সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। দিন দিন বেড়েই চলছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এরমধ্যে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো খুলে দেয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শোনাচ্ছেন নানা আশঙ্কার কথা। বিশেষজ্ঞদের বড় একটি অংশ বলছেন, এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের একমাত্র ঔষধ শারীরিক দূরত্ব ও সচেতনতা।
অবশ্য বহির্বিশ্বের গবেষণামূলক নানা প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছেন, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে শুধুমাত্র শারীরিক দূরত্ব যথেষ্ট নয়। ইউমেনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া প্রয়োজন।
কারণ করোনা ভাইরাসের এখনো কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। কবে আবিষ্কার হচ্ছে ভ্যাকসিন, কতটুকু কার্যকর হবে, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে -বিষয়গুলো জানা নেই কারো।
এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রশাসন ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নিচ্ছেন। যেহেতু এর শেষ কেউ জানেন না, তাই নিশ্চিত অর্থনৈতিক ধ্বস বা বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচাতে আমেরিকা, ইতালি, সুইডেন, তুরস্ক, পাকিস্তান, কাতারসহ পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশগুলো অর্থনৈতিক এবং কৃষি উৎপাদন চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এবং কোন কোন দেশ সীমিত পরিসরে চালুও করেছেন।
বাংলাদেশের শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। দীর্ঘদিন শিক্ষা থেকে দূরে থাকায় শিক্ষার্থীদের মনে অনীহা তৈরি হতে পারে। অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিবেন।
এছাড়াও অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে -একথা বলা যায় বিনা দ্বিধায়।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষা সচিব মুফতি আশরাফুজ্জামান মনে করেন, গোটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখে।
তিনি বলেন, শুধু মাদ্রাসার কথা আমরা বলব না। সরকারকে বাধ্য হয়ে সবকিছু খুলে দিতে হচ্ছে। সংক্রমণের তীব্র সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দিয়েছে। একটা দেশের অর্থব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে পড়তে দেয়া যায় না।
হোমকোয়ারেন্টিনের বিষয়টি মাদ্রাসায় যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব বলে মনে করেন এ শিক্ষা সচিব। তিনি বলেন, মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হলে ছাত্ররা সারাক্ষণ মাদ্রাসায় থাকবে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায় না। সুতরাং মাদ্রাসা খুলে দিলে দেশের কোন ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করে করে মাদ্রাসায় ঢুকাবো।
পরীক্ষার খরচ বহন করবে কে?
এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সরকার যথেষ্ট শক্তিশালী। সরকার চাইলে মাদ্রাসাগুলোকে এ সহযোগিতা করতে পারে। আর সেটি সম্ভব না হলে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করাতে যথেষ্ট।
তবে পরীক্ষা করিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় ঢুকানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন লেখক ও চিন্তক সৈয়দ শামসুল হুদা। তার মতে, "বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এতটা অগ্রসর নয়। যাদের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তারাও পরীক্ষা করাতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের শরনাপন্ন হলে কবে পরীক্ষা করা হবে -এ বিষয়টিও জানা যায় না। একজন সচিব পরীক্ষার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। সেখানে আর কি বলব?"
তিনি বলেন, সবকিছু আজ না হোক কাল স্বাভাবিক করে দিতেই হবে। এভাবে অচলাবস্থায় দেশ চলে না। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
স্বেচ্ছাসেবাধর্মী সংগঠন লাইট টুমোরোর নির্বাহী পরিচালক ও জামিয়া দারুল উলুম উলাইলের ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি আফসার মাহমুদ জানালেন তার মাদ্রাসার শিক্ষকদের দুরবস্থার কথা। তিনি বলেন, "অলরেডি তিন মাস গত হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অবস্থা কী হবে?"
"সুতরাং, যেকোনো মূল্যে মাদ্রাসা খুলে দেওয়া দরকার। এছাড়া কোন উপায় নেই। আমরা সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে চাই। আশা করছি আমাদের প্রক্রিয়াটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অন্তরায় হবে না।"
উল্লেখ্য, ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠা খোলা হবে কিনা বিষয়টি এখনো জানানো হয়নি শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে। তবে কেউ কেউ বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে কিছু জানা যায়নি।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম