ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।।
চট্টগ্রামের পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়ার প্রাক্তন মহা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ হারূন ইসলামাবাদী রহ. বাংলাদেশের প্রথিতযশা আলিমে দ্বীন। ছাত্র জীবন থেকে তার সাথে আমার পরিচয়। পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ৭০/৮০ বছরের ইতিহাসে যে সব মেধাবী ছাত্র তৈরী করেছে. তাঁদের মধ্যে আল্লামা মুহাম্মদ হারূন ইসলামাবাদী রহ. অন্যতম। আমিসহ অনেকে তাঁর অনুরাগী ভক্ত। তাঁর প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব, সৃষ্টিধর্মী মেধা, মননশীলতা ও আকর্ষণীয় সচ্চরিত্র আমাদের বিমোহিত করতো।
তার স্নেহধারায় আমি সিক্ত হয়েছি। তার আন্তরিকতা ছিল অকৃত্রিম, ব্যবহার ছিল নিখাদ ও আতিথেয়তা ছিল নিঃস্বার্থ। তিনি মুহতামিম থাকাকালীন পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়ায় আমি ৪বছর শিক্ষকতা করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আজ বেশী বেশী তাঁর কথা মনে পড়ে।
পটিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়ার শিক্ষাধারা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আল্লামা মুহাম্মদ হারূন ইসলামাবাদী রহ.-এর অবদান অনস্বীকার্য। পটিয়া মাদ্রাসা ও আল্লামা মুহাম্মদ হারূন ইসলামাবাদী রহ. একে অপরের পরিপূরক-সম্পূরক। মাদ্রাসার ইতিহাসের সাথে তিনি অঙ্গাঙ্গিভাবে বিজড়িত।
আল্লামা মুহাম্মদ হারূন ইসলামাবাদী রহ. বর্ণাঢ্য শিক্ষা জীবনের অধিকারী। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি কৃতিত্বের (Distinction) সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ছাত্র জীবনকে তিনি হেলায়-ফেলায়-অবহেলায় নষ্ট না করে কঠোর অধ্যবসায় ও নিয়মানুবর্তিতার সাথে কাজে লাগান। ঢাকা থেকে প্রকাশিত উর্দূ দৈনিক ‘পাসবান’-এর সাব এডিটর থাকাকালীন তাঁর অনুবাদ কর্ম ছিল ঝরঝরে ও স্বচ্ছন্দ। আরবী, উর্দূ, ফার্সী, ইংরাজী ও বাংলায় তাঁর দক্ষতা ছিল সমান। লাহোরে জামিয়া আশাফিয়ায় অধ্যয়নকালে তিনি পাঞ্জাবী ভাষাও চর্চা করেন।
সারা জীবন জ্ঞান আহরণ ও বিতরণে তিনি ছিলেন উৎসর্গিত প্রাণ। কিছুকাল আরব আমিরাতের প্রধান বিচারপতির সহকারী হিসেবে কাজ করলেও শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেন। ভাষা জ্ঞানে তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় তবে তিনি সাহিত্য চর্চা বা সাধনায় সময় দেননি বা দেয়ার অবসর পাননি। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও ইত্তেহাদুল মাদারিসের প্রধান হিসেবে তাঁকে অধিক ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।
লেখালেখির জগতে একটু সময় দিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তার ইল্ম, প্রজ্ঞা ও মননশীলতার দ্বারা উপকৃত হতে পারতো। আমাদের দেশে বহু মেধাবী মানুষের কলমের শক্তি থাকা সত্ত্বেও লেখার জগতে তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান নেই। দু’একটি যা লিখেছেন এতে করে তাঁদের প্রখর মেধা, যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার সম্যক পরিচয় মেলে।
আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম নসীব করুন, আমিন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভগীয় প্রধান, চট্টগ্রাম ওমরগনি এম,ই,এস কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়।
-এটি