সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
কঠিন মুহূর্তে আমাদের মাঝে রামাদানের আগমন ঘটেছে। বলতে গেলে ইতিহাসে এরকম রামাদান আর দেখতে হয়নি পৃথিবীর মুসলমানদের। সাধারণত অন্যান্য মাসের তুলনায় রামাদান একটু ভিন্ন রূপে গ্রহণ করে মুসলমানরা। মুমিনের হৃদয় বারো মাস রামাদানের জন্য অপেক্ষা করে।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর একসঙ্গে তারাবির নামাজ বা এই জাতীয় কোন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্দিষ্ট ১২ জন ছাড়া সকলেই নিজ নিজ গৃহে নামাজ আদায় করেছেন। কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়েছেন। কেউ কেউ ইনফিরাদি বা একাকি নামাজ আদায় করেছেন।
ঘরের ভেতর জামাতবদ্ধ নামাজ পড়ার ভিন্ন রকম অনুভূতির কথা আমাদেরকে জানালেন মাওলানা তাওহীদুল আলম। পেশায় তিনি একজন মুহাদ্দিস ও খতিব। এ সময়টাতে জুমার নামাজ ছাড়া পরিপূর্ণ হোমকোয়ারেন্টিনে আছেন।
বাসায় পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করছেন। এমনকি এই রমজানে তারাবির নামাজও জামাতবদ্ধভাবে আদায় করছেন। তার ফ্ল্যাটের বিশেষ একটি জায়গা মসজিদের মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন। যেখানে সবসময় জায়নামাজ বিছানো থাকে, নামাজের সময় ছাড়া অন্যান্য সময়ে কোরআন তেলাওয়াত হয়। সাধারণত অন্য কোন কাজে সেখানে যাওয়া হয়না পরিবারের সদস্যদের। মোটকথা ঘরের এই অংশটুকু মসজিদ শাদৃশ্য বানিয়ে নিয়েছেন মাওলানা তাওহীদুল আলম।
তিনি বলেন যখন মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন থেকে সপরিবারে জামাতের সাথে ঘরে নামাজ আদায় করছি। এবং রাসূল সা. এর হাদীস অনুসরণের ঘরের এই জায়গা টুকু স্থায়ীভাবে মসজিদে রূপ দিয়েছি। যতদিন এই অ্যাপার্টমেন্টে থাকবো, ততদিন এই জায়গাটিতে নামাজ আদায় করব।
‘করোনাভাইরাস চলে গেলেও জায়গাটি এরকমই থাকবে। ঘরের মধ্যে সুন্নত ও নফল নামাজ পড়ার কথা বর্ণিত আছে। নফল নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম। মাঝে মাঝে রাতে ঘুম থেকে উঠি কিয়ামুল লাইল পড়ার জন্য, কিন্তু ঘরে সেরকম স্বস্তিদায়ক কোন জায়গা খুঁজে পাইনা। এইজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি করোনাভাইরাস চলে যাবার পরও এ জায়গাটি নামাজের জন্য বরাদ্দ থাকবে’ বলছিলেন মাওলানা তাওহীদুল আলম।
বিশিষ্ট আলেমরা বলছেন, ইসলামের প্রথমদিকে এই রীতি ব্যাপকভাবে চালু ছিল। মহিলা পুরুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতেন। রাসূল সা.-এর পেছনে অসংখ্য মহিলা সাহাবী মসজিদে নববীতে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেছেন। তিনি তার স্ত্রীদের সঙ্গেও ঘরে জামাত করতেন।
তারা মনে করছেন, সেই পুরনো নিয়ম চালু করার একটি সুবর্ণ সুযোগ আমাদের মাঝে এসেছে। আমরা পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারি। এবং ঘরে নামাজের জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করতে পারি।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও লেখক মাওলানা যাইনুল আবেদীনের মতে প্রতিটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং ড্রইংয়ের মতো ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট একটি কামরা থাকা চাই।
তিনি বলেন, সাহাবীরা ঘরে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতেন, এরকম হাদিস আছে। এটি ইসলামের একটি প্রাচীন রীতি। সম্ভব হলে সকল প্রকার সুন্নত ও নফল নামাজ ঘরে আদায় করা উচিত।
প্রতিটি ফ্লাট বাড়িতে ড্রইং, ডাইনিং এবং আলাদা আলাদা বেডরুম থাকে। ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে নির্মাতারা এমনটি করে থাকেন। কিন্তু নামাজের জন্য আলাদা কোনো ঘর রাখেন না। কিন্তু নামাজের জন্য আলাদা ঘর রাখা প্রয়োজন।
এর একটি পজিটিভ দিক হলো, প্রায়ই আমাদের বাসা বাড়িতে মেহমান আসেন, বাচ্চারা খেলাধুলা-শোরগোল করে, এজন্য মাঝে মাঝে নামাজে মন বসে না, একাগ্রতা আসে না -ঘরে নির্দিষ্ট একটি জায়গা নির্ধারণ করা থাকলে নামাজে মন বসাতে সহজ হবে। ইবাদতের জন্য নিরিবিলি জায়গা দরকার।
ঢাকা ইসলামবাগ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ফরজ ছাড়া সুন্নত ও নফল নামাজ ঘরে পড়াই নিয়ম। রাসুল সা. সুন্নত ও নফল ঘরে পড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।
তিনি বলেছেন ‘তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরের মতো বানিয়ে ফেলো না’। অর্থাৎ ঘরেও নামাজ আদায় করো।
সুতরাং রাসূলের হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি, ফরজ নামাজ ছাড়া সকল প্রকার সুন্নত ও নফল সর্বাবস্থায় নিজ নিজ গৃহে আদায় করা উচিত।
আর এজন্য যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ফ্ল্যাটের মধ্যে নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কামরা বরাদ্দ রাখতে পারেন। এটি হবে উত্তম ও উৎকৃষ্ট। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম