সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
করোনা দুরবস্থায় দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাচ্ছে সরকার -এমন পূর্বাভাস মিলেছে গ্রহণযোগ্য সূত্র থেকে। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
সে উপলক্ষে দেশের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম পাঠকমহলে একটি অনলাইন জরিপ পরিচালনা করেছে। আওয়ার ইসলামের অফিসিয়াল পেইজ ও গ্রুপে প্রায় এক লক্ষ রিচ হয়েছে জরিপটি। তাতে অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রায় দেড় হাজার পাঠক।
পাঠক মহলের কেউ কেউ মনে করছেন, দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই কওমি শিক্ষকরা সাময়িক সহযোগিতা পেতে পারেন।
আওয়ার ইসলামের পাঠক মুহাম্মদ জুলফিকার লিখেছেন, আমরাও দেশের জনগণ। অন্যরা অনুদান গ্রহণ করে এটা তাদের অধিকার। আমাদেরও আমাদের অধিকার গ্রহণ করা উচিত। যদি আমরা আমাদের নিজেদেরকে এদেশের জনগণ মনে না করি তাহলে ভিন্ন কথা। আর এটা সাময়িক অনুদান। স্থায়ী কোনো বিষয় নয়।
অন্যরা মনে করছেন, কওমি মাদরাসা ৮ মূলনীতির সঙ্গে সরকারি অনুদান গ্রহণ করা যায় না।
নূর হোসেন সবুজ লিখেছেন, কওমি মাদরাসা যুগ যুগ ধরেই সাধারন জনগণের টাকায় পরিচালিত হয়ে আসছে। দারুল উলুম দেওবন্দের ৮ মূলনীতিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে কোন অবস্থাতেই সরকারি অনুদান গ্রহণ করা যাবে না। সুতরাং কওমি মাদরাসার নীতি-আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি অনুদান গ্রহণ করার উপায় নেই।
হাফেজ শহীদ লিখেছেন, আমরা বাঙালি। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের পাওনা আছে। সুতরাং সেই অধিকারের ভিত্তিতেই আমরা অনুদান গ্রহণ করতে পারি। সরকারের উচিত সবার দিকে সমান দৃষ্টি রাখা।
পরিস্থিতি অনুযায়ী যার যার মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন অনেকে।
লিয়াকত আলী মাসুদ লিখেছেন, যারা নিতে চায় না তাদেরকে আজিমতের উপর আমল করতে দেওয়া হোক। আর যারা আপদকালীন সময়ে বিপন্ন, তারা যদি রুখছতের উপর আমল করতে চায় তাহলে তাদেরকেও বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।
কেউ কেউ মতামত প্রকাশ করেছেন এভাবে -বেফাকের নিজস্ব তহবিল থেকে অনুদান গ্রহণ করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। কিন্তু সে পরিমাণ টাকা না থাকলে সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেয়া যায় না।
আব্দুল্লাহ নোমান মনে করেন, সরকারের অনুদান না নিয়ে বেফাকের নিজস্ব তহবিল বা অন্য কোনভাবে আলেমদের অনুদান দেওয়া হোক। শুধু মূল নীতি মেনে "অনুদান নেবো না" বলে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সংকটের এই মুহূর্তে অনেকের বাসাতেই খাবার নেই। তাদের টাকা প্রয়োজন। সুতরাং বেফাক ও সমাজের প্রভাবশালী আলেমরা সাময়িক অসুবিধায় পড়া আলেমদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। আর যদি তারা এগিয়ে আসার সামর্থ্য না রাখেন, তাহলে, সরকারি অনুদান গ্রহণে বাধা দিতে পারেন না।
ফয়জুল্লাহ খান বলছেন, নাগরিক হিসেবে সকলের সহযোগিতা পেতে পারে। তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক হিসেবে না নেয়া উত্তম।
প্রসঙ্গক্রমে ওলামায়ে কেরামের হজের বিষয়টি টেনে এনে মীর সালমান লিখেছেন, হজের সময় সরকারি টাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক আলেম হজ পালন করলেন। তখন কোথায় ছিল আপনাদের বিরোধিতা। বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
মুফতি সাঈদ রহমানি লিখেছেন, যে সমস্ত মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না, অনাহারে-অর্ধাহারে শিক্ষকরা দিন কাটাচ্ছে তাদের জন্য নেয়া উচিত। আর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে, তাদের নেয়ার দরকার কী?
বেফাকের তহবিল গঠন করতে যদি এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের কাছে হাত পেতে চাইতে হয়, তাহলে এর চেয়ে সাময়িক সরকারি অনুদান গ্রহণ করাটা উত্তম।
মোহাম্মদ রাফি লিখেছেন, সাধারণ মানুষের কাছে ভিক্ষা না করে সংকটের এই মুহূর্তে সরকারি অনুদান গ্রহণ করা অনেক ভালো। বর্তমানে সাধারণ মানুষও খুব একটা ভালো নেই। অন্যান্য সময়ের মতো সবাই এগিয়ে আসতে পারবে বলে মনে হয় না।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম