মাওলানা খালেদুজ্জামান।।
মাওলানা আব্দুল লতীফ নেজামী রহ.। অনেক ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। যখন অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতেন কেমন যেন আনমনা হয়ে যেতেন। আমরা চাতক পাখীর ন্যায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম।
বড়দের সংগ্রামী জীবনেতিহাস শুনে খুব উজ্জীবিত হতাম। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতাম। কখনো বিরক্ত হতেন না। একদিন নোয়াখালী টাওয়ারের দিকে ইশারা করে বললেন, এই টাওয়ারে প্রতিদিন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব রহ. এর কাছে এসে বসতাম। মাগরিবের পর উনার ওখানে যে কোনো আন্দোলন বা ইস্যুতে আমরা সবাই একত্রিত হতাম। নিয়মিত বুট, মুড়ি, আর চায়ের আসর বসত। উনার দিকনির্দেশনায় আমরা কর্মপন্থা নির্ধারণ করতাম।
মূলত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. আমার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। তিনিই আমাকে রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ ময়দানে নিয়ে আসেন। তার সবচেয়ে বড় একটি গুণ আমি দেখেছি তিনি কারো দোষত্রুটি বলতেন না। বরং আমরা কারো ব্যাপারে অভিযোগ বা অনুযোগের চেষ্টা করলে তিনি সেটার সুন্দর জবাব দিতেন।
শায়খুল হাদীস রহ. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. মাওলানা উবায়দুল হক খতীব সাহেব রহ. মুফতী আমিনী রহ. সম্পর্কে কত ঘটনা আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু কারো ব্যাপারে তাকে কোনোদিন একটা অনুযোগ করতে শুনেনি।
সরাসরি উনার ব্যাপারে চাউর হওয়া কিছু বিষয় নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম। উনার ঔদার্য ও মহানুভবতা দেখেই আসলে আমি এই দুঃসাহস পেয়েছিলাম ।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেখলাম উনি এটার কোনো জোড়ালো প্রতিবাদ না করে খুব শান্তভাবে বললেন, "বাবা আমি মাযুর।" আমরা সাধারণত দেখি সরাসরি কাউকে তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি সেটা অস্বীকার করে অন্য সহকর্মীর কাঁধে চাপিয়ে দেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা বা অপচেষ্টা করেন। কিন্তু এই প্রবণতা আলহামদুলিল্লাহ উনার মধ্যে দেখিনি।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এর স্মারকের কাজেই উনার সঙ্গে সরাসরি পরিচয়। প্রথম দিন থেকেই তিনি অত্যন্ত সদালাপের মাধ্যমে আপন করে নেন। লেখালেখির কিছু পরামর্শ দেন। আমার বর্তমান কাজকর্ম শুনে খুব খুশী প্রকাশ করলেন। নিজের জন্য না জাতির জন্য লেখালেখি চর্চা করার উপদেশ দিয়েছিলেন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এর নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে তার সমস্ত রচনা ও পান্ডুলিপিগুলো যুগোপযোগী করে ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার তাকাদা দিয়েছিলেন।
স্মারকের কাজে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছিলেন। কার কার কাছে গেলে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ এর সম্পর্কে ভালো লেখা পাবো সেটার একটা তালিকাও করে দিয়েছিলেন। অনেক কষ্ট করে উনারপত্র ফাইলপত্র খুঁজে জাতীয় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহীম-এর নাম্বার সংগ্রহ করে দেন। বললেন, এই নাম্বারে ফোন দিয়ে আমার কথা বলবেন, উনি চমৎকার একটি লেখা দিবে। আলহামদুলিল্লাহ তিনি একটি চমৎকার লেখাও দিয়েছিলেন।
এভাবে আরও বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এরপরও পরামর্শের জন্য কয়েকবার তার অফিসে গিয়েছি। সর্বশেষ কথা ছিলো আমরা যোগাোযোগ করে সময় নিয়ে স্ট্যান্ড ক্যামেরাসহ যাবো। তিনি আমাদের বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকার দিবেন। কিন্তু সে সুযোগ আর হলো না। আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ ক্ষমার চাদরে আবৃত করে জান্নাতের সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করুন।
লেখক, মুহাদ্দিস- জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া-ঢাকা ও বিভাগীয় সম্পাদক- মাসিক মদিনা।
-এএ