মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ ।।
ভারত প্রশাসন ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা করোনা ইস্যুকে এক চেটিয়াভাবে বিচার করছে। তাদের বোঝা উচিত, তাবলীগের প্রতিটি সাথী যেমন করোনা আক্রান্ত নয়, তেমন প্রতিটি মুসলমানও তাবলীগের সাথী নয়। সুতরাং তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে সমস্ত মুসলমানদের মূল্যায়ন করা, বোধ করি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আশ্চর্যের বিষয় হল, ভারতে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং প্রাদুর্ভাব হুহু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপরে ভারত সরকার ও প্রশাসনকর্তৃক চরম অসদাচরণের পরিমাণও বাড়ছে।
মুসলমানদের সঙ্গে এ জাতীয় আচরণ লক্ষ করে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর কাছে একটি খোলা চিঠি প্রেরণ করেছে; যেন সরকার এবং উগ্র হিন্দুরা মুসলমানদের প্রতি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এবং মিডিয়াগুলোর ইসলামফোবিয়া প্রতিরোধ করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের মতে দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ডাঃ নজরুল ইসলাম এবং একই কমিশনের হিন্দু সদস্য কর্তার সিং কোচর যৌথভাবে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উত্তম শাহসহ সমস্ত প্রতিমন্ত্রীকে প্রেরণ করেছেন। চিঠিতে ভাইরাসের অন্তরালে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করে সরকারী নীতি পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘু কমিশনের লেখা একটি দীর্ঘ চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে, আপনারা একথাটা আগে বুঝে নিন, প্রত্যেক মুসলমানই তাবলীগ জামাতের কর্মী নন এবং প্রতিটি তাবলিগকর্মীও করোনায় আক্রান্ত নন; তাই সরকার এবং মিডিয়াগুলোর সমস্ত মুসলমানকে চিহ্নিত করে মিথ্যাচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যমের মনোভাবের কারণে সাধারণ মুসলমানরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা তাবলীগ কর্মী না হয়েও তাবলীগ কর্মী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন; যা লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
চিঠিতে এমন এক তাবলীগকর্মীর কথাও উল্লেখ করা হয়, যিনি করোনার রোগী না হলেও শুধুমাত্র তাবলীগকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণে তার সঙ্গে করোনা রোগীদেররমত আচরণ করা হয়। সেই অসহনীয় নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি আত্মা করতে বাধ্য হন।
ভারতীয় মিডিয়াও প্রতিটি মুসলমানকে তাবলীগ কর্মী এবং প্রতিটি তাবলীগকর্মীকে করোনাবাহী হিসেবে প্রচার করে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। যা খুবই নিন্দনীয়।
সংখ্যালঘু কমিশন একথা অবশ্য স্বীকার করেছেন, তাবলিগের আমির ও কর্মীরা প্রাথমিক পর্যায়ে যদিও তেমন একটা সাবধানতা অবলম্বন করেননি, তবুও এই অবহেলা কেবল তাবলীগের আমীর ও কর্মীদেরই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোরও রয়েছে। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এদিকে দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশনের চিঠি এমন সময় দেওয়া হয়েছে, যখন গণ জমায়েত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে নিজামুদ্দিন তাবলীগ জামাতের মারকাজের প্রধান মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীর বিরুদ্ধে একদিন আগে ফৌজদারি মামলা শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ।
দিল্লির নিজামুদ্দিন তাবলিগ মারকাজকে ইতোমধ্যেই সিলগালা করে পুলিশ কর্তৃক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং গত মার্চে তাবলীগী জমায়েতে অংশ নিতে আসা কয়েক ডজন বিদেশী ও বিদেশী লোককে তারা সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেছে।
মার্চ মাসের ১৫ তারিখে ৩৪০০ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নিয়েছিল এবং নয়াদিল্লি সরকারের হিসেবে, প্রায় ১১০০ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
জমায়েত শেষ হওয়ার পরে তাতে অংশ নেওয়া কয়েক ডজন লোক বিভিন্ন রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু লোকের করোনা ধরা পড়েছিল। তবে তাবলীগকর্মীদের প্রতি ভারত সরকার যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে, তার অভিযোগ ভারত সরকারের প্রতিই নিবদ্ধ হচ্ছে।
এদিকে এপ্রিলের ১ তারিখে ভারতবর্ষে সভা-সমাবেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হিন্দুদের বড় একটি গণ জমায়েত হয়েছে এবং তাতে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেন না। হয়তো বলবেনও না। তাই বলি, তাবলীগ জামাতের ব্যাপারে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত ভারতের।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন অবলম্বনে মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ
-এটি