সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
করোনা ভাইরাসের কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মসজিদে ১২ জনের অধিক একত্রিত হয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে না। নির্দিষ্ট ১২ জন ছাড়া সবাইকেই ঘরে নামাজ আদায় করতে হবে।
এরইমধ্যে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন বিজয় টিভিতে প্রতিদিন রাতে খতমে তারাবি সরাসরি সম্প্রচার করছে একজন হাফেজের মাধ্যমে। তিনি তারাবির নামাজ পড়ছেন। আর এ নামাজকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে বিজয় টিভিতে, যাতে করে মানুষ টিভির অনুসরণে ঘরে বসেই তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন।
দেশের বরেণ্য আলেমরা বলছেন, এটি নিছক তামাশা। এটা নামাজ আদায় করার বৈধ পদ্ধতি নয়। ইসলামি ফিকহে এর অনুমোদন নেই। জামাতের সাথে নামাজ পড়লে অবশ্যই মুসল্লি ও ইমামের মাঝে সংযোগ থাকতে হবে। যেটাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইত্তিসাল বলা হয়।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ও বারিধারা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলছেন, এটি সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী কাজ। ফিকহের কোনো উসুলের মাধ্যমে একে বৈধ বলা যাবে না। আমরা আজ রাতের মধ্যে এটি বন্ধের দাবি জানাই। এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার কারণে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান করছি।
আল হাইয়াতুল উলিয়ার কেন্দ্রীয় ফতোয়া বোর্ডের সিনিয়র সদস্য মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘জামাতে নামাজ পড়তে হলে ইমামের সাথে মুসল্লিদের সংযোগ প্রয়োজন হয়। সংযোগ ছাড়া নামাজ হয় না। ‘সুতরাং টেলিভিশন, রেডিও অথবা যেকোনো ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামাজ সম্প্রচার করে তার অনুকরণে নামাজ আদায় করলে, তা আদায় হবে না।’
‘এটি তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। ধর্মীয় কোনো আয়োজন করার পূর্বে ধর্মীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। বিজয় টিভি এভাবে ধর্মীয় ফেতনা তৈরি করতে পারে না।’ বলছিলেন মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ।
জামিয়া রাহমানিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বিজয় টিভির কাজটি মূর্খতাপূর্ণ। নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত। ইবাদত সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হওয়া জরুরি। এর সাথে অন্য কিছু জড়িত থাকলে এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। শুধু প্রদর্শনের জন্য নামাজের আয়োজন হতে পারে না।’
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘এটি ইসলামের সাথে চরম তামাশা বলে আমি মনে করি। ইতিমধ্যে দেখেছি কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও এ নিয়ে কথা বলেছেন। খুবই দুঃখজনক এবং স্পর্শকাতর। ইসলামের কোনো বিধান নিয়ে এধরনের তামাশা মেনে নেয়া যায়না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সকলকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এবং অনতিবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
একই বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের তামাশা এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। এবং এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য বিজয় টিভিতে সংবাদ প্রচার করে ক্ষমা চাইতে হবে। আশা করছি বিজয় টিভি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এখনই বন্ধ করে দেবেন এবং মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাতে আলাদা সংবাদ প্রকাশ করবেন।
আর যদি বিজয় টিভি বিষয়টি উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে আমরা সরাসরি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই। যেকোনো মূল্যে এটি বন্ধ করে দিতে হবে। আশা করছি সরকার ও প্রশাসন দেশের সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামের অভিমতকে গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করবেন।’
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম