শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘সংকটের মুহূর্তে প্রকাশ্যে ইখতিলাফ কাম্য নয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওমর ফারুক
বিশেষ প্রতিবেদক>

সংকটে বিশ্ব, মানবজাতি ও সব রাষ্ট্র। হঠাৎ করোনার হানা পুরো বিশ্বকে অচল করে দিয়েছে। নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে পর্যাপ্ত নয়, তাও বুঝিয়ে দিচ্ছে। ভাইরাসটি মানছে না ধর্ম, বিশ্বাস, অর্থবিত্ত ও লিঙ্গের ভেদাভেদ। শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে পুরো মানবজাতি।

এই অসহায় অবস্থায় শুধু স্বাস্থ্য বিজ্ঞানেই নয়, মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায়। পূর্বের মতামত থেকে ফিরে আসছে, ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছেন বিজ্ঞজনেরা।

বৈশ্বিক মহামারির করুণ পরিস্থিতিতে ইসলামি ফিকহের মাঝেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের মতপার্থক্য। কোথাও বেশি, কোথাও কম। কোথাও প্রকাশ্যে, কোথাও আড়ালে।

আলেমরা বলছেন, সংকটের মুহূর্তে মতপার্থক্যের দিকে না তাকিয়ে সংকট নিরসনে উদ্যোগী হওয়া দরকার। এবং যেকোন একটি সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, সংকটের সময়ে সংকটকেই অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সংকটের সময় বৃহত্তর কল্যাণের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে।

যেভাবে মানবতার কল্যাণ হবে, সেভাবে মতামত ব্যক্ত করতে হবে। সংকটের সময়ে দু'ধরনের কথা বলা হলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এজন্য যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত বলবৎ রাখা প্রয়োজন। একাধিক কোন মতামত দেয়া ঠিক হবে না।

চট্টগ্রাম ওমর গনি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন মনে করেন, সাময়িক একটি ইস্যুতে দেখেছি পাকিস্তানের সমস্ত ওলামায়ে কেরাম একমত হয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সংকটের মুহূর্তে ইখতিলাফ সামনে না এনে, সকল মতাদর্শের লোকদেরকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তানের সর্বমহলের ওলামায়ে কেরাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা খুবই পছন্দনীয় ও অনুসরণীয় একটি বিষয়।

আমাদেরকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। কিন্তু বিভক্তি তৈরি হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

যে সমস্ত বিষয়গুলো গবেষণার দাবি রাখে, সেখানে ভিন্নমত হতেই পারে। কিন্তু সিদ্ধান্ত হবে একটি। একাধিক সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপিত হবে না।

একই বিষয়ে কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের খতিব ও আল নূর কালচারাল সেন্টার কাতারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা ইউসুফ নূর বলেছেন, বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বৈঠক ও পরামর্শ করে সরকার চলমান নানা ইস্যুতে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ওলামায়ে কেরামের প্রতি সরকারের শ্রদ্ধা সম্মান রয়েছে। ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত সরকার মেনে নিয়েছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশ করা ঠিক হচ্ছে না।

আরব বিশ্বে স্থিতিশীলতার অন্যতম একটি কারন হল, সরকার ও ওলামায়ে কেরাম একসাথে কাজ করেন। বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম যদি মৌলিক বিষয়গুলোতে ভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত না করেন, তাহলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

যখন এরকম সংকটমূলক কোন বিষয়ে বিজ্ঞ সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ওলামায়ে কেরাম একসঙ্গে বসে কোনো সিদ্ধান্ত দেন, তখন প্রকাশ্যে এর ব্যতিক্রম কোনো বক্তব্য না দেওয়া চাই। যারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আর যারা ছিলেন না সকলের উচিত এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়া। এর বিরোধিতা না করা।

ব্যাংক টাউন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের মতপার্থক্য দেখা দেয়। কিন্তু যখন কোন ক্রান্তিকাল চলে আসে তখন বিশেষ একটি জায়গায় ফোকাস করে কাজ করতে হয়। সেটি হল সংকট।

যখন মানুষের সামনে কোন বিপদ আসে তখন মাসআলাগত, আকিদাগত কোন মতপার্থক্য সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়। প্রশ্ন যখন মানবতার সংকট নিয়ে, তখন কোন ভেদাভেদ তৈরি করা কি ঠিক হবে? আমাদের সকলের উচিত, ভিন্নমত উপেক্ষা করে এক প্লাটফর্মে থাকা।

আমি তো বলব, বৈশ্বিক মহামারী থেকে পরিত্রান পেতে প্রয়োজনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সঙ্গেও একযোগে কাজ করা যেতে পারে। আমাদের সামনে এখন একটিই বিষয়। সেটি হল মহামারী। এই জায়গাটিতেই আমাদের ফোকাস করা উচিত। এই সংকট থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়, সেটি নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। দেশ জাতি মানুষ ও মানবতার কল্যাণ কমনার প্রতি খেয়াল করে সংকটে ভিন্নতা করা উচিত নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ