সুফিয়ান ফারাবী।।
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
মুসলিম সমাজে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। কিছু ব্যক্তি বা সমাজকেন্দ্রিক। কিছু রাষ্ট্র বা বৈশ্বিক। ইসলাম ধর্ম অনুসারে এ ধরনের জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকেন একজন বিজ্ঞ মুফতি।
কিন্তু বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোতে একাধিক ফতোয়া সামনে আসে। যার ফলে জনমনে বিভ্রান্তি, কৌতূহল ও অনাস্থা তৈরি হয়। এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে ‘এক ফতোয়া’র দাবি তোলা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলমান জাতীয় সমস্যাগুলো সম্মিলিত সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সর্বোচ্চ অথরিটি আলহাইয়াতুল উলয়া দেশের শীর্ষ মুফতিদের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত মুফতি বোর্ড গঠন করেছে। তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে এ বোর্ড করা হয়েছে।
কিন্তু গ্র্যান্ড মুফতি নামে কোনো পদ রাখা হয়নি। ১৪ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। জাতীয় সমস্যাগুলোতে তারা একসঙ্গে বসে সমাধান দেবেন। কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বোর্ড তারা করতে চান না। তাদের আস্থা দলের ওপর।
বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্য আল-হাইআর কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সামনে রেখে দেশের ওলামায়ে কেরাম যেন সম্মিলিতভাবে কোনো ফতোয়া বা নির্দেশনা জারি করতে পারেন -এজন্য দেশের শীর্ষ মুফতিদের মাধ্যমে এ বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
১৪ সদস্যের কমিটির সকল সদস্য সমান অধিকার রাখবেন। কোনো ব্যক্তি এককভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। এছাড়াও নির্দিষ্ট কোনো প্রধান মুফতি নিযুক্ত করা হবে না। সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
ফিকাহ বোর্ডের কয়েকজন সদস্য বলেন, আমরা মনে করি নির্দিষ্ট কোনো গ্র্যান্ড মুফতি নির্ধারণ না করে পুরো বোর্ডকে এস্টাবলিশ করার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলবে। এজন্য আমরা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিযুক্ত করব না।
‘বাংলাদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো মুফতি নেই। সৌদি আরবে আমরা যেমনটি দেখি, সেদেশে রাষ্ট্রকর্তৃক নিযুক্ত একজন গ্র্যান্ড মুফতি সবসময় থাকেন। রাষ্ট্র তাকে পদায়ন করায় তার কথা সবাই মেনে চলে। কিন্তু আমরা এ পথে হাঁটতে চাই না। নানা বিষয় লক্ষ্য রেখে আমরা বোর্ডের ওপর আস্থা রাখতে চাই। কোনো একজন ব্যক্তি সরকারকর্তৃক গ্র্যান্ড মুফতি হোক, আর তিনি সরকারের অনুকূলে ফতোয়া প্রদান করুক -এটি আমরা কামনা করি না।’ বলেন ফিকাহ বোর্ডের একজন সদস্য।
বোর্ডের সদস্য কারা?
বাংলাদেশের শীর্ষ ১৪ জন মুফতির মাধ্যমে বোর্ডটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে মুফতি নুরুল আমিন, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মুফতি আব্দুল মালেক, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, মুফতি মোহাম্মদ আলী ও মুফতি মাহফুজুল হক রয়েছেন।
এছাড়াও আল হাইয়াতুল উলইয়ার কেন্দ্রীয় কমিটির ১১ জন সদস্য বোর্ডের সদস্য পদ পেয়েছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারতের মাওলানা সাদ, হিজবুত তাওহীদসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে এ পর্যন্ত মিটিং হয়েছে। এবং মুফতিদের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মূল নেতৃত্বে যারা!
এযাবৎ পদাধিকারবলে বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী রহিমাহুল্লাহ অভিভাবক হিসেবে ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পর অভিভাবকের পদটি ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনা করছেন ফরিদাবাদ মাদরাসার শাইখুল হাদিস ও জাতীয় ফিকাহ বোর্ডের সদস্য সচিব মুফতি নুরুল আমিন।
জাতীয় বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোর সমাধান কোথায় পাওয়া যাবে?
বোর্ড বলছে, আল-হাইআর বিশেষ এ বোর্ডটি সাধারণ কোনো বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করবে না। শুধু জাতীয় বিষয়কে সামনে রেখে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে বোর্ড।
অন্যান্য সমস্যার সমাধান সারাদেশের সকল কওমী মাদরাসার দারুল ইফতা থেকে তারা পাবেন- আল জামিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ, যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসা, মারকাযুদ দাওয়াহ, মিরপুর আকবর কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বাইতুল উলুম ঢালকানগর, পটিয়া বড় মাদ্রাসা, মালিবাগ জামিয়া শারইয়্যা, জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়া (মুফতি মনসুরুল হক)।
জামিয়া রাহমানিয়ার ফতোয়া বিভাগ, আফতাব নগর মাদ্রাসা, জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ, জামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট দরগাহ মাদ্রাসা, কাজির বাজার সিলেট, কুমিল্লা কাসেমুল উলুম, কুমিল্লা বরুড়া মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, রাজফুলবাড়িয়া মাদ্রাসার ইফতা বিভাগ সাভারসহ দেশের অন্যান্য মাদ্রাসাগুলোর ফতোয়া বিভাগ।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম