ফরহাদ খান নাঈম
তারা হলেন সেই পাঁচজন মহিয়সি নারী যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারিমে আলোচনা এসেছে। কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা এঁদের প্রশংসা করেছেন। তবে এঁদের মধ্যে শুধুমাত্র মারিয়াম আ. কেই পবিত্র কুরআনে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে; অন্যদেরকে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে সম্বোধন করা হয়েছে।
১. হাওয়া আ.
হাওয়া আ. কে আদম আ. থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম আ. এর স্ত্রী। আর হাওয়া আ. ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নারী যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবীতে মানবজাতির বংশবৃদ্ধির সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। তিনি হলেন সমগ্র মানবজাতির মা।
হাওয়া আ. এর জীবন থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহ তা'য়ালার ক্ষমা প্রার্থনা করা। একজন মুমিন আর কাফেরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো মুমিন সর্বদা আল্লাহ তা'য়ালার ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তাঁর দয়া চায়। আদম আ. ও হাওয়া আ. এর জীবনী আল্লাহ তা'য়ালার অনুপম ক্ষমাশীলতা ও সীমাহীন দয়াশীলতার প্রমাণ বহন করে।
হাওয়া আ. কে পবিত্র কুরআনের ৭ নং সূরার ২৩, ২৭ ও ১৮৯ নং আয়াতে, ৩৬ নং সূরার ৬ নং আয়াতে, ৩০ নং সূরার ২০ নং আয়াতে এবং ৪ নং সূরার ১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২. উম্মে মূসা আ.
উম্মে মূসা আ. মানে হলো মূসা আ. এর মা। তিনি মিসরে ফিরআউনের রাজত্বকালে মূসা আ. কে জন্ম দেন যখন ফিরআউন মিসরে জন্ম নেওয়া সকল পুং নবজাতককে হত্যা করার আদেশ জারি করেছিলো। তিনি আল্লাহ তা'য়ালার আদেশে শিশু মূসা আ. কে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেন; এবং আল্লাহ তা'য়ালা পরবর্তীতে তাকে পুনরায় তার মায়ের সাথে মিলিয়ে দেন।
উম্মে মূসা আ. আল্লাহ তা'য়ালার উপর অবিচল আস্থা স্থাপনের দিক থেকে পৃথিবীর সকল নারীর জন্য এক মহান আদর্শ। তার জীবন থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, তৎক্ষণাৎ বুঝে না আসলেও সবসময় আল্লাহ তা'য়ালার পরিকল্পনা মেনে নেওয়া ও তাঁর রহমতের আশা রাখা।
উম্মে মূসা আ. কে পবিত্র কুরআনের ২০ নং সূরার ৩৭ থেকে ৪০ নং আয়াতে ও ২৮ নং সূরার ৭ থেকে ১৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া আ.
তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ফিরআউনের স্ত্রী ছিলেন আছিয়া আ.। তিনি দরিয়ার পারে শিশু মূসা আ. কুড়িয়ে পান ও তাকে ফিরআউনের কাছে নিয়ে আসেন। যেহেতু আছিয়া আ. নিঃসন্তান ছিলেন, তাই তিনি শিশু মূসা আ. কে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে ফিরআউনকে অনুরোধ করেন। এবং আল্লাহ তা'য়ালার ইচ্ছায় মূসা আ. আছিয়া আ. এর কাছেই লালিতপালিত হন।
পরবর্তীতে মূসা আ. নবুয়াত লাভ করার পর যখন লোকদেরকে আল্লাহ তা'য়ালার একত্ববাদের দিকে আহ্বান করেন, তখন আছিয়া আ. মূসা আ. এর আনিত ধর্মে ঈমান আনেন।
আল্লাহ তা'য়ালার উপর ঈমান আনার কারণে অন্যান্য মানুষের মতো তিনিও ফিরআউন কর্তৃক সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হন। দুনিয়ার সবধরনের সুখ-শান্তি ও বিলাসিতার মধ্যে থেকেও আছিয়া আ. কখনো আল্লাহ তা'য়ালা থেকে বিমুখ হননি; বরং তিনি আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির জন্য সকল বিলাসিতাকে বিসর্জন দেন।
ঈমানের প্রশ্নে একজন নারী হয়েও কী করে অত্যাচারী বাদশাহ'র সামনে দৃঢ় থাকা যায় আছিয়া আ. এর জীবনী তার উত্তম দৃষ্টান্ত। তার জীবনী থেকে পৃথিবীর সকল নারীর জন্য রয়েছে আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দেওয়ার এক সুমহান শিক্ষা।
আছিয়া আ. কে পবিত্র কুরআনের ২৮ নং সূরার ৭ থেকে ৯ নং আয়াত ও ৬৬ নং সূরার ১১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. মূসা আ. এর স্ত্রী
মূসা আ. এর স্ত্রী ছিলেন একজন বুদ্ধিমতী নারী। তিনি জানতেন কী করে একজন অপরিচিত পুরুষের সাথে রক্ষণশীল আচরণ করা যায়। সেসময় মূসা আ. একেবারে নিঃস্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান যুবক হিসেবে বিবাহ করতে রাজি হয়ে যান।
পৃথিবীর সকল নারীর জন্য তার জীবনী থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি হলো, স্বামী হিসেবে একজন পুরুষের চারিত্রিক গুণাবলীকে প্রাধান্য দিতে হয়, তার ধন-সম্পদকে নয়। অপরিচিত পুরুষের সাথে রক্ষণশীল আচরণ করে কী করে নিজের মর্যাদা রক্ষা করা যায় - এটাও তার জীবনীর একটি অন্যতম শিক্ষা।
মূসা আ. এর স্ত্রীকে পবিত্র কুরআনের ২৮ নং সূরার ২২ থেকে ২৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. মারিয়াম আ.
মারিয়াম আ. ই একমাত্র নারী যাকে পবিত্র কুরআনে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও অবতীর্ণ করা হয়েছে।
তিনি ছিলেন ঈসা আ. এর মা। কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই তিনি ঈসা আ. কে জন্ম দেন। এটিও তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে।
গর্ভকালীন যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে সাহায্য করার জন্য পাশে কেউই ছিলো না। আল্লাহ তা'য়ালার উপর ভরসাই ছিলো তার একমাত্র অবলম্বন। তার জীবনী থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, মানুষের তীব্র সমালোচনার মুখেও আল্লাহ তা'য়ালার উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রাখা।
মারিয়াম আ. কে পবিত্র কুরআনের ৩ নং সূরার ৪২ থেকে ৪৩ নং আয়াতে, ৪৫ থেকে ৪৭ নং আয়াতে এবং ২১ নং সূরার ৯১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও তার নামে পবিত্র কুরআনে একটি সূরাও রয়েছে।
এছাড়াও নবীজী সা. এর স্ত্রীগণসহ পবিত্র কুরআনে আরো অনেক নেককার নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাদের জীবনালেখ্য অধ্যয়ন করে পৃথিবীর সকল নারীই পেতে পারে সুপথের দিশা।
ইসলামিক ইনফরমেশন.কম থেকে অনুদিত।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম