মাওলানা আজিজুর রহমান বিন আব্দুল মাজীদ।।
মুসা আ. এর যুগে বনি ইসরাইলের লোকেরা দুর্ভিক্ষের শিকার হলো। সবাই একত্রিত হয়ে এ ব্যাপারে মুসা আ. এর শরণাপন্ন হলো। তারা বলল, হে কালিমুল্লাহ্! আপনি আপনার প্রভুর দরবারে দোয়া করুন যাতে তিনি আমাদের ওপর থেকে দুর্ভিক্ষ সরিয়ে তার রহমত নাজিল করেন।
মুসা আ. সবাইকে নিয়ে একটি খোলা প্রান্তরে গেলেন। সবার মধ্যে দুর্ভিক্ষের ছাপ। ঠোঁট-মুখ শুকানো, চুল এলোমেলো। সঙ্গে পশু-পাখি, শিশু-বৃদ্ধ সবাই রয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। মুসা আ. তাদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাত উঠালেন।
বললেন, হে আল্লাহ্! তোমার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করো, ফসল উৎপন্ন করে দাও! দুর্ভিক্ষের হাত থেকে আমাদেরকে রহমত করো!
কিন্তু তারা যত দোয়া করছে তাপমাত্রা তত বাড়ছে। মুসা আ. কাকুতি-মিনতি করে বললেন, হে আল্লাহ্! আমাদের উপর রহমত করো, আমাদের উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করো!
আল্লাহ্ বললেন, আমি তোমাদের উপর বৃষ্টি কীভাবে বর্ষণ করব? তোমাদের সঙ্গে এমন এক হতভাগা আছে যে ৪০ বছর ধরে একাধারে আমার অবাধ্যতা করে যাচ্ছে। তুমি ঘোষণা করে দাও, সএই হতভাগা যেন তোমাদের এখান থেকে চলে যায়, তাহলে আমি তোমাদেরকে বৃষ্টি দেব। একজন অবাধ্য লোকের কারণে সবাই অনাবৃষ্টিতে ভুগছে।
মুসা আ. উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন, এখানে কে এমন আছো যে ৪০ বছর ধরে আল্লাহর নাফারমানিতে লিপ্ত? এখান থেকে বেরিয়ে যাও। তোমার কারণে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং পশু-পাখি পর্যন্ত কষ্ট করছে; দুর্ভিক্ষে ভুগছে।
ওই গোনাহগার ডানে-বামে তাকালো। দেখলো কেউ বের হচ্ছে না। সুতরাং সে বুঝে গেল আমাকেই বেরিয়ে যেতে হবে।
সেই লোক মনে মনে বলল, আমি যদি এখন সবার সামনে বেরিয়ে যাই তাহলে সবাই আমাকে চিনে ফেলবে। সারা জীবন তারা আমাকে এর জন্য ভৎর্সনা করবে। আবার এখানে বসে থাকলেও রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হবে না। সবাইকে এর জন্য কষ্ট করতে হবে। লোকটি তার চেহারা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে চুপি চুপি দোয়া করলো, হে আল্লাহ্! আমি বিগত ৪০ বছর ধরে তোমার নাফারমানিতে লিপ্ত।
তুমি আমাকে ধরনি, অবাধ্যতার সুযোগ দিয়েছো। আমি আমার অপরাধ এবার বুঝতে পেরেছি। আমি তোমার কাছে আমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমার দোয়া কবুল করো!
তার দোয়া তখনও শেষ হয়নি এর মধ্যেই আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। মুসা আ. খুবই বিস্মিত হলেন। তিনি আল্লাহ্ তায়ালাকে বললেন, হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছ এজন্য আমরা তোমার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে কেউ বেরিয়ে যায়নি তবুও তুমি বৃষ্টি দিয়েছ। এর কারণ কী?
আল্লাহ্ বললেন, যার কারণে তোমাদের ওপর বৃষ্টিপাত বন্ধ রেখেছিলাম এখন তার কারণেই বৃষ্টি দিয়েছি।
মুসা আঃ আবেদন করলেন, সেই সৌভাগ্যবান তওবাকারী লোকটি কে? আল্লাহ্ বললেন, হে মুসা! সে যখন আমার অবাধ্যতা করত আমি তখনও তার নাম সবার কাছে গোপন রেখেছি, এখন সে তওবা করে অনুশোচনার অশ্রু ফেলে আমার দরবারে ফিরে এসেছে, আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে, এখনও আমি তার নাম গোপন রাখব। তার নাম উল্লেখ করে এখন আমি তাকে তোমাদের কাছে অপদস্থ করতে চাই না। (আত-তাওয়াবিনা লি ইবনি কুদামা)
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম