালিকা দূর্নীতিমুক্ত ভাবে তৈরি করে সরকারি সহযোগিতা সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয় তাহলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ও উপকৃত হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক
-এটি