তামীম আল-মাহমুদ।।
যুবাইর আহমদ আনসারী রহ. জানাযা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যৌক্তিক-অযৌক্তিক আলোচনা-সমালোচনায় সোস্যাল মিডিয়াগুলোর নিউজ ফিড পূর্ণ হয়ে আছে। গণ মাধ্যমগুলোতে বেশির ভাগ সমালোচনাই চোখে পড়ছে।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি বলবো, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতিতে এতগুলো মানুষ একটি জানাযায় শরিক হওয়া উচিত হয়নি। কারণ ভাইরাসটি একজন থেকে অপরজনের শরীরে সংক্রমিত হয়। আর বিশেষ করে যখন দৈনিক কয়েকশক মানুষ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্ত হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতগুলো মানুষ কি এবিষয়টি জানে না? কেন তারা জেনেও একত্র হলো?
দুনিয়াবী ভালবাসার অনেক উদাহরণ এ যাবত দেখেছি। কেউ এক রশিতে ফাঁসি লটকে আবার কেউ হাত কেটে। অনেকে আবার বিভিন্ন ধরণের সুসাইডের পদ্ধতি বের করে। আর সবাই সেগুলোকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে দেখে।
কিন্তু যখন ভালবাসাটি আখেরাতি হয়। একজন মানুষকে যখন কেউ আল্লাহর জন্য ভালবাসে। আর সেই প্রেমাস্পদের ইন্তেকালের সংবাদ যখন কানে আসে। তখন কিভাবে সে নিজেকে আটকে রাখবে? কিভাবে তার শেষ সমাধি উপস্থিত না হবে? তখন তো তার ভালমন্দ বিবেচনার জ্ঞান থাকবে না।"
এখন বলি আমাদের প্রতিবন্ধি মিডিয়াগুলোর অবস্থা, গতকাল হুজুরের জানাযা শেষ হওয়া পর্যন্ত যুবায়ের আনসারী রহ. এর ইন্তেকালের সংবাদ কোন টিভি চ্যানেল দেয়নি। তারা হুজুরের বিষয়টিকে পাত্তাই দেয়নি। এমনও হতে পারে যে, অযথা একজন হুজুরকে কেন ভাইরাল করবো?
যখন কয়েক লক্ষ মানুষের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। মিডিয়াগুলো একসাথে হুক্কাহুয়া শুরু করেছে। পেয়ে গেছে নতুন ট্রেন্ডিং নিউজ। কয়েক বছরের চাপা ক্ষোভগুলো ঝাড়া শুরু। দেশের একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল তো শিরোনামে লিখেছে, অনুষ্ঠিত হলো কয়েক লক্ষ মানুষের জানাযা।
তবে বাস্তব সত্য হলো, এমন হুক্কাহুয়ার প্রয়োজনই হয়তো হত না যদি তারা বিষয়টিকে আগে গুরুত্ব দিত।
কিছুদিন আগে মিডিয়া শুধুমাত্র মানুষের প্রয়োজন ছিল, আর এখন মিডিয়ার উপর মানুষ নির্ভরশীল। সারাদিন বাসায় বসে বেশিরভাগই নিউজ দেখে সময় কাটাচ্ছে। সারাদেশের খবর জানছে, যদি মিডিয়াগুলো হুজুরের মৃত্যুর সংবাদটি ব্রেকিংয়ে রাখতো। আর জেলা প্রশাসন একটি ব্রিফিংয়ে জানিয়ে দিত যে, হুজুরের জানাযা মানুষ একত্র হবে না। সীমিত পরিসরে জানাযা হবে। আর আইন-শৃংখলা বাহিনী যদি কঠিন করা হতো। তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এরূপ ধারণ করতো না। তাদের এই অবহেলাগুলা আড়াল করে শুধু সাধারণ জনগণকে দোষারোপ করছে।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, এই সমস্যার মূল দায়ী মিডিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক। বিষয়টিকে তারা গুরত্ব দেয়নি। আর এখন তারা শুরু করছে নিরহ ছাত্র-শিক্ষকদের দোষারোপ।
কোথায় ছিলেন তখন? যখন প্রবাসীদের দেশে অবাধে ঢুকতে দেয়া ও হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার অনুমোদন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তখন তো টু শব্দটিও করেননি।
মিডিয়া মানুষকে সত্য জানানোর জন্য এবং মিথ্যা উম্মোচনের জন্য। অতএব নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করুন। বিভ্রান্তকর তথ্য থেকে জাতিকে বাচিয়ে রাখুন। হিংসা পরহেজ করুন। দায়িত্বের প্রতি যত্নবান হোন। আল্লাহ আপনাদের মিডিয়া দিয়েছেন সেটা সহিহ জায়গায় কাজে লাগান। নিজেদের অবহেলার মাশুল সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপাবেন না।
-এটি