সাঈদ সালমান।।
লকডাউন সত্ত্বেও উক্ত গণজমায়েতের কারণ জানতে ১৯ এপ্রিল, রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলেম উলামাদের সঙ্গে চট্রগ্রাম রেঞ্জ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপি মরণব্যাধি 'করোনা ভাইরাস' এর কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন চলছে। মানবজাতির এই সংকটময় মুহূর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রখ্যাত ওয়ায়েজ, মুফাসসিরে কুরআন, হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী গত ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেছেন ৷
গত ১৮ এপ্রিল, শনিবার সকাল ১০ টায় মাওলানা আনসারী সাহেবের নামাজে জানাযা সরাইল উপজেলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজন করেছিল মরহুমের পরিবার ৷ যেখানে লোকসমাগম এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও পরদিন নামাজের পূর্ব মূহুর্তে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
চট্রগ্রাম রেঞ্জ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আলেমদের পক্ষ থেকে জামিয়া দারুল আরকামের প্রিন্সিপাল-আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ লকডাউন কি, সেটা এখনো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেনি; পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন নিউজ দেখে এমনটাই বুঝা যায়৷ দেশের মানুষকে বহু চেষ্টার পরেও করোনার ব্যাপারে সচেতন করা যাচ্ছে না। এখনো রাস্তা-ঘাট, বাজার-ব্যাংক সমূহে নিরাপদ স্বাস্থ্যব্যাধি বজায় রাখতে সম্পূর্ণ সক্ষম হতে পারেনি সরকার। তেমনই আমরা হাজারো চেষ্টা করেও জানাযায় গণজামায়েত এড়াতে ব্যর্থ হয়েছি ৷
আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, আমাদের আলেম উলামা ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল যেন ছোট্ট পরিসরে আমরা নিজেরা জানাজার নামাজ পড়ে তাঁকে তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী মাদ্রাসার পাশে দাফন করব৷ সরাইল থানার পুলিশের উল্লেখযোগ্য চেষ্টা ছিল,রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের লোকজন ছিলো। কিন্তু মানুষজন গ্রামের ফাঁড়ি রাস্তাগুলো ব্যবহার করেছে,তাই গণজামায়েত এড়াতে পারেনি৷ এমতাবস্থায় আমাদের দাবী সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রত্যাহারকৃত সরাইল থানার ওসি শাহাদাত হোসেন টিটোকে স্বপদে বহাল রাখা হোক ৷
আলেমদের পক্ষে জামিয়া ইউনুছিয়ার সহকারি শিক্ষা সচিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী বলেন, "দাফনের পরিকল্পনা রাতেই ছিল। কিন্তু আনসারী রহ. এর বড় ভাই বোন ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা লক ডাউনের কারনে রাতের মধ্যে পৌঁছানো একেবারেই অসম্ভব হওয়ায় পরেরদিন জোহর পর্যন্ত বিলম্বিত না করে সকাল দশটায় জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংকটময় পরিস্থিতিতে মাওলানা আনসারীর লাশের কাছে ভীর না জমে ও জানাযাকে কেন্দ্রকরে যেনো গণসমাগম না ঘটে সেই চিন্তা করেই তাঁর লাশ, শহরের মারকাজ পাড়াস্থ বাসভবন থেকে মৃত্যুর অল্পসময় পরই যেখানে দাফন করা হবে সেই স্থান- বেড়তলা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷গ্রামে গঞ্জে ঘরে বসে দোয়া করতে বলা হয়েছে৷
এবং তার জানাযায় শরিক হতে ইচ্ছুক অন্যান্য জেলা থেকে আগত বহু গাড়ি প্রশাসনের লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবেশ পথ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে ৷
এমনকি অতিরিক্ত লোকজন দেখে আমরা জানাযার নির্দিষ্ট টাইমের পনেরো মিনিট আগেই শুরু করে দেই নামাজ এবং দাফন সোয়া দশটার মধ্যেই শেষ করা হয়৷
ঘটে যাওয়া এই গণজমায়েতের জন্য প্রশাসন কিংবা আলেম সমাজ কোন ভাবেই দায়ী নন৷"
মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাযা ইস্যুতে চট্রগ্রাম রেঞ্জের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (এডিশনাল ডি আই জি) মোঃ ইকবাল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী আল মামুন সরকার এর সাথে মতবিনিময়কালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলেম উলামাদের পক্ষে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রিন্সিপাল- মুফতি মোবারকুল্লাহ,জামিয়া দারুল আরকামের ভাইস প্রিন্সিপাল- মাওলানা আলী আজম কাসেমী, মাওলানা বোরহান উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা মাইনুল ইসলাম খন্দকার,মাওলানা কাজী মাঈনুদ্দিন,মাওলানা মুখলেছুর রহমান,মাওলানা বোরহান উদ্দীন আল মতিন,মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ ভূইয়া মুফতি জাকারিয়া প্রমুখ ৷
-এটি